নাজিবুল্লাহ জাদরান যখন বাংলাদেশের বোলারদের উড়িয়ে সীমানাছাড়া করছিলেন, শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তখন ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন। আমিরাতের স্টেডিয়ামটিতে এশিয়া কাপের ম্যাচটি দেখছিলেন প্রায় ২০ হাজার দর্শক। সেখানে আলাদা করে আলো কেড়েছেন সেই বৃদ্ধা।
ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত যে গড়েছেন তিনি। প্রিয় দল আফগানিস্তানকে মাঠে বসে সমর্থন দিতে হাসপাতাল থেকে সরাসরি চলে এসেছেন মাঠে। গুলপারি শাফি নামের ওই বৃদ্ধা ছয় বছর ধরে ভুগছেন মরণঘাতী ক্যান্সারে। ম্যাচের দিন সকালে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে দিয়েছেন কেমোথেরাপি। শারীরিক অক্ষমতা, ক্লান্তি, অসুস্থতা— কোনো বাধাই পরে তাকে আটকাতে পারেনি মাঠে আসা থেকে।
গুলপারি শাফির সঙ্গে মাঠে এসেছিলেন পুত্র খাইবার। তারা থাকেন আজমান শহরে। আফগানিস্তান-বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি ম্যাচের কথা খাইবার যখন বলেছিলেন, তখন তার মা বলেছেন, ‘চল, খেলা দেখে আসি।’ মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে ছেলে দ্রুতই গাড়ি বের করেন, চলে আসেন শারজাহতে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে টিকিট কিনেছেন, অসুস্থ মায়ের যাতে কষ্ট না হয় সেকারণে ভিআইপি বক্সের টিকিট কাটেন।
হুইল চেয়ারে বসে খেলা দেখেছেন শাফি, গরমে ঘেমেছেন, আবেগে কখনও কেঁদেছেন, কখনও আবার নিজের অসুস্থতার কথা ভুলে ফেটে পড়েছেন উল্লাসে। খেলার শুরুতে যখন আফগানিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত চলছিল, বৃদ্ধা ক্রিকেটপ্রেমীর গাল বেয়ে অঝোরে ঝরেছে অশ্রু। পুরো সময়জুড়ে তার হাতে দোদুল্যমান ছিল আফগানিস্তানের পতাকা।
জায়ান্ট স্ক্রিনে যখন আফগান খেলোয়াড়দের দেখাচ্ছিল, বৃদ্ধা বারবার আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছিলেন প্রিয় খেলোয়াড় মোহাম্মদ নবীর চোখেও জল। আফগানিস্তানের সব খেলোয়াড়কে ভালোবাসেন শাফি। সবচেয়ে বেশি পছন্দ অধিনায়ক নবীকে। পশতু ও খাইবার ভাষার মিশেলে গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘মোহাম্মদ নবী অনেক ভালো খেলোয়াড় এবং সে মানুষ হিসেবেও খুব বিনয়ী।’
শাফির শারজাহ আসাটাও অনেক গল্পবহুল। মাঠে আসা, টিকিট কেনা এবং সবশেষ হুইল চেয়ার নিয়ে গ্যালারিতে বসা, সেখানে ঘেমে নেয়ে যাওয়া, আবেগে আপ্লুত হওয়া— সব ছাপিয়ে খুশি মনেই বাড়ি ফিরেছেন ম্যাচ জিতে। শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারানোর পর বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান। সেই খুশি চওড়া হাসিতে বুঝিয়েছেন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকা শাফি।