নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে স্কোরলাইন ১-১। তখনই এলো দারুণ এক সুযোগ। পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে দিলেন রেফারি। স্পট কিক নিতে আসেন ডিফেন্ডার জয়নব বিবি রিতা। তার মাটি কামড়ানো শট প্রতিহত করেন নেপাল অধিনায়ক-গোলরক্ষক সুজাতা তামাং। তাতে আশাভঙ্গ। শিরোপার সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের।
শুক্রবার শেষ পর্যন্ত নেপালের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে শিরোপা হাতছাড়ার বেদনায় পুড়েছে লাল-সবুজের দল। পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি নিয়ে যাচ্ছে নেপাল।
তিন দলের লিগ পদ্ধতিতে খেলায় ৪ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে নেপাল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। ৭ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ বাংলাদেশ। সব ম্যাচ হারা ভুটান পায়নি কোনো পয়েন্ট। প্রথম দেখায় নেপালের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল গোলাম রব্বানি ছোটনের দল।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু ম্যাচে একের পর এক আক্রমণ করেছেন বাঘিনীরা। ১১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নুসরাত জাহান মিতু সতীর্থ থুইনুই মারমাকে স্কয়ার পাস না দিয়ে নিজেই শট নেন। সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
পরের মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন সুরভি আকন্দ প্রীতি। সামনে এগিয়ে এসে বল ধরে ফেলেন নেপাল গোলরক্ষক। ১৪ মিনিটে ভুল পাসের খেসারত দিয়ে গোল হজম করে ছোটনের শিষ্যরা। প্রতিপক্ষের সেনু পারিয়ারে বক্সের কাছাকাছি ব্যাক পাসে সামিকসা মাগারকে বল দেন। তার থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন স্বাগতিক মিডফিল্ডার কানন রানি বাহাদুর। তার ভুল পাসে বল পেয়ে ডান পায়ের ভলিতে গোল করেন সুশীলা কেসি। বাংলাদেশ গোলরক্ষক সঙ্গীতা রানি বলের ফ্লাইট মিস করেন। হালকা লাফিয়ে ডান হাতে তার প্রতিহতের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ম্যাচের ২১ মিনিটে সঙ্গীতার করেছেন লক্ষ্যভ্রষ্ট শট। দুই মিনিট পর জয়নব বিবি রিতার কর্নার থেকে রুমা আক্তারের নেয়া হেড গোললাইন থেকে হেডে বিপদমুক্ত করেন সিমরান রাই।
খেলার ৩০ মিনিটে দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে আলতো ছোঁয়া দিতে পারেননি থুইনুই মারমা। দ্রুত ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ধরে ফেলেন সুজাতা তামাং। পাঁচ মিনিট পর শর্ট কর্নার নেন রিতা। তা থেকে বক্সের বাইরে হতে দূরপাল্লার শটে সুযোগ এসেছিল, পরে অল্পের জন্য হেডে বল জালে জড়াতে পারেননি সুরভি।
৩৯ মিনিটে প্রতিপক্ষ বক্সে ঢুকে যান সুলতানা। বল সুরভি আদায় করবেন ভেবে তিনি পা থেকে ছেড়ে দেন। সুরভি আকন্দ প্রীতি ধরে নিয়েছিলেন সুলতানা নিজেই পোস্ট বরাবর শট নিচ্ছেন। সুলতানা নিজেই প্লেসিং শট করলে বল জালে জড়ানোর সম্ভাবনা ছিল।
বিরতির পর খেলার শুরু থেকেই আক্রমণের ধার বাড়ায় বাংলাদেশ। ৫৪ মিনিটে রিতার কর্নার কিকে হেডে গোল করে ম্যাচে সমতা টানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক রুমা আক্তার। স্বাগতিক ডেরায় ফেরে স্বস্তি।
পরের মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে স্বাগতিক দল। মাঝমাঠ থেকে নুসরাত জাহান মিতুর বাড়িয়ে দেয়া বল নেপালের এক খেলোয়াড়ের মাথায় লেগে বক্সের দিকে চলে যায়। এগিয়ে এসে বল হাত দিয়ে ঠেকান নেপাল গোলরক্ষক। ফিরতি বলে ঠাণ্ডা মাথায় চিপ শট ফাঁকা পোস্টেও নিতে পারেননি থুইনুই মারমা। বল পোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়। ৬১ মিনিটে মিতুর শট মিস করে জাল।
ম্যাচের ৬৯ মিনিটে পূজা দাসের পরিবর্তে মাঠে নামেন তৃষ্ণা রানি। তিন মিনিট পর সুলতানা প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে দারুণভাবে কাটিয়ে বক্সে থাকা সুরভির দিকে বল বাড়িয়ে দেন। প্লেসিং করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ যাত্রায়ও বাংলাদেশের লিড পাওয়া হয়নি।
সুলতানার বদলি হয়ে ৭৫ মিনিটে মাঠে নামেন উমেহ্লা মারমা। তিন মিনিট পর তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৮৮ মিনিটে তৃষ্ণার শট বক্সে থাকা নেপালের বিপানা স্নেহার হাতে লাগে। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। অগ্রিম জয়ের আনন্দে মেতেছিল বাংলাদেশ। সেটাই যেন হয়ে যায় কাল!
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ডিফেন্ডার রিতার নেয়া মাটি গড়ানো স্পট কিক বাঁ-প্রান্তে ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করেন অতিথি গোলরক্ষক সুজাতা। পরে পাঁচ মিনিট যোগ করা সময় পাওয়া গেলেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মেলেনি। অতি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া নেপালের জালে বল আর পাঠানো যায়নি।