চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে’

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল পুরোপুরি নিষিদ্ধের কারণে বহু মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

বৃহস্পতিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এবং নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, মোটরসাইকেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন এবং দূরের যাত্রায় এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। তা সত্ত্বেও মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে কাছের ও দূরের যাত্রায়। মূলত অসহনীয় যানজট, গণপরিবহন সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও জনবান্ধব না হওয়ার কারণে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে: অধিকাংশ মহাসড়কে মোটরসাইকেল-সহ স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য সার্ভিস রোড নির্মাণ না করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলো মহাসড়কের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে মহাসড়ককে পুরোপুরি এড়িয়ে মোটরসাইকেলের পক্ষে গন্তব্যে পৌঁছানোর তেমন কোনো সুযোগ নেই।

অন্যদিকে, সরকার গণপরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। বেসরকারি বাস মালিকদের অযৌক্তিক বিরোধিতার মুখে বিআরটিসি বাসের সেবা উন্নত ও বিস্তৃত করছে না। এই বাস্তবতায় মানুষের সামনে মোটরসাইকেল এক প্রকারের গণপরিবহন হয়ে উঠেছে। যদিও মোটরসাইকেল কখনো গণপরিবহন কিংবা গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। হওয়া উচিত নয়। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এটা হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, কিছু মানুষ সবসময়ই মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা করেছে। তবে গত ঈদুল ফিতরে এটা চরম আকার ধারণ করে। ফলে দুর্ঘটনাও বাড়ে। সে কারণে এবার সরকার মহাসড়কে মোটরসাইকেল পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঈদে বিপুল সংখ্যক ঘরমুখো মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানসম্মত গণপরিবহন দেশে নেই। তবুও মানুষ যেকোনভাবে আপনজনের টানে বাড়ি যেতে চাইবেন। মানুষের এই আবেগকে পুঁজি করে বহু অসাধু পরিবহন মালিক তাদের ভাঙাচোরা পরিবহন রাস্তায় নামাবেন এবং অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করবেন। এতে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ হতাহত হয়, তার চেয়ে বাস দুর্ঘটনায় বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর সুযোগ রাখার কারণে অনৈতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্র তৈরির আশঙ্কাও রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রেক্ষাপটে, আমরা ঈদযাত্রায় শুধুমাত্র ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকদের নিরাপদ গতিসীমায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। এটা না করলে ঈদ যাত্রায় মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করে, একটি টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে ক্রমান্বয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে। একই সাথে কিশোর-তরুণরা যাতে মোটরসাইকেল চালাতে না পারে সেজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতসহ পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।