রাজধানীর উত্তরায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে ৯ কোটি উদ্ধারের দাবি করেছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাতে উত্তরা জোন পুলিশ থানায় নিয়ে টাকা গুণে পায় মাত্র ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার।
পুলিশের ভাষ্য, ডিবি টাকা না গুণেই ৯ কোটি পাওয়ার ঘোষণা দেয়। আর ডিবি বলছে, ‘‘আমরা টাকা উদ্ধার করেছি, কিন্তু গুনিনি।’’
টাকার চারটি ট্রাঙ্কের মধ্যে একটি খালি!
ডিবি কিংবা উত্তরা বিভাগের পুলিশ ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উদ্ধার করা টাকার মোট কতো পরিষ্কার না করলেও জানা যায়, ঘটনার ১০ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার টাকার অংক মাত্র ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ডিবি উদ্ধারের পর রাতে ব্যাংকের অর্থ বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সামনে উদ্ধার হওয়া তিনটি ট্রাঙ্ক খুলে এ অর্থ পাওয়া যায়। কিন্তু ট্রাঙ্ক ছিল চারটি। পুলিশের হাতে এসেছে তিনটি। এর মধ্যে নাকি একটি খালি।
তুরাগ থানার এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন: পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, সোয়া ১১ কোটি টাকা ভর্তি চারটি ট্রাঙ্ক ছিনতাই হয়েছে। দুই ট্রাঙ্কে ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একটি ছিল খালি। টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠানের মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের লোকজনই ট্রাঙ্কগুলো খুলেছেন। কারণ, চাবিগুলো তাদের কাছেই ছিল।
‘ডিবি এখনো টাকা বুঝিয়ে দেয়নি’
শুক্রবার মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে যে টাকাগুলো গতকাল ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে সেই টাকা এখনো আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। উদ্ধার হওয়া টাকা এখনো থানায় রয়েছে। তবে পুলিশ গতকাল আমাদের সামনে টাকাগুলো গুণেছিল। পুলিশের গণনা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
না গুণেই ৯ কোটি টাকা পাওয়ার কথা জানায় ডিবি
পুলিশ বলছে, খোয়া যাওয়া চারটি ট্রাঙ্কের মধ্যে তিনটি উদ্ধারের পর টাকা না গুণেই ৯ কোটি পাওয়া গেছে বলে ঘোষণা করে ডিবি। কিন্তু রাতে থানায় নিয়ে টাকা গোণার পর মেলে মাত্র ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান বলেন, টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি। তাই এ বিষয়ে তারাই বলতে পারবেন।
আমরা টাকা উদ্ধার করেছি, কিন্তু গুণিনি: ডিবি
ডিবি জানায়, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা উদ্ধারের পর থানায় নিয়ে গোণা হয়েছে। তাই সঠিক পরিমাণটা পুলিশ সদস্যরাই জানেন। বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ ১১ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে জানালেও শুক্রবার সুর পাল্টে জানালেন ‘আমরা টাকা উদ্ধারের পর পরই ডিএমপির উত্তরা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। আমরা টাকা উদ্ধার করেছি, কিন্তু গুণিনি। তাই টাকার সঠিক পরিমাণ তারাই বলতে পারবে।’
টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা
টাকা ছিনতাইয়ের এ ঘটনায় তুরাগ থানায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে তুরাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ছিনতাই হওয়া চারটি বক্সের মধ্যে তিনটি বক্স উদ্ধার করেছে ডিবি। এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্ট লিংক কোম্পানি লিমিটেডের দু’জন পরিচালক ও গাড়িচালকসহ সাতজনকে আটকও করা হয়ে বলে জানায় ডিবি।
যেভাবে টাকা ছিনতাই
পুলিশ বলছে, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট কোম্পানির ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৫৭৯০ সিরিয়ালের একটা নোয়া গাড়িতে মিরপুরথেকে বের হয়ে সাভার ইপিজেডের দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটিতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল। গাড়িটি মিরপুর ডিওএইচএস পার হয়ে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে দিয়াবাড়ি মেট্রো স্টেশন পার হয়ে ১১ নম্বর ব্রিজ হয়ে যখন সামনের দিকে যাচ্ছিল তখন পেছন থেকে একটি কালো কালারের মাইক্রোবাস এসে ডান থেকে বামে চাপ দিয়ে হর্ন দেয় ও গাড়িটির গতিরোধ করে।
প্রথমে তারা হর্ন দেয়া নিয়ে কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে ঝগড়া করে। এরপর গাড়ির ড্রাইভার এবং কোম্পানির সুপারভাইজারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। ছিনতাইকারী দলের একজন টাকার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে। তিনি গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড় করায়। ওই সময় গাড়িটিতে কোম্পানির একজন ম্যানেজার ছিলেন। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এবং গাড়িতে থাকা টাকার চারটি ট্রাঙ্ক নামায়, কালো রংয়ের আরেকটি হায়েস গাড়িতে করে তারা সেই ট্রাঙ্ক নিয়ে চলে যায়।
গাড়িটি রাজউকের ভবনের পাশ দিয়ে ১৮ নম্বর সেক্টরের রাস্তা হয়ে সামনে থেকে ইউটার্ন করে ১০নং সড়ক হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় তারা ৯৯৯ এ কল করে বিস্তারিত জানায়। ৯৯৯ এর মাধ্যমে থানা পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায়।