মুন্সিগঞ্জে বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ (১৬) ওরফে জেসিক হত্যা করে মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে ছিলেন প্রধান আসামি বিজয়।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ শহরের কোটগাঁও এলাকায় প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে বন্ধু বিজয় রহমান ও তার স্ত্রী আবিদা।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
রোবাবার ৫ ফেব্রুয়ারি কাওরানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য দেন।
আসামি বিজয় সম্পর্কে তিনি বলেন, বিজয় মুন্সিগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে চারদিন আত্মগোপনে থাকে। সেখানে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তী সময়ে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে সে।
একপর্যায়ে সন্দেহ জাগে তাকে গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখানে অভিযান চালাতে পারে সেই আশঙ্কা থেকে সে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকে। এরপর গত রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব-৩-এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামি বিজয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া, এই ঘটনায় অপর আসামি আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবার সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালীন বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিম জেসিকার সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক করে। বিজয় উভয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আদিবার সঙ্গে গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় সে।
পরে সময়ে বিজয় ও আদিবার বিয়ের বিষয়টি জেসি জানতে পারে এবং বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, বিজয় জানিয়েছে, মূলত গেলো বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সে বিষয়টি নিয়ে আদিবার সঙ্গে আলোচনা করে। তারা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকালে আদিবা ভিকটিম জেসির সঙ্গে দেখা করে। তখন জেসি বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ে কথোপকথনের স্ক্রিনশট দেখায়।
পরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য আদিবা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে নিয়ে আসে। পরে আদিবা ফোনে বিজয়কেও ছাদে আসতে বলে। এরপর সেখানে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে যায় বিজয় ও আদিবা।
কমান্ডার মঈন বলেন: বিজয় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।