চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

বৃষ্টির প্রজাপতি ও একজন অসিত কুমার

নারায়ণগঞ্জ সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ, সংগঠক অসিত কুমার স্মরণ

৯ মে ২০২৩। ভোর ৫ টা ২২ মিনিটে আমার মাথার ওপর থেকে একটা ছায়া সরে গেল। নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসিতদা কে ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বছরের পর বছর বলতে গেলে একাই ‘লক্ষ্যাপার শাস্ত্রীয় সংগীত সম্মেলন’ আয়োজন করে নিজের পরিচয়টা নিয়ে গিয়েছিলেন জাতীয় পর্যায়ের একজন শিল্প সংগঠক হিসেবে। এছাড়া ছিলেন মঞ্চ নাটকের গুণী নির্দেশক, নিপুণ হাওয়াইয়ান গিটার বাদক। লিখতেন কদাচিৎ, কিন্তু লেখায় ধার ছিল। পেশাগতভাবে ছিলেন মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমি এগিয়ে রাখব তার সাংগঠনিক দক্ষতা আর নিষ্ঠাকে। সঠিক ব্যক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অসিতদার সমকক্ষ কাউকে আমি এখনো দেখিনি।

অসিতদার সাথে পরিচয় প্রায় পঁচিশ বছর আগে। আমার ছোট বোন তখন তার ঐকিক থিয়েটারে যোগ দিয়েছে। মূলত ওর কাছে এই আপাত কঠোর কিন্তু কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান মানুষটির বর্ণনা শুনেই কৌতুহলী হয়েছিলাম। একদিন গিয়ে তাই অসিতদার সাথে পরিচিত হলাম। যতই ওনার কাছে গিয়েছি শ্রদ্ধা ততই বেড়েছে। ১৯৯৯ সালে হঠাৎ আমার মাথায় ভূত চাপে, একটা সিনেমা বানাবো। ডকুমেন্টারি না, শর্ট ফিল্মও না, রীতিমতো ফুললেন্থ ফিচার ফিল্ম! “বৃষ্টির প্রজাপতি” নামের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার খুবই আনাড়ি একটা স্ক্রিপ্ট লিখেও ফেললাম। টাকা নেই, লোকবল নেই, অভিনেতা-অভিনেত্রী কাউকে চিনি না, সবচেয়ে বড় কথা সিনেমা বানানোর ব্যাপারে নূন্যতম অভিজ্ঞতাও নেই। কেবল একটা চরিত্রের ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, এটাতে অসিতদা যদি অভিনয় করতেন! আমার বোন ভাবনাটা এক কথায় উড়িয়ে দিল। কারণ অসিতদা অভিনয় করেন না, করান। আর ক্যামেরার সামনে দলের কাউকে ঘেঁষতেও দেন না! তারপরও সাহস করে একদিন ওনাকে ফোন করে বসলাম, কোন কারণ না বলেই স্রেফ দেখা করতে চাইলাম। পরের দিন সকাল ৯টায় বাসায় যেতে বললেন।

Bkash July

সেদিন রাত থেকে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি, সকালের মধ্যে আমাদের গোটা শহর ডুবে গেল। শুনেছিলাম উনি সময়ের ব্যাপারে খুব কড়া, তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বের হলাম। রিকশা না পেয়ে হাঁটু পানি ভেঙে ভিজে চপচপে হয়ে অসিতদার বাসায় গিয়ে উঠলাম। ওনার সাথে কমিটমেন্টের জন্য যতটা, আমার তৎপরতা তার চেয়েও বেশি ছিল অন্য কারণে। ওইদিনই আমার ছুটির শেষ, বিকালের মধ্যে বুয়েটের হলে ফিরতে হবে। কয়েকদিন পর শুরু হবে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। পরবর্তী মাসখানেকের মধ্যে আর নারায়ণগঞ্জ ফেরার কোন সুযোগ নাই। আর পরীক্ষার পর এক মাসের যে বন্ধ পাওয়া যাবে তখন শুটিং করার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে ঘুরছি। আমার অবস্থা দেখে করুণা হয়েছিল কি না জানি না, খুবই অবাক করে দিয়ে উনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন! শুধু তাই না গল্প অনুযায়ী অন্যান্য অভিনয় শিল্পী যোগাড় করে দিবেন বলেও আশ্বস্ত করলেন।

