দেশে বছরে ১ মিলিয়ন টনের বেশি স্যাশে প্লাস্টিক বর্জ্য
পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে স্যাশে প্লাস্টিক
প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টন পরিমাণ স্যাশে বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক প্রায় ১২৯ মিলিয়ন স্যাশে ব্যবহার করে।
২০২১-২২ সালে (জুন ২১- মে ২২) বাংলাদেশে প্রায় ১.০৬ মিলিয়ন টন একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে।
শনিবার ২ জুলাই এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো আয়োজিত ‘প্লাস্টিক স্যাশে: স্মল প্যাকেট উইথ হিউজ এনভায়রনমেন্ট ডেস্ট্রাকশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এই তথ্যটি তুলে ধরা হয়।
এই গবেষণায় বাংলাদেশে প্লাস্টিক স্যাশে বা মিনি প্যাকের ব্যবহার এবং ব্যবহার পরবর্তী বর্জ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে।

এসডোর এই গবেষণা অনুসারে, প্লাস্টিকের স্যাশে পণ্যকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন খাবারের স্যাশে(৪০%), ঔষধ (৮%), প্রসাধনী (২৪%), এবং স্টেশনারী। খাবারের স্যাশের মধ্যে আছে চিপস, টমেটো সস, জুস এবং গুঁড়ো দুধ, কফি, ইত্যাদি। ঔষধের স্যাশের মধ্যে আছে, স্যালাইনের প্যাকেট এবং মেডিসিন স্ট্রিপ। কসমেটিক স্যাশের মধ্যে আছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট এবং মাউথ ফ্রেশনার।
রান্নার উপাদানকে (৭%) মসলা প্যাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আরো ঢাকা ও রংপুরের ৩৫৩ জন উত্তরদাতার তথ্য বাংলাদেশে যেসব স্যাশে পণ্য বেশি ক্রয় হয়েছে সেই পণ্য সম্পর্কে তথ্য জানা গিয়েছে । যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্রয় করা হয়েছিল শ্যাম্পু/ কন্ডিশনার (৬৯%), স্যালাইন প্যাক (৫০%), ইনস্ট্যান্ট পানীয় পাউডার(৩০%) এবং ইত্যাদি । এই ফলাফল থেকে জানা যায় যে, ব্যবহারকারীরা শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের স্যাশে ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে।
সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, “প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট আকারে ছোট হলেও পরিবেশে এর প্রভাব বিশাল।”
তিনি সরকারের কাছে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে বিশেষ করে স্যাশে ব্যবহারে্র ক্ষেত্রে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ কার্যকর করার অনুরোধ জানান।
এসডোর ২০২১ সালের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ঢাকা শহরে মোট একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য ছিল ৬০.৯৫ কেজি, যেখানে মাল্টিলেয়ার প্যাকেজিং ছিল ১২.৬৫ কেজি (মোট বর্জ্যের ২০%) মাল্টিলেয়ার প্যাকেজিং বর্জ্যের মধ্যে স্যাশে বর্জ্য ছিল ১০%, এবং ২.১৫% ছিল মোট একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য। এর মধ্যে ১৪% সসের স্যাশে, ৫৭% শ্যাম্পু স্যাশে, ১৯.৪% স্যালাইন প্যাকেট, ৬.৬% কফির প্যাকেট এবং ৩% চায়ের প্যাকেট ছিল।
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি এবং এসডোর উপদেষ্টা মো. মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ প্লাষ্টিক স্যাশের ভয়াবহ দিক তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে মানুষ মিনি প্যাকেটের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই জনগণের মধ্যে আরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এই মিনি প্যাকেটগুলি ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও, উৎপাদকদের উচিত এইসব স্যাশে উৎপাদন বন্ধ করে রিফিল সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
মন্ট্রিয়ালের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি নতুন গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের চা ব্যাগে আমাদের মগে প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা এবং ৩.১ বিলিয়ন ন্যানো প্লাস্টিক নির্গত হয়।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে যখন বাজারে স্যাশে ছিল না এবং মানুষ কেনাকাটার জন্য রিফিল সিস্টেম ব্যবহার করত। তিনি আরও বলেন, আমাদের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল, উৎপাদন ও বিপণনের উপর অধিক শুল্ক আরোপ করতে হবে।
