বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নবীন মুক্তি বাহিনীকে সর্বপ্রথম সহায়তা দানকারী ভারতীয় সেনা অফিসার মেজর পি কে ঘোষ মৃত্যুবরণ করায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এ সময় ফোরাম তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং মুক্তিযুদ্ধে তার অসমান্য অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।
শনিবার ৮ জুলাই ফোরামের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করা হয়। এর আগে ৬ জুলাই বার্ধ্যক্যজনিত কারণে দিল্লিতে মেজর পরিমল কুমার ঘোষ মৃত্যুবরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের এই ভারতীয় বন্ধু ১৯৭১ সালের মার্চে ক্যাপ্টেন হিসেবে ত্রিপুরার শ্রীনগর, আমলিঘাট ও নালুয়া বর্ডারে দায়িত্বরত বিএসএফ এর কোম্পনির কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। ২৫ মার্চ ঢাকায় গণহত্যা শুরুর পর ২৬ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর একটি দল শোভাপুর ব্রিজ করায়ত্ব করার জন্য অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্বিচারে এলাকার নারী ও পুরুষদের নির্যাতন চালাতে থাকে। সেখানকার বাঙালি ইপিআর জোয়ানদের সীমিত শক্তিতে পাকিস্তান বাহিনীকে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হওয়ায় ইপিআর এর স্থানীয় হাবিলদার নুরুদ্দিন এবং তৎকালীন এমএনএ অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ মজুরদার ও আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আমির হোসেন সীমান্ত পেরিয়ে ক্যাপ্টেন পি কে ঘোষের সাথে দেখা করে সাহায্য চান।
ওই সময় শত শত স্থানীয় মানুষ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে ইপিআর দলটির সাহায্যে এগিয়ে আসতে থাকলে তারা পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগানের গুলির মুখে পড়ে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে ক্যাপ্টেন ঘোষ ইপিআর হাবিলদার নুরউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র বাহিনী তৈরি করেন এবং অগ্রসরমান পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।
২৭ ও ২৮ মার্চ নবগঠিত মুক্তি বাহিনী ও পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলির পর পাকিস্তানি সৈন্যদলটি অবরুদ্ধ হয়। তাদের রসদ ও খাবার ফুরিয়ে যায়। শেষপর্যন্ত তারা পরাজিত হয়, কেউ কেউ আত্মসমর্পন করে, বাকিরা পালিয়ে যায়। নবীন মুক্তি বাহিনী এরপর হাজারও মানুষের উপস্থিতিতে শোভাপুর ব্রিজে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে এলাকা মূখরিত হয়। মেজর পি কে ঘোষ যুদ্ধের পরবর্তি সময়ে ত্রিপুরা সীমান্তে মুক্তি বাহিনীর পরম সুহৃদ হিসেবে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধের এই সদ্য প্রয়াত বন্ধুর পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানায়।