‘রঙের মানুষ’, ‘হাড়কিপটে’, ‘সাকিন সারিসুরি’র মতো বহু দর্শক নন্দিত নাটকের নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেছেন, ”আগেকার নাটকগুলোই দর্শক বেশি পছন্দ করে দেখেন। তাই ওইসব নাটকে কোটি কোটি ভিউ! আগের নাটকগুলোতে যে জীবন, গল্প এবং মানুষে মানুষে সম্পর্ক দেখানো হতো সেগুলো জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। সেই কারণে আগেকার কাজগুলো দেখে এখনকার দর্শক নিজেদের কৈশোর ও গ্রামকে সম্পৃক্ত করতে পারেন।”
সালাহউদ্দিন লাভলুর নাটক মানেই দর্শকদের কাছে অন্যরকম আগ্রহ! জনপ্রিয় এই নির্মাতার বানানো আগেকার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ঘর কুটুম’, ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’, ‘সাকিন সারিসুরি’, ষন্ডা পান্ডা এবং খণ্ড নাটক ‘আবার যদি দেখা হয়’, ‘পরীর নাম ময়নাপক্ষী’, ‘মহারানী’ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিন এর পর্দায় দেখা যাচ্ছে। সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, কাজগুলো মানুষের এতোই পছন্দের যে তারা অবসরে পেলেই এগুলো দেখেন।
তিনি আরও বলেন, আসলে আমি কতগুলো নাটক নির্মাণ করেছি, সঠিক সংখ্যা মনে নেই। কিন্তু যেগুলো করেছি সেগুলো দর্শক নন্দিত হয়েছে। নতুন করে ‘আইস্ক্রিন’ কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে কিছু কাজ ওটিটির দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এজন্য আইস্ক্রিন ও চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
সময় বদলছে। এতে করে অনেক দর্শকদের রুচিও বদলেছে। সময়ের পালাবদলের হাওয়া লেগেছে শিল্প মাধ্যমেও। সেই হাওয়ায় আগের নাটক এবং বর্তমান নাটকের পার্থক্য চোখে পড়ছে কেমন? উত্তরে সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, সময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রই পরিবর্তন হয়েছে। আগে সবকিছুতে মানুষের যে আবেগ ছিল সেটা কমতে কমতে মানুষ আবেগহীন হয়ে পড়ছে। ব্যক্তিগত অভিমত, গ্রামের তুলনায় শহুরে মানুষদের আবেগ একটু কম থাকে।
”গ্রামে গেলে এখনও ষড়ঋতুর প্রত্যেক ঋতুর পালাবদল অনুভব করা যায়। কিন্তু শহরে আমরা এটা সহজে অনুভব করতে পারি না। আবেগের কথাটা বললাম কারণ, শিল্প সাহিত্যে যদি আবেগ না থাকে সেটা শিল্প উপযোগ্য হয় না। এখন বাস্তবিক অবস্থায় যেসব গল্পের নাটক দেখছি সেগুলো ভিন্ন পন্থা। গল্পগুলো আলাদা এবং ব্যক্তি বা দু-একজন মানুষ কেন্দ্রিক। কিন্তু আগে পুরো পরিবার, গ্রাম বা সমাজকে নিয়ে গল্প দেখাতাম । আবেগ বেশি ছিল। এটাও বলতে হবে, এখনকার নাটকগুলো এই সময়ের চাহিদা মেটাচ্ছে। তা না হলে মানুষ কেন দেখছে? দর্শকদের মধ্যেও পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
পত্র মিতালী, ঢোলের বাদ্য, গরু চোর, ব্যস্ত ডাক্তারের মতো নাটকের নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, নাটক ফ্যামিলিসহ দেখার জিনিস। আগে টেলিভিশনে নাটক প্রচার হলে পুরো পরিবার একসঙ্গে বসে দেখতো। এখন দর্শক একা একা মোবাইলে দেখে। এই কারণে নাটকের কনটেন্ট প্রেজেন্টেশন ভিন্ন হয়ে গেছে। তরুণরা এখন অনেক বেশি কাজ করছে। ইউটিউবে তাদের কাজগুলোর জয়জয়কার। কাজেই নাটকের মান নিয়ে কিছু বলবো না। আমি মনে করি, দর্শকদের ভিশনও চেইঞ্জ হয়েছে।
ওটিটিতে ইদানীং নৃশংস গল্পের কাজ বেশি হচ্ছে! প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ‘মোল্লা বাড়ির বউ’ ছবির নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, হ্যাঁ এগুলো ওটিটিতে হচ্ছে। কনটেন্টের প্রয়োজনে হচ্ছে। কিন্তু নাটকে তেমন হচ্ছে না। একজন নির্মাতা কীভাবে তার গল্পকে দর্শকদের দেখাবেন সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। নির্মাতা হিসেবে আমি কখনও কোনোদিন নেগেটিভ দৃশ্য নাটকে দেখাতে চাই না। কারণ আমার নাটক টিভিতে প্রচার হয় এবং ফ্যামিলি দেখে। তাই এখানে আমি অনেক বেশি সচেতন। এটা আমার ব্যক্তিগত এবং নীতিগত ব্যাপার, শিল্পটাকে আমি কীভাবে দেখতে চাই সেটা কাজে ফুটে ওঠে।
”প্রতিদিন নেগেটিভ কাজ হলেও সেগুলোতে আমি আসলে শিল্প সাহিত্যে দেখাতে চাই না। কারণ, শিল্পের কাজ হচ্ছে মানুষের মননশীলতাকে বাড়িয়ে দেয়া। চেতনা এবং সুন্দর ভাবনাকে বিকশিত করা। তাই শিল্পের মাঝে আমি এমন কিছু দেখাবো না যেটা মানুষের মনকে নৃশংসতার দিকে নিয়ে যায়। আমি অতীতেও দেখেছি, নাটক বা সিনেমায় কোনো গল্প দেখার পর সেটা দর্শকদের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলে এবং পরিবর্তন আনে।”
নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে সম্প্রতি ‘আমি হুমায়ূন আহমেদ হতে চাই’ নামে একটি খণ্ড নাটক বানিয়েছেন সালাহউদ্দিন লাভলু। তিনি জানান, হুমায়ূন আহমেদ প্রয়াত হয়েও বেঁচে আছেন লাখও কোটি অনুসারীর হৃদয়ে। হাজারও তরুণ স্বপ্ন দেখেন তার মতো হওয়ার। তেমনই এক স্বপ্নবাজ তরুণের গল্পে নির্মিত হয়েছে নাটক ‘আমি হুমায়ূন আহমেদ হতে চাই’। কাল্পনিকভাবে গল্প সাজিয়ে হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। ১৩ নভেম্বর রাত ৯টা ৩০ মিনিটে চ্যানেল আই তে ‘আমি হুমায়ূন আহমেদ হতে চাই’ নাটকটি প্রচার হবে।