সিনেমা, নাটক, ওটিটি বা যে কোনো বিনোদন ভিত্তিক কনটেন্টে পোস্টার-থাম্বেল আকর্ষণ বাড়ায়। অনেক সময় এগুলো দেখে মনে হয়, বাংলাদেশেও এত উন্নত মানের পোস্টার তৈরি হয়? এও দেখা যায়, পোস্টার আকর্ষণীয় হওয়ার ফলে সেই কাজটি তুমুল আলোচনায় আসে, এমনকি ভাইরাল হয়!
বিশেষ করে একটি নজর কাড়া পোস্টার যে কোনো সফল কনটেন্টের নেপথ্যে অপরিহার্য অংশ। গেল বছর ব্লকবাস্টার ‘প্রিয়তমা’ ছবিতে শাকিব খানের বৃদ্ধ লুকের পোস্টারটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত! যা দেশ-বিদেশের দর্শকদের কাছে পৌঁছে ছবিটিকে ব্লকবাস্টার হতে অনেকখানি ভূমিকা রেখেছিল!
গত একযুগ ধরে বাংলাদেশি সিনেমা, নাটক, ওটিটির কনটেন্টগুলো বানাচ্ছেন সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েম। অনেকের কাছে তিনি ‘পোস্টার সায়েম’ নামে সুপরিচিত। আবার তার প্রতিষ্ঠান ওয়াইএফভিএফএক্সও পরিচিত।
সায়েমের ভাষ্য, আমি আসলে আড়ালে থাকা মানুষ। নায়ক নায়িকাদের নিয়ে মাতামাতি হলেও আমাদের খবর খুব কম মানুষ রাখে। নির্মাতা প্রযোজক শিল্পীরা আমাকে পছন্দ করেন এটা আমি অনুভব করতে পারি। নইলে এত বছর সুনামের সঙ্গে কাজ করতে পারতাম না।
দেশের যে কোনো ফেস্টিভ্যাল বিশেষ করে ঈদ এলেই তুমুল ব্যস্ততায় ডুবে থাকেন সায়েম। ঈদের সিনেমাগুলো মুক্তির পর কিছুটা ব্যস্ততার ফুসরত কমেছে তার। চ্যানেল আই অনলাইনের এই প্রতিবেদকের যখন কথা হচ্ছিল জানাচ্ছিলেন, ঈদের আগে কাজের এতোই চাপ ছিল ৩৪ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে কাজ করেছেন।
সায়েম বলেন, এ কাজের জন্য ধৈর্য ধরে প্রচুর সময় দিতে হয়। ৯ এপ্রিল এপ্রিল পর্যন্ত আমার টানা ব্যস্ততা ছিল। ঈদের কাজের ব্যস্ততা গুলো দুই মাস আগেই শুরু হয়ে যায়। এবার ১১ টি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। সেজন্য প্রেসার বেশি ছিল। এর মধ্যে দুই তিনটি ছবির পোস্টার আছে যা দুই বছর আগেই করেছিলাম। সেগুলো নতুন করে এদিক সেদিক করে দিতে হচ্ছে।
ঈদে তৈরি করা আকর্ষণীয় পোস্টার প্রসঙ্গে সায়েম জানান, রাজকুমার, ওমর, দেয়ালের দেশ, মোনা: জ্বিন ২, গ্রিনকার্ড, মায়া, লিপস্টিক, সোনার চর, ছবিগুলোর পোস্টার নির্মিত হচ্ছে তার হাতে। তিনি বলেন, এর মধ্যে দুএকটি ছবির সব পোস্টার আমার করা নয়। কোনোটির অফিসিয়াল পোস্টার, কোনটির লুক পোস্টার বা থাম্বেল করছি।
‘টাইগার ৩’ নামে অরিজিনাল ফিল্ম, বঙ্গতে ছবির জ্বিন (ওটিটি পোস্টার), ‘ঘন্টির মানুষ’র পোস্টার বানাচ্ছেন সায়েম। পাশাপাশি দুটি নাটকের পোস্টার করেছেন। সায়েম বলেন, ঈদে যতগুলো সিনেমার পোস্টার প্রকাশ হয়েছে সবচেয়ে বেশি রেসপন্স পেয়েছি শাকিব ভাইয়ের ‘রাজকুমার’ পোস্টারে। এরপর ‘মায়া দ্য লাভ’ পোস্টারটি থেকেও প্রশংসা পেয়েছি। ‘লিপস্টিক’ ছবির পোস্টার দেখেও অনেকে প্রশংসা করেছেন।
সায়েম বলেন, ১৩ বছর ধরে এ কাজ করছি। দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা আমাকে পোস্টারগুলো তৈরিতে সাহায্য করছে। কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারি কোন গল্পে কোন পোস্টার কালার ভালো হয়। একটি কাজ করার আগে নতুনত্ব রাখতে আমাকে অনেক রিসার্চ করতে হয়। প্রায়ই নকল পোস্টার নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এবারের ঈদের প্রজেক্টগুলোতে এমন কোন অভিযোগ দেখা যায়নি। হুবহু মিলে যাওয়া এবং মনে হয় মিলে যাওয়া যাওয়া এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। তবে বেস্ট কাজ দেয়ার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে মাঝেমধ্যে মনে হয় কিছুটা মিলে যায়। তবে নকল নয়।
পোস্টার নির্মাণকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন সায়েম। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে তিনি অসংখ্য টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের ব্র্যান্ডিং ডিজাইন করেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন মুভি ‘পরবাসিনী’-এর সহকারী পরিচালক ও প্রচার ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন সায়েম।
এরপর তিনি এসকে ফিল্মস, টাইগার মিডিয়া, জাজ মাল্টিমিডিয়া, বঙ্গর মতো প্রোডাকশন হাউসের সাথে কাজ করেন। রাজধানীতে ঢাকাতে নয়, বরিশাল থেকে এসব পোস্টার নির্মাণের কাজ করেন তিনি।
পোস্টার তৈরিতে পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে সায়েম বলেন, মেধা দিয়ে যে পরিমাণে কাজ করতে হয় সেই তুলনায় যেটা পারিশ্রমিক পাই তা সত্যিকার অর্থে কম। আমি প্রজেক্ট বুঝে প্যাকেজে হিসেবে পারিশ্রমিক নেই। আমি যেটা ফিল করি সবাই আমাকে খুব পছন্দ করেন। এ কারণে আমার কাছে কেউ এলে সেভাবে কাউকে না বলতে পারি না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আই লাভ মাই জব। আমার কোন হেল্পিং হ্যান্ড নেই। আমি ওয়ান ম্যান আর্মি।