রোববার প্রথম রাউন্ডের খেলা দিয়ে বসতে চলেছে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। বাছাই শেষে মাঠে গড়াবে ‘সুপার টুয়েলভ’ তথা মূল আসর। আয়োজনে কোথাও ঘাটতি রাখছে না স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। চার-ছক্কার ফুলঝুরি দেখতে দেশটিতে ভ্রমণ করছে লাখো ক্রিকেটপ্রেমী। তাদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত সাত ভেন্যুর শহরগুলো।
কোথায় কোথায় গড়াবে ব্যাট-বলের ঠুক-ঠাক, কোথায় উন্মাদনা সবুজ গালিচা পেরিয়ে আছড়ে পড়বে গ্যালারিতে? সেসবের পরিচিতিতে এপর্বে থাকছে এবারের ছোট ফরম্যাটের বিশ্ব আসরে ভেন্যু মেলবোর্নের জাংশন ওভালের কথা।
১৮৫৩ সালে মেলবোর্নে লক্ষাধিক দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। যা আজ পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম। অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনাগুলোর সাক্ষীও মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি), যেটি পৃথিবীর দশম বৃহত্তম স্টেডিয়াম।
স্টেডিয়ামটি নির্মাণের পরই ক্রিকেটে অনেকবেশি মনোযোগী হয় অজিরা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের আঁতুড়ঘরও বলা যায় মেলবোর্নকে। যেখানে আধুনিক ক্রিকেটের শোভা বর্ধিত হয়েছে।
মেলবোর্নে ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বপ্রথম ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয়। এরপর ১৮৫৬ সালের মার্চে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলস প্রথম ইন্টার কলোনিয়াল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল।
ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচটির আয়োজক ছিল মেলবোর্ন। ১৮৭৭ সালে হওয়া টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল অজিরা। অনেক প্রথমের সাক্ষী হওয়া সেই খেলায় ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি করে অমর হয়ে আছেন অজি ওপেনার চার্লস ব্যানারম্যান। অজি বোলার বিলি মিডউইন্টার হয়েছিলেন প্রথম ৫ উইকেট শিকারি বোলার।
১৯৭১ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটেরও জন্মস্থান মেলবোর্ন। ৪০ ওভারের সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াই। কাকতালীয়ভাবে সেবারও বিজয়ী হয় স্বাগতিকরা।
২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবার বৈশ্বিক আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে মেলবোর্নে হওয়া শেষ আটের লড়াইটি বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে। একটি নো বল নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। ৮৯ রানে ব্যাট করছিলেন রোহিত শর্মা। বল হাতে বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন। ফুলটস বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ২২ গজ ছাড়ছিলেন রোহিত। হঠাৎ আম্পায়ার আলিম দারের কল, নো বল। রোহিত শর্মা মাঠে থেকে যান, ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বলটির উচ্চতা কোমরের নিচেই ছিল, যেটি নো-বল হিসেবে গৃহীত হওয়ার কথা নয়।
এবারের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের ভেন্যুও মেলবোর্ন। ঐতিহাসিক ভেন্যুটিতে হবে আসরের ৭টি ম্যাচ। ২৩ অক্টোবর ভারত-পাকিস্তান হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে মেলবোর্নের বিশ্বকাপযাত্রা। এমসিজিতে এবার মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দুসহ সকল ধর্মের মানুষদের প্রার্থনার জন্য কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে মেলবোর্নে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে সবাইকে আরামকো রিসাইক্লিং মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আরামকো এবং আইসিসি প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করে পোশাক বানিয়ে তা আবারও ব্যবহারের উপযোগী করবে। ভেন্যুর যেকোনো স্থানে ধূমপান ও ই-সিগারেট নেয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দর্শক আগ্রহের শীর্ষে থাকা প্রায় সব ম্যাচই ভেন্যুটিতে আয়োজন করা হয়। কেননা এতো দর্শক ধারণ ক্ষমতার মাঠ অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয়টি নেই। ১৯৫৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে লর্ডসের পর এটিই একমাত্র স্টেডিয়াম যেটিতে একাধিকবার (১৯৯২ ও ২০১৫) ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছে।
১৯৯১ সালে স্টেডিয়ামটি ঢেলে সাজানো হয়। ২০০৬ সালে কমনওয়েলথ গেমসসহ বিভিন্ন বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট এবং কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে মেলবোর্ন।
এই মাঠে বেশকিছু ফুটবল ম্যাচও গড়িয়েছে। ২০১৭ সালে লাতিন আমেরিকার দুই ফুটবল পরাশক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ গড়িয়েছে এখানে। যেখানে একসঙ্গে ম্যাচ উপভোগ করছে প্রায় লক্ষাধিক ফুটবলপ্রেমী। ম্যাচে ১-০ গোলে জয় পেয়েছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
চলতি বছর আবারও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যে ভেন্যুটিতে ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। টিকিট বিক্রি সেরে রেখেছিল মেলবোর্ন। শেষ মুহূর্তে এসে আর্জেন্টিনা বেঁকে বসলে তা আর মাঠে গড়ায়নি।