
সোহানুর রহমান সোহান। আমার খুব প্রিয় পরিচিত একজন মানুষ। যেহেতু আমার বাবা একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন, সেহেতু স্বাভাবিকভাবে এদেশের যারা চলচ্চিত্র পরিচালক তাদের প্রতি আমি সবসময় অন্যদৃষ্টিতে তাকাই অন্যভাবে তাকাই। বাবাকে দেখেছি একজন পরিচালক হিসেবে, কীভাবে আমাদের মানুষ করেছেন। কীভাবে চলচ্চিত্র জগৎকে ভালোবেসেছেন। সুতরাং যে কোন চলচ্চিত্র পরিচালকের ক্ষেত্রে আমার সেই জিনিসটাই বেশী করে মনে হয়। যে কারণে চলচ্চিত্র পরিবারের সন্তানদের দেখলে আমি আমার বাবার কথা মনে করি। সোহান ভাইয়ের অনেক গুণ ছিল। যে গুণগুলোর সাথে আমার বাবার অনেক মিল খুঁজে পেতাম।
সোহানুর রহমান সোহান যে ছবিটি দিয়ে প্রথম বিখ্যাত হয়েছিলেন সে ছবিটার নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই ছবিতে তিনি উপস্থাপন করেছিলেন প্রখ্যাত নায়িকা মৌসুমীকে। মৌসুমী তখন কেবল মাত্র একটি প্রডাক্টের মডেল হয়ে আমাদের এই জগতে পা দিয়েছেন। সেই সময় তিনি মৌসুমীকে আবিস্কার করেন এবং ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে তাকে নেন। মৌসুমীর জয়যাত্রা সেইছবি থেকে শুরু। ছবির জগতে মৌসুমীকে প্রথম তিনিই এনেছিলেন। নৃত্য পরিচালক আজিজ খান শাকিব খানকে নিয়ে এসেছিলেন তার কাছে। তিনি শাকিব খানের মাঝখানে সেই প্রতিভা খুঁজে পেয়েছিলেন। যেটা দেখার দৃষ্টি তার ছিল। বহু নতুন শিল্পী কাহিনীকারকে, সঙ্গীত শিল্পীকে সোহান ভাই প্রথমবারের মত তার চলচ্চিত্রে ঠাঁই দিয়েছেন।
তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে আমি দেখেছি পরিচালকদের জন্য তার কী পরিমান ভালবাসা। তিনি প্রথমেই পরিচালক সমিতির অফিসকে আধুনিক করার জন্য একটি ফ্যাক্স মেশিন স্থাপনার প্রয়োজনীয়তার অনুভব করলেন এবং সেইভাবে একটি ফ্যাক্স মেশিন যোগাড় করলেন। আমি তখন দেখেছি তিনি সেই অফিসটাকে সাজানোর জন্য কী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পরিচালকরা যাতে ভালো ভালো ছবি পান সে জন্য কত জায়গায় কতজনকে অনুরোধ করেছেন। সোহানুর রহমান সোহান এর আর একটা ব্যাপার খুব বেশী করে মনে পড়ছে। কিছুদিন আগে তার জন্মদিন ছিল তিনি আসলেন, আমাদের সাথে গল্প করছেন, তখনই আমাদের অনন্যা রুমা বললেন সামনে তো আপনার জন্মদিন- সোহান ভাই তখন চমৎকৃত হলেন। তোমরা আমার জন্মদিন মনে রাখ? রুমা বললো, কেন মনে রাখবো না? আপনি তো আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় মানুষ। সোহান ভাই খুবই খুশী হলেন এবং বললেন যে ঠিক আছে। আমার জন্মদিনে আমি আসবো, যত কাজই আর যত ব্যস্ততা থাকুক। আমার জন্মদিন এখন থেকে চ্যানেল আই এর সাথেই উদযাপন করবো।
সোহান ভাই নিজে যেহেতু একজন পরিচালক সেহেতু তিনি নিজেই উপলব্ধি করলেন যে, শোন তোমাদের একটা তারকা কথন অনুষ্ঠানে যদি আমি বসে বসে আমার জন্মদিনের কথা বলি তাহলে সেটা এমন কোন দর্শক দেখবে না। আমার সাথে একজন কাউকে নিয়ে আসি। রুমা বললো, আপনি আসলেই অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও যদি কাউকে নিয়ে আসেন তো নিয়ে আসতে চান তাহলে নিয়ে আসুন। আমরাই তাকে আপনার পক্ষ থেকে দাওয়াত দিবো। যদি নামটা বলে দেন। সেদিনের অনুষ্ঠানে সোহান ভাই নিজে কাউকে নিয়ে আসেননি, কিন্তু অনুষ্ঠানে এসেছিলেন আর এক বিখ্যাত নায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনিও সোহান সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

সোহান ভাই সেদিন অনেক আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র জগতকে বড় করার স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন। আজকে সোহানুর রহমান আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমাদের চলচ্চিত্র জগত নিশ্চয়ই আগের চেয়ে বড় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি। প্রতিবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য ছবি জমার সংখ্যা বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে সোহান ভাই আপনাকে এতটুকু আশ্বস্ত করতে পারি যে, আপনি চলচ্চিত্রকে হাত ধরে যে জায়গায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলেন সেই দিকেই আমরা আমাদের চলচ্চিত্রকে নিয়ে যাবার চেষ্টা অভ্যাহত রাখবো। আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।
সোহানুর রহমান সোহান সারা জীবন রোমান্টিক ছবি বানিয়েছেন। তিনিও রোমান্টিক ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর একদিন পরে তিনিও চলে গেলেন স্ত্রীর কাছে।