অসিতদা কথা রাখলেন। যদিও আমাদের শুটিং শুরু হলো আরও বেশ পরে, ২০০০ সালে। তিনি তখন ডাকসাইটে মঞ্চ নির্দেশক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আর আমি নিতান্তই নাবালক এক অনভিজ্ঞ চলচ্চিত্র অভিলাষী। প্রথম দিনই আমার সমস্ত অস্বস্তি উনি দূর করে দিলেন, বললেন ভুল-শুদ্ধ যাই হোক আমি যেন আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকি। আরেকটা কথা আমি কখনোই ভুলব না। উনি বলেছিলেন,‘যতক্ষণ আমি অভিনেতা হিসাবে তোমার সেটে আছি, ততক্ষণ আমি তোমার আজ্ঞাবহ। এটাই পেশাদারিত্বের মূল কথা।’ তবে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়েও উনি নানানভাবে সাহায্য করতে থাকলেন। সবার মেকআপ, কস্টিউম নিয়ে হাবুডুবু খেতে থাকা আমাকে টেনে তুললেন। আমি সংলাপ লিখতে পারতাম না, ভেবেছিলাম শুটিংয়ের সময় ইম্প্রোভাইজ করে নেব। কিন্তু এটাও যখন পারছিলাম না তখন মুখে মুখে সংলাপ বানিয়ে সে যাত্রায় আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন। আবার যখন ইন্ডোর শুটিংয়ের জন্য আগে থেকে ঠিক করে রাখা আমার পারিবারিকভাবে এক ঘনিষ্ঠজনের বাসা থেকে শুটিংয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে নিষেধ করে দেওয়া হলো তখনও এগিয়ে এলেন অসিতদা। বৌদি তখন প্রথমবার সন্তানসম্ভবা, উনি বাবার বাড়ি চলে গেলে ওনাদের পুরো ফ্ল্যাটটাই আমাকে ছেড়ে দিলেন শুটিংয়ের জন্য। এখানকার কোন দৃশ্যের একটা শটেও কিন্তু অসিতদা ছিলেন না। বরং তিনি তখন অবতীর্ণ হলেন পুরোদস্তুর লোকেশন ম্যানেজারের ভূমিকায়!

Reneta June

এরপর আমার পরীক্ষা ইত্যাদির জন্য অল্প কিছু দৃশ্য বাকি পড়ে থাকল অনন্তকাল। যখন সময় মিলল প্রাকৃতিক নিয়মেই ততদিনে আমার শিশু চরিত্ররা সব অনেক বড় হয়ে গেছে। কোনোভাবেই আর ঝুলে থাকা দৃশ্যগুলো শেষ করা সম্ভব হলো না। এর মধ্যে পড়ালেখা শেষ করে পেশাগত জীবনের গোড়ার দিককার অনিবার্য সংগ্রামে খাবি খেতে খেতে সিনেমার চিন্তা আমার মাথা থেকে উধাও। বছর আটেক বাদে একটু গুছিয়ে ওঠার পর ২০০৮ সালে মনে হলো শুট করা ফুটেজগুলো একটু এডিট করে দেখা যাক। জোড়াতালি মার্কা একটা কাট দাঁড় করালাম। তখন মনে হলো সিনেমাটা সাপ-ব্যাং-বিচ্ছু যাই হোক, জার্নিটা শেষ করা প্রয়োজন। ডাবিংয়ের জন্য স্টুডিও ভাড়া করা হলো। অসিতদা তখন অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নিজের ডক্টরেট নিয়ে মহাব্যস্ত। প্রথমে বললেন সময় দিতে পারবেন না, কিন্তু কী ভেবে আরেকবার তারিখটা জানতে চাইলেন। ওইদিন আরেকটা জরুরী কাজ আছে জানিয়ে বললেন অন্যদের নিয়ে শুরু করতে। কিন্তু নির্ধারিত দিনে দেখা গেল সবার আগেই উনি স্টুডিওতে উপস্থিত। ফোনটা বন্ধ করে বললেন, ‘একবার যেহেতু ঢুকে গেছি, এখন সব কাজ বাদ।’ কাজটা শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়ালো তা আর জনসমক্ষে দেখানোর মতো কিছু হলো না। হলো চূড়ান্ত রকমের অগোছালো আর মেলোড্রামাটিক একটা আবর্জনা বিশেষ। এর পেছনে সমস্ত দায় আমার, কারণ অসিতদাসহ সবাই আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করেছেন। জিনিসটা কেচে গেছে স্রেফ আমার অনভিজ্ঞতা আর অযোগ্যতার কারণে। তবে “বৃষ্টির প্রজাপতি” ছিল আমার জন্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা শিক্ষা সফর। এই কাজটা করতে করতেই সিনেমা ব্যাপারটা আমি একটু একটু বুঝতে শুরু করলাম।

