মুক্তি পেতে যাচ্ছে চিত্রনায়ক রোশান অভিনীত ছবি ‘আশীর্বাদ’। মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের পরিচালনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পাওয়া এ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ১৯ আগস্ট।
মুক্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস। সেখানে প্রযোজক ও পরিচালক ছাড়াও ছিলেন প্রবীণ নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, প্রযোজক নেতা কামাল কিবরিয়া লিপু।
তবে ‘আশীর্বাদ’ ছবি সংশ্লিষ্ট তেমন কেউ ছিলেন না। এমনকি নায়ক রোশান ও ছবির নায়িকা মাহিয়া মাহিও ছিলেন না। তারা বলছেন, প্রচারণার ব্যাপারে কেউ তাদের জানায়নি। রোশান বলেন, শুনেছি ১৯ আগস্ট ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু অফিশিয়ালি আমাকে জানায়নি। নিউজ দেখে জেনেছি।
তবে সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজক জেনিফার নায়ক রোশান ও মাহির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, তারা ‘আশীর্বাদ’ ছবির পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার দেয়নি। তাই তাদের প্রেস কনফারেন্সে বলা হয়নি। তাদের এমন আচরণে অখুশি হয়েছি। তারা কেন শেয়ার করেনি জানি না। নায়ক-নায়িকাদের আজকাল এতো চাহিদা যে প্রযোজক-পরিচালকরা হিমশিম খেয়ে যাই।
ভরা মজলিশে রোশান ও মাহিকে নিয়ে প্রযোজক জেনিফা ও দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর নেতিবাচক মন্তব্যে আশাহত হয়েছেন রোশান। শুক্রবার বিকেলে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, তাদের কাছে এটা আশা করিনি। ঝন্টু সাহেবকে সম্মান দিয়েই বলছি, উনি আসলে কাউকে স্নেহ করতে জানেন না। তার কথাগুলো আমাকে মর্মাহত করেছে।
কথা প্রসঙ্গে রোশান বলেন, প্রত্যেক ছবি মুক্তির আগে একটি টিম প্রচারণার কাজে থাকে। নানা পরিকল্পনা করে থাকে। কিন্তু ‘আশীর্বাদ’-এ তেমনটা নেই। এখানে প্রযোজক (জেনিফার ফেরদৌস) নিজের ইচ্ছে মতো সবকিছু করছেন। পোস্টার যেটি বানানো হয়েছে সেটি আমার পছন্দ হয়নি। আলোচনা ছাড়াই প্রযোজক নিজের পছন্দ মতো তৈরি করেছেন। এমন মানহীন পোস্টারে আমার ভক্তরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমার নিজেরও পছন্দ হয়নি।সে কারণে ফেসবুকে শেয়ার পোস্টারটি শেয়ার করেননি বলে জানালেন রোশান।
তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজক যে মন্তব্য করেছেন সেটিও ঠিক নয়। ক্ষোভ ঝেড়ে রোশান বলেন, শুটিংয়ের শুরু থেকে প্রযোজক ছবির কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে কাজ করেছে। নিজের ছবি বলে শুরু থেকে এর সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম। তবে প্রযোজক আগে থেকে কোনো কিছু না জানিয়ে নিজের মতো করে পোস্টার বানিয়েছে, সংবাদ সম্মেলন করেছে। পোস্টার ছাড়ার আগে দেখতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, কোয়ালিটি ভালো করতে। কিন্তু আমাকে কিছুই জানায়নি। এতে আমার অভিমান জন্মে। অনলাইনে পোস্টার ছাড়ার পর অনেকেই আমাকে বলেছে, এই পোস্টার সময় উপযোগী নয়। মানুষের কথা যা শোনার আমাকে শুনতে হয়েছে।
রোশান বলেন, প্রযোজক নিজেই হাইলাইট হওয়ার জন্য এসব করছে। সবচেয়ে অবাক হয়েছি উনি সংবাদ সম্মেলনে আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন যা পুরোপুরি অযৌক্তিক। শুটিংয়ের সময় অভিযোগ তোলে, আমি নাকি ডিরেক্টরকে কর্তৃত্ব দেখিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পরিচালক যদি এটা বলতে পারে আমি সিনেমা ছেড়ে দেব।
তিনি বলেন, বরং প্রযোজক (জেনিফার) কর্তৃত্ব খাটিয়েছেন। পুরো শুটিংয়ে আমাদের সবাইকে একাধিকবার বিপাকে ফেলেছেন। ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারিনি। অনেক জায়গায় ছবির মানে ছাড় দিয়েছে। শুটিং ইউনিটে খাবারের সমস্যা হওয়ার কথা না। অথচ উনি খাবারের সমস্যা করলেন। খাবার পানি পর্যন্ত নিজের ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখতেন। আমাদের খাবারের ও পানির সমস্যায় পড়তে হয়েছে অনেকবার। শুটিং হলেই উনি এসে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেন। এভাবে প্রতি দৃশ্য যদি ফেসবুকে দেওয়া হয় তাহলে কীভাবে শুটিং করবো? এসব বিরক্তির মাঝেও উনার আবদার আমরা যে ছবি ফেসবুকে আপলোড দিলে তাতে যেন প্রযোজক জেনিফারকেও থাকতে হবে; এটা কেমন আচরণ? তারপরেও ভেবেছিলাম প্রচারে অংশ নেব। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন করে প্রচুর মিথ্যা কথা বললেন। ট্রেলার দেখার অপেক্ষায় আছি।
রোশান বলেন, যেভাবে করার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। ৬০ লাখ টাকা বাজেট পেয়ে এই বাজেটে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট আরো সুন্দর করে বানানো যেত। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে সম্পূর্ণ টাকা ছবিতে খরচ হয়নি। কোয়ালিটি যেন ছাড় না দেয় তাই আমি চুক্তির চেয়েও পারিশ্রমিক কম নিয়েছি। বলেছি, আমার প্রাপ্য টাকা সিনেমাতে দিন। তবুও কাজটা ভালো করেন। কিন্তু প্রযোজক করেনি। আমি ভীষণ আশাহত হয়েছি।
রোশান বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, উনি প্রযোজক হিসেবে মোটেও পেশাদার নন। তার আরো জানা বোঝা উচিত। কীভাবে কোথায় যুক্তিগত কথাবার্তা বলতে হয় সেটাও শেখা উচিত। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা জানে রোশান কেমন। উনি আমাকে অসম্মান করতে গিয়ে নিজের সম্মান নষ্ট করছে।