রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পাশাপাশি ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
গত রোববার রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম কৃষ্ণ রায়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান ও তাদের কয়েকজন কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলামের ৭-৮ জন অনুসারী হলের দ্বিতীয় ব্লকের ৩৮৩ নম্বর রুমে এসে কৃষ্ণ রায়কে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। বের হতে রাজি না হলে তার বেডপত্র তুলে ফেলে দিয়ে তারা সেখানে আরেকটি বেড তুলে দেয়। এরপর তাকে সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলামের রুমে নিয়ে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায় বলেন, আমি রাতে পড়াশোনা করছিলাম। হটাৎ করে তারা আমার রুমে এসে আমার বেডপত্র রুমের বাইরে নিয়ে ফেলে দেয়। আমাকে রুম থেকে বের হতে বলে। আমি বের না হয়ে চেয়ারে বসে থাকি। এসময় সোলায়মান নামে এক ভাই আমাকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দেওয়া শুরু করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমি ভিডিও করতে চাইলে তারা আমার ফোন কেড়ে নেয়। এরপর আমাকে জোর করে নাইম ভাইয়ের রুমে নিয়ে যায়। আমার বন্ধু মাহবুব আমার পেছন পেছন এসে রুমে ঢুকলে তার ফোনও কেড়ে নেয়। তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নাইম ভাইয়ের সামনে আমাকে কান ধরিয়ে উঠবস করায়। আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমি হিন্দু জানার পর তারা বলে, তোকে এখন মেরে ফেললেও কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।
ভুক্তভোগীর বন্ধু একই বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব বিল্লাহ বলেন, আমি ওকে ধস্তাধস্তি করতে দেখে ছুটে যাই। আমি রুমে ঢুকতে চাইলে ওরা ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। আমি জোর করে রুমে ঢুকলে আমার কাছ থেকে একজন আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায়। পরে আমাকে বের করে দিলেও আমার মোবাইল তখন ফেরত দেয়নি। আধঘন্টা পর আমার মোবাইল ফিরিয়ে দেয়।
অভিযুক্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার কর্মীদের সাথে কথাকাটি হয়েছিল। পরে বিষয়টি সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। পরে এবিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি এবং ঐ ছেলে তার সিটেই রয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, আমি গতকাল রাত ৪টার সময় গিয়েও গার্ডের কাছে খোঁজ নিয়েছি। এবিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে প্রক্টর দপ্তর থেকে কৃষ্ণ নামে এক শিক্ষার্থীকে হলে ওঠানোর জন্য বলা হয়েছিল। হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করে। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এবিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। এব্যাপারে হল প্রভোস্টের কাছে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।