সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণারাণীরা কাঁদলেন। প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঝরল আনন্দঅশ্রু। হিমালয়ের শীতলতায় যা জমে যায়নি, স্রোত বয়ে ভাসিয়েছে লাল-সবুজের বিজয় কেতন। এ কান্না জীবনযুদ্ধে গুনে গুনে পা ফেলা নারীদের অর্জনের কান্না, দেশকে আনন্দে ভাসানো ফুটবল যোদ্ধাদের কান্না। চোখ ফুড়ে বের হওয়া উষ্ণ জলের সেই স্রোতের পেছনে লুকিয়ে থাকল কত না পাওয়া, কত না শোনা গল্পের মালা— আজ সব ওই অশ্রু নদীতে বয়ে জানিয়ে দিল বাংলাদেশকে।
লাল-সবুজদের ছেলেদের ফুটবলে যখন না পাওয়ার হাহাকার ক্রমাগত দীর্ঘ হচ্ছে, তখন ফুটন্ত ধারা হয়ে ছুটছেন সাবিনা-মারিয়ারা। দেশের সীমানা ভেদ করে বিশ্বে সমুন্নত করছেন বাংলাদেশের পতাকা। ভাসছেন আনন্দে, দেশকে দেখাচ্ছেন আরও বড় আশা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এই মেয়েরা মুখের কথার মতো করে দেখাচ্ছেন- ‘আমরাও পারি। সমাজের টিপ্পনী আমাদের রুখতে পারবে না। বরং শক্তি যোগাবে।’
এতক্ষণে সবার জানা হয়ে গেছে, মেয়েদের সাফে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ছয় আসরের চেষ্টায় প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সাবিনা-সানজিদারা। বড় কথা, অপ্রতিরোধ্য সাবিনারা গ্রুপপর্বেই হারিয়ে দিয়েছেন আসরে সর্বোচ্চ ও টানা পাঁচ শিরোপা জেতা ভারতকে, প্রতিপক্ষ জালে বল জড়িয়েছেন মুড়ি-মুরকির মতো। এই দলকে রুখতে পারেনি মাঠভর্তি দর্শক সঙ্গে নিয়ে নামা নেপালও! এমন চ্যাম্পিয়নদের রোখা যায় না। রুখতে পারেনি সমাজের বাঁকা চোখের চাহনি, অর্থ কিংবা খাবারের কষ্টও।
সবুজ ঘাসে লাল বৃত্ত এঁকে দেয়ার প্রত্যয় জানিয়ে মিডফিল্ড তারকা সানজিদা আক্তার ফাইনালের আগে শুনিয়েছিলেন নিজেদের আক্ষেপের কথা। ছাদ খোলা বাসে শিরোপা উঁচিয়ে না ধরতে পারলেও জিততে চেয়েছিলেন সেই মানুষদের জন্য, যারা তাদের পাহাড়ের কষ্টকর জীবন থেকে নিয়ে এসেছেন সম্মানের শিখরে। কথা রাখতে পেরেছেন সানজিদারা। সাফের ফাইনালে নেপালকেও পাত্তা দেননি শিরোপার স্বপ্ন মনে লালন করে বেড়ানো মেয়েরা। ২০১৬ সালের ফাইনালে সেই আক্ষেপের ছয়বছর পর সাবিনা এন্ড কোং উঁচিয়ে ধরেছেন সাউথ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব।
অথচ, নেপালের বিপক্ষে আগে আটবার খেলে একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। শিরোপার মঞ্চে সেই দলকেই হারিয়ে ৩-১ এর বড় ব্যবধানে জয়। শেষ বাঁশির পর কাঠমান্ডুতে ইতিহাস গড়ার দিনে সত্যিই কেঁদেছেন মনিকা চাকমারা। হাঁটু মুড়ে, সবুজ ঘাসে দুহাতে মুখ চেপে কেঁদেছেন দেশের সম্মান বয়ে এনে, নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার নির্মল আনন্দে।
তারা করোনাকাল আর অস্থির-অস্বস্তিকর সময়ে দেশকে এনে দিয়েছেন হাসির মুহূর্ত। ছাদখোলা বাসে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার ক্ষণ আসবে কিনা সেই অপেক্ষায় থাকলেও ইতিহাস গড়ে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে উঁচিয়ে ধরতে কার্পণ্য করেননি সাবিনা-কৃষ্ণারা।