ঢাকায় পৌঁছেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছান রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক।
মস্কোর ইতিহাসের প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন ল্যাভরভ।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর আয়োজিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিবেন ল্যাভরভ। তার আগে সফরের অংশ হিসেবে পূর্ব পরিকল্পিত বৈঠকের উদ্দেশে ঢাকায় এসেছেন তিনি।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যাভরভকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি উপস্থিত ছিলেন।
সফরের শুরুর কর্মসূচিতে আজ সন্ধ্যায় ল্যাভরভ রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসবে। এক্ষেত্রে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ঢাকা-মস্কো সম্পর্ক জোরদার, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিস্থিতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যু থাকবে আলোচনার টেবিলে।
পাশাপাশি ইউক্রেন পরিস্থিতি, ভূ-রাজনীতি, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া জ্বালানি সহযোগিতা এবং রাশিয়া থেকে গম ও সার আমদানির বিষয়ে ঢাকা গুরুত্ব দেবে বলে মনে করছে সূত্রগুলো।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে নৈশভোজে অংশ নেবেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খাওয়ার টেবেলি মোমেন-ল্যাভরভ জাতিসংঘ, আঞ্চলিক ও অন্যান্য বৈশ্বিক ফোরামে সমর্থন ও সহেযাগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ইঙ্গেত রয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের পর ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা আসবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে উভয় নেতা ঢাকা সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি যাবেন ৮ সেপ্টেম্বর। সেখানে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি রোসাটমের অধীনে রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান। কেন্দ্রটি পরিদর্শন করার কথা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। ধারণা করা হচ্ছে এর ফলে হয়তো দ্রুতই কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শেষ হতে পারে।
শেখ হাসিনা এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ ২০২২ সালের অক্টোবরে নির্মাণস্থলে চুল্লী স্থাপনের চূড়ান্ত পর্যায়ের সূচনা করেন। রোসাটমের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছিল কমপক্ষে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চুক্তি। মোট পরিমাণের মধ্যে রাশিয়া প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে বলে জানা যায়। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ায় ঋণ পরিশোধে কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ল্যাভরভ সম্ভবত তৃতীয় কোনো মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। কেননা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক অংশীদার দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ডলারে লেনদেন করতে পারছে না। সম্প্রতি ভারতীয় তেল আমদানিকারকা মস্কোকে চীনের ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করেছে।
তাই ঢাকায় ল্যাভরভের আলোচনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে কারণ এখানে আর্থিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে। ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক শেষেই দিল্লি রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।