সদ্য প্রয়াত নির্মাতা, অভিনেতা ও স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী গাজী মাহতাব হাসানকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেল চারটায় শাহবাগের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘হাসান স্মরণ’। যেখানে উপস্থিত ছিলেন এই চলচ্চিত্র কর্মীর বন্ধু, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা।
স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা হাসানের চলচ্চিত্র যাপন ও ভাবনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
অনুষ্ঠানে নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ বলেন, হাসান ছকে বাঁধা মানুষ ছিলেন না। তার জীবনযাত্রায় ছিলো বোহেমিয়ানিজম, চরিত্রে ছিলো প্রতিবাদ। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনে হাসান আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে।
‘মেঘমল্লার’ খ্যাত নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন বলেন, ত্রিশ বছরের বেশি সময় থেকে হাসানের সাথে আমার পরিচয়। রাশিয়া থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে দেশে ফিরে আসে। নিস্বাঃর্থ একজন মানুষ ছিলো হাসান। আমার ‘মেঘমল্লার’ সিনেমার সময় সার্বক্ষণিক তাকে পাশে পেয়েছি। এমনকি সিনেমার লোকেশন খুঁজে পেতে সে আমাকে সব ধরনের সহায়তা করেছে। সব জায়গা সম্পর্কে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা ছিলো। তার এমন অকালে চলে যাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
‘খাঁচা’ নির্মাতা আকরাম খান বলেন, নব্বইয়ের শুরুর দিকে হাসানের সাথে আমার পরিচয়। সে আমার বয়সে বড়। কিন্তু তার সাথে মিশতে মিশতে খুব অল্প সময়ে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সম্পর্ক নেমে আসে তুই-তুকারিতে। তাকে নিয়ে আমাদের কৌতূহল বাড়ে, যখন জানতে পারি- হাসান রাশিয়া গিয়েছিলো ফিল্মে পড়াশোনা করতে, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ না করেই দেশে চলে আসে। সে যখন রাশিয়া নিয়ে কথা বলতো, তখন আমি হা করে শুনতাম।
আলোচিত সিনেমা ‘চন্দ্রবতী কথা’র নির্মাতা এন রাশেদ চৌধুরী হাসান স্মরণে বলেন, অনেক দিক থেকে হাসান ছিলেন আমাদের অগ্রগামী। আমাদের সময়ে দেশে এমন কোনো ইনিডিপেন্ডেট ফিল্ম নাই, যেটা সে দেখে নাই। তরুণদের সাথে তার যোগাযোগও বিস্মিত করার মতো। আমার সিনেমা ‘চন্দ্রাবতী কথা’র সাথে হাসান খুব দারুণভাবে সম্পৃক্ত ছিলো। সিনেমাটি করার আগে সমস্ত গবেষণামূলক কাজগুলো আমি আর হাসান মিলেই করেছি। তার অকাল প্রয়াণ মেনে নেয়া সত্যিই আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।
দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন হাসান। নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে হতো তাকে। ১৩ আগস্ট দুপুরে স্ট্রোক করলে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন বিকেলেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বেশকিছু শর্টফিল্ম ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন গাজী মাহতাব হাসান। সর্বশেষ তার নির্মিত ‘সৌল সিঙ্গার’ শর্টফিল্মটি দেশ বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শীত হয়। এছাড়াও দেশ বিদেশের বেশকিছু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সাথে জড়িয়ে আছে তার নাম। এরমধ্যে ডেনমার্কের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য হিউম্যান স্কেল’ এ বাংলাদেশ অংশে প্রোডাকশন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন।
নির্মাণ সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি প্রায় নিয়মিত অভিনয় করতেন গাজী মাহতাব হাসান। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলোচিত সিনেমা ‘অলাতচক্র’-তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় আশ্রিত থাকা নরেন বিশ্বাসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। অভিনয় করেছেন জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতীর কথা’ সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে। এছাড়া তিনি রাওয়ান সায়েমার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ডেড এন্ড’, দেবাশীষ বিশ্বাসের মুক্তি প্রতীক্ষিত সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘মুকুলের যাদুর ঘোড়া’য় অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সেই আশির দশক থেকে। ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রয়াত মুহম্মদ খসরুর শিষ্য ছিলেন।