চলতি বছরে মার্চ মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। এই দুর্ঘটনাগুলোতে নিহত ৫৬৪ জন এবং আহত ১০৯৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৮জন এবং শিশু ৭৩ জন। দুর্ঘটনায় অধিকাংশ মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ১৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৯৪ জন যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে পথচারীদের যার সংখ্যা ১০৭ জন যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮১ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন এবং ১৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এই উপাত্ত ৯ টি জাতীয় দৈনিক, ৭ টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৪ জন (৩৪ দশমিক ৩৯শতাংশ), বাস যাত্রী ৫৩ জন (৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ), ট্রাক,কাভার্ডভ্যান,পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি আরোহী ৪৯ জন (৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ), মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ২২ জন (৩ দশমিক ৯০ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক,সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান,লেগুনা) ১০৪ জন (১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন,ভটভটি,আলমসাধু,পাখিভ্যান,মাহিন্দ্র,টমটম) ২৪ জন (৪ দশমিক ২৫ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল,প্যাডেল রিকশা, রিকশা ভ্যান আরোহী ১১ জন (১ দশমিক ৯৫ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৪টি (৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৯৭টি (৪০ দশমিক ৫৩ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৯টি (১২ দশমিক ১৩ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪৩টি (৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৩টি (০ দশমিক ৬১ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ৮৫টি (১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৪২টি (৪৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি (২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ৩৯টি (৮ দশমিক ০২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি (৩ দশমিক ২৯ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক,কাভার্ডভ্যান,পিকআপ ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ, ট্রাক্টর,ট্রলি, লরি, ড্রামট্রাক, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, জীপ ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ , থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক,সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, ট্রেইলার, হ্যান্ডট্রলি) ১৮ দশমিক ২৮শতাংশ , স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, আলমসাধু,চান্দের গাড়ি, পাখিভ্যান, লোবেট, টমটম, মাহিন্দ্র, নাটাগাড়ি, পাওয়ারটিলার) ৫দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৮৫৩ টি। যার মধ্যে ট্রাক ১৪৭, বাস ১২৪, কাভার্ডভ্যান ২৭, পিকআপ ৪১, ট্রাক্টর ২৬, ট্রলি ১৭, লরি ৪, ড্রাম ট্রাক ৯, তেলের ট্যাঙ্কার ৩, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি ১, মাইক্রোবাস ১৩, প্রাইভেটকার ১৪, অ্যাম্বুলেন্স ৩, জেলা প্রশাসকের জীপ ১, মোটরসাইকেল ১৯৯, থ্রি-হুইলার ১৫(ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, লেগুনা, ট্রেইলার, হ্যান্ডট্রলি), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৬ (নসিমন, ভটভটি, আলমসাধু, চান্দের গাড়ি, পাখিভ্যান, লোবেট, টমটম, মাহিন্দ্র, নাটা গাড়ি, পাওয়ারটিলার) এবং বাইসাইকেল,প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান ২২টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ , সকালে ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ , দুপুরে ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বিকালে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং রাতে ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগীয় পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, প্রাণহানি ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম ফেনি ও জামালপুর জেলায়। ৪টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছে।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়:
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ২ জন, বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট ১ জন, আনসার সদস্য ১ জন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষক ১৯ জন, দন্ত চিকিৎসক ১ জন, পল্লী চিকিৎসক ২ জন, সাংবাদিক ৪ জন, আইনজীবী ৩ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ৬ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩৪ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৭ জন, পোশাক শ্রমিক ৫ জন, পদ্মা ব্রিজের রেল শ্রমিক ১ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ১ জন, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মচারী ১ জন।