অনেক বছর পর আমি দাদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি তো গোড়াতেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমি একটা অনর্থক আর পরিণামহীন কাজে হাত দিয়েছি তারপরেও ওনার মতো অভিজ্ঞ একজন লোক নিজের সময়-অর্থ-শ্রম ব্যয় করে আমাকে প্রশ্রয় দিলেন কেনো? উনি কেবল বলেছিলেন সেই তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ওনার বাসায় যেদিন গিয়েছিলাম উনি নাকি কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা দেখে নিজের যুক্তিবুদ্ধিকে আর পাত্তা দেননি! বলা যায় না, ওইদিন উনি আমাকে ফিরিয়ে দিলে হয়তো জীবনে কোনোদিন আর সিনেমার রাস্তায় হাঁটতামই না। এরপর সময় সময় দাদা আমার ফিল্ম প্রজেক্টের খোঁজ নিয়েছেন, বলার মতো কোন কাজ করতে পারিনি বলে বরং লজ্জাই পেয়েছি। আসছে ২১ জুলাই আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি “আম-কাঁঠালের ছুটি” মুক্তি পাচ্ছে, ভেবেছিলাম একসাথে বসে ছবিটা দেখব। সুযোগ পেলাম না!

১৯৯০ থেকে ২০০৬ এই দীর্ঘ ১৬ বছর দূরে থাকার পর আমি যখন আবার নারায়ণগঞ্জে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, অসিতদা তখন এগিয়ে এলেন শহরে আমার পূনর্বাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে। ওনার যেখানেই মনে হয়েছে পেশাগতভাবে আমার কন্ট্রিবিউশনের সুযোগ আছে, সেখানেই আমাকে নিয়ে গেছেন। সিটি মেয়রের সাথে আমার ঝাপসা হয়ে যাওয়া সম্পর্ক পরিষ্কার করেছেন, জেলা প্রশাসকের কোন কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাকে যুক্ত করেছেন। লক্ষ্যাপারের শাস্ত্রীয় সংগীত সম্মেলনের সাথে সিনেস্কোপকে চমৎকারভাবে সম্পৃক্ত করেছেন, “আলী আহাম্মদ চুনকা সিটি পাঠাগার ও মিলনায়তন” ডিজাইন আর নির্মাণের সময় নানাভাবে গাইড করেছেন। তৈরি হয়ে গেলে এর প্রতিটা স্পেসকে কীভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য শৈল্পিক উপায়ে ব্যবহার করা যায় তার চিন্তা করেছেন এবং নিজে অনুষ্ঠান আয়োজন করে অন্যদের সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। এই ভবনের সর্বাধিক ব্যবহৃত পরীক্ষণ হলের আইডিয়াটা দাদার মাথা থেকেই বের হয়েছিল। দেখা হলেই নতুন নতুন পরিকল্পনা শুনতাম। বলাই বাহুল্য সব কিছুই ছিল ওনার ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ গোছের কাজ। অসিতদার মধ্যে কোনোদিন কোন বৈষয়িক ভাবনা আমি খুঁজে পাইনি। বরং প্রতিটা শাস্ত্রীয় সংগীত সম্মেলনের পরেই শুনতাম নিজের গাঁট থেকে এবার কত গেল!

২০১৩ সালের এক রাতের কথা মনে পড়ে, তখন বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পেশাগত কাজ সেরে রাত ১০টার দিকে আমি গুলিস্তান এসে দেখি কোন বাস নেই। রাস্তাঘাট সুনসান, অল্প কিছু মানুষ যারা স্রেফ জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে ঢাকায় এসেছিল, অসহায় ভঙ্গিতে তারা নারায়ণগঞ্জ ফেরার উপায় খুঁজছে। হঠাৎ সেখানে অসিতদার সাথে দেখা। উনি কোন পেশাগত কাজে আসেননি, এই দুর্যোগের মধ্যে এসেছিলেন কয়েকদিন পরের শাস্ত্রীয় সংগীত সম্মেলনে কয়েকজন শিল্পীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে! কোনরকমে একটা সিএনজি ভাড়া করে দুজনে ফেরার সময় জিজ্ঞেস করলাম কিসের লোভে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উনি এসব করতে যান? রসিকতা করে বললেন, “একটা লোভ তো আছেই। আগে সবাই আমাকে বলত ‘চাড়াল’ আর এখন বলে ‘কালচারাল’।” রসিকতা করে বললেও মনের ভেতর যে একটা ক্ষোভ জমা ছিল তা ঠিকই বুঝেছিলাম। জানি না ধর্মগত সংখ্যালঘুতার সুযোগ নিয়ে কেউ কখনো ওনাকে আঘাত দিয়েছিল কি না!

