পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম সম্পর্কের নাম স্বামী-স্ত্রী। হযরত আদম আ. ও হযরত হাওয়া আ. এর মাধ্যমে শুরু হওয়া এই সম্পর্কের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মানবজাতি বিস্তার লাভ করেছে। পবিত্রতম স্বর্গীয় এই সম্পর্কটা সুন্দর রাখতে প্রয়োজন যত্নের। পারস্পরিক বোঝাপড়া ঠিকঠাক না হলে স্বর্গীয় সম্পর্ক পরিণত হয় নরকে।
ইসলামও স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি জোর দিয়েছে। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তা’আলা বলেন: আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে। সূরা বাকারা, ২/২২৮
বিদায় হজ্বের ভাষণে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জেনে রাখবে, নিশ্চয়ই তোমাদের নারীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, আর তোমাদের উপরও তোমাদের নারীদের অধিকার রয়েছে। জামিউত তিরমিজি, ১১৬৩
পারস্পরিক সম্পর্ককে সুন্দর ও সুদৃঢ় রাখার জন্য বিশ্বস্ততা, ভালোবাসা ও দয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে ও সংসার দুটো মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক। তাই কিছু বিষয় দু’জনের মেনে চলাটা প্রয়োজন। একপাক্ষিক ত্যাগ সাময়িক সম্পর্ক এগুতে সাহায্য করলেও সম্পর্কের স্থায়ীকরণের জন্য দরকার দু’পক্ষের বিশ্বস্ততা, ভালোবাসা ও দয়া।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ককে মজবুত রাখতে প্রথম দায়িত্ব হলো বিশ্বস্ততা ধরে রাখা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন: তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ, আর তোমরা তাদের পোশাকস্বরূপ। সুরা বাকারা ২/১৮৭।
এতটা গভীর এই সম্পর্কে বিশ্বাস থাকাটা জরুরি। বিশ্বাসবিহীন সম্পর্ক বেশিদিন এগুবে না। তাই এই সম্পর্কের প্রথম ভিত্তিই হলো বিশ্বাস। স্বামী স্ত্রীর একে অপরের প্রতি আমানতদারীতা বজায় রাখা আবশ্যক। স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রী নিজের সম্ভ্রম ও স্বামীর সম্পদের সংরক্ষণ করা একান্ত কর্তব্য। অপরদিকে স্বামীরও উচিত নিজের আমানতদারিতা বজায় রাখা। এভাবে পারস্পরিক বিশ্বাস বজায় রাখতে পারলে সংসার হবে শান্তির ও সুখকর।
ভালোবাসা হলো সাংসারিক জীবনে বেঁচে থাকার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ টপিক। কোটি কোটি টাকার সম্পদ, সৌন্দর্য্য, ক্ষমতা সবই বৃথা যদি সাংসারিক সম্পর্কে ভালোবাসার কমতি থাকে। আর ভালোবাসায় পূর্ণ একটি সংসারে হাজার অভাবেও শান্তি বিরাজ করে। বিবাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো আল্লাহ প্রদত্ত ভালোবাসা। তাই, স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে থাকা চাই নির্ভেজাল ভালোবাসা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন: আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জোড়া; যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। সূরা রূম, আয়াত: ৩০/২১।
রাসুলুল্লাহ স. নিজ স্ত্রীদের প্রতি ছিলেন আন্তরিক। হযরত খাদিজা রা. এর জীবদ্দশায় রাসুল সা. অন্য কোনো বিবাহ করেননি। এমনকি খাদিজা রা. এর ইন্তিকালের পরেও তিনি বিভিন্ন সময়ে উনার স্মৃতিচারণ করতেন এবং খাদিজা রা. এর বান্ধবীদের জন্যেও তিনি উপহার পাঠাতেন।
আয়েশা রা. এর সাথে রাসুল সা. প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় মেতে উঠতেন। আয়েশা রা. গ্লাসের যেদিক থেকে দুধ পান করতেন, রাসুল সা. ঠিক সেখানেই মুখ লাগিয়ে দুধ পান করতেন। দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাসুল সা. নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতেন। যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়।
দয়া যেকোন সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দয়া ছাড়া কোনো সম্পর্ককে স্থায়ী করা যায় না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসার পাশাপাশি জীবনের কঠিন পথচলায় একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা ও দয়া প্রদর্শন করা জরুরি। সুখের ভাগাভাগীর মতো একে অপরের দুঃখে পাশে থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। একে অপরের যেকোন মানবীয় ভুল ক্ষমা করার মানসিকতা লালন করতে হবে।
স্বামীর সামর্থ্য, সক্ষমতা বুঝে তার প্রতি সামর্থ্যের বাহিরে আবদার না করাটা স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর উপর দয়া। আবার স্ত্রীর কাজকর্ম, রান্না কিংবা চলাফেরার নানাবিধ ত্রুটি মেনে নেওয়া স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য এহসান। এই ত্যাগ ও দয়া সম্পর্ককে করে সুন্দর ও কার্যকরী। আল্লাহ তা’আলা বলেন: যে দয়া করবে না, তার প্রতিও দয়া করা হবে না।
তাই একে অপরের জন্য রহমত হয়ে সহযোগিতাপূর্ণ জীবন কাটাতে পারলে জীবন হবে পুষ্পশয্যার মতোই।