করোনা লকডাউনের শেষের দিকে একদিন দাদার বাসার নিচতলার ঘরে বসে অনেক গল্প হলো, চা খেলাম। কীভাবে ঘর থেকে বের না হয়েও বাজার সদাই করা যায় সেই টিপস দিলেন। এই লকডাউনের সুযোগে সময়ের অভাবে এডিট করতে না পারা বিগত কয়েক বছরের আয়োজিত সম্মেলনগুলোর জমে থাকা ফুটেজ প্রায় গুছিয়ে এনেছেন, সেটা বললেন। এটাই ছিল সুস্থ অবস্থায় দাদার সাথে আমার শেষ দেখা। কিছুদিন পরেই জানলাম দাদার ক্যান্সার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে ওনার ক্রমশ ম্রিয়মাণ চেহারা দেখতে দেখতে আর সরাসরি দেখতে যাওয়ার সাহস পাইনি। আমার মনের ভেতর যেই প্রাণবন্ত মানুষটার ছবি আঁকা আছে সেটা নষ্ট করার শক্তি যোগাড় করে উঠতে পারিনি। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়েছে। এই অবস্থাতেও কাজের কথা বলতেন, পরীক্ষণ হলের সাউন্ড সিস্টেমে একটা বেজ অ্যাম্প দরকার বলে নিজে গিয়ে মেয়রের সাথে কথা বলতে চাইলেন একদিন। মাস তিনেক আগে ওনাকে বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে মেয়রের সাথে কথা বলে আবার বাসায় নামিয়ে দেওয়ার পর ভাবলাম, লোকটা এত মানসিক জোর পান কোথায়!

এরপর বিভিন্নজন মারফত ক্রমাগত অসিতদার স্বাস্থ্যের অবনতির কথা শুনি, যতই শুনি ততই ওনার মুখোমুখি হওয়ার সাহস তলানীতে যেতে থাকে। সোমবার বিকালে ভবানীদা আর অমিতাভ মামার কাছে শুনলাম অসিতদার অন্তিম সময় এসে গেছে। রাত ১১টার দিকে তনু ফোনে জানালো ওরা সবাই দাদার বাসায়, যখন-তখন অবস্থা।
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা রওনা দিয়েছি, বাসেই ভবানীদার ফোন পেলাম, অসিতদা আর নেই। ইচ্ছা থাকলেও আমি ফিরে আসতে পারছিলাম না। কারণ, ভিসার ব্যাপারে অ্যাম্বাসিতে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে! পরে আবার ভবানীদা ফোন করে জানতে চাইলেন শ্মশানের ঠিক কোন জায়গায় অসিতদাকে সমাধিস্থ করা যায়, দাদার ইচ্ছে অনুযায়ী দাহ না করে ওনাকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাসদাইর মহাশ্মশানের নতুন মাস্টার প্ল্যানের কাজ করা হচ্ছে আমার অফিস থেকে, তাই পরামর্শ করা যেন এমন জায়গায় সমাধিটা হয় যেখানে পরবর্তীতে আর হাত না পড়ে।

অনেক কথাই থেকে থেকে মনে পড়ে যাচ্ছে। একবার সুনামগঞ্জ থেকে আমরা দুজন বাসে করে ফিরছিলাম, সারারাত কারোই ঘুম হলো না। কিছুক্ষণ পরপর এটা সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। একসময় কী ভেবে খুব আফসোস করেই বললেন, “দিনশেষে একজন মিডিওকার হিসেবেই একটা জীবন পার করে দিলাম!” অসিতদা মোটেও মিডিওকার ছিলেন না, বরং নিজেদের অযোগ্যতা আর সীমাবদ্ধতা ঢাকতে গিয়ে আমরাই একজন অসিত কুমারকে নেহাত মিডিওকারের তকমা লাগানোর চেষ্টা করেছি বারবার!

অসিত কুমারের সাথে লেখক

পুনশ্চঃ আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম দাদার সাথে আমার কোন ছবি নেই! কেন যেন প্রিয়জনদের সাথে আমার ছবি তোলা হয়ে ওঠে না। অনেক খুঁজে এই একটামাত্র ছবি পেলাম, এটারও রেজুলেশনের অবস্থা খুবই করুণ। ছবি থাক বা না থাক, অসিতদা বেঁচে থাকবেন আমার হৃদয়ে, আমার স্বত্বায়।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View