সম্প্রতি ভারতে সমলিঙ্গ সম্পর্ক বৈধতা পেলেও সমলিঙ্গ বিবাহের বিপক্ষে রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
আজ মঙ্গলবার ১৭ অক্টোবর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই রায় ঘোষণা করে। সমলিঙ্গ বিবাহ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দুই সমকামী যুগলের দায়ের করা দুইটি মামলা সম্পর্কে অবহিত হয়। একটি হল, সুপ্রিয় চক্রবর্তী এবং অভয় ডাং এর দায়ের করা মামলা যারা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করেন । তারাই দেশের প্রথম সমকামী যুবক, যারা বিয়ে করেছেন। এখন বিশেষ বিবাহ আইনের স্বীকৃতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই যুগল। আরেক যুগল হল, দীর্ঘ ১৭ বছরের সম্পর্কের পর বিয়ে করা পার্থ ফিরোজ মলহোত্র এবং উদয় রাজ। এই যুগল জানিয়েছেন, তারা দুই শিশুকে লালন-পালন করছেন। কিন্তু যেহেতু তাদের বিয়ের কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই, তাই আইনত শিশুদের অভিভাবক হতে পারছেন না তারা।
কেন্দ্রকে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে সমলিঙ্গ বিবাহের বিষয়ে অগ্রসর হতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সমলিঙ্গ যুগলের রেশন কার্ড, পেনশন, উত্তরাধিকার সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ওই কমিটির মাধ্যমে।
সমলিঙ্গে বিয়ে নিয়ে রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিবাহ বিষয়টি কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে বিবর্তন আসে। ব্যক্তিগত স্তরের যে কোনও কাজকে আইনের বাহিরে রাখা উচিত নয়। বিবাহ বর্তমানে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, আইন না থাকলে তা সম্ভব হত না।
সমকামী কিংবা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কোনও মানুষকে হেনস্থা করা যাবে না, এমনটাই মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানান, এই সম্প্রদায়ের কাউকে তাদের যৌন পরিচয় জানার জন্য থানায় তলব করা যাবে না।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল সমলিঙ্গ যুগলের সন্তান দত্তক নেয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, অবিবাহিত দম্পতি, সমলিঙ্গ দম্পতিও সন্তান দত্তক নিতে পারেন। তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন বিচারপতি কউলও।
বিচারপতি কউল বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই সমলিঙ্গ সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শুধু যৌন ক্রিয়াকলাপের জন্য নয়। মানসিক, আবেগপূর্ণ সম্পর্কেরও প্রতিফলন ঘটে তাতে। তাই আমি এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত। কিন্তু বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি এস নরসিংহ এ বিষয়ে সম্মতি জানাননি।
বিচারপতি ভট্ট তার রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে বলেন, কোনও বিয়ের স্বীকৃতি আইন ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিয়ের বিষয়ে আইন বিচারব্যবস্থা আনতে পারে না। তা সংবিধানসম্মত নয়। তিনি স্বীকার করেন, প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গী নির্বাচন এবং তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার অধিকার রয়েছে।
বিচারপতি নরসিংহ বলেন, বিয়ের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া সাংবিধানিকভাবে অনুমোদনযোগ্য নয়। তিনি সমলিঙ্গ যুগলের সন্তান দত্তক নেওয়ার বিষয়ে বিচারপতি ভট্টের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালাচ্ছি। ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাব। এটা গণতন্ত্র। তবে আমরা আমাদের নাগরিকদের সাধারণ অধিকারটুকু দিতে পারছি না।
উল্লেখ্য, টানা ১০ দিন শুনানি পর্বের শেষে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় সংরক্ষিত রেখেছিল। মঙ্গলবার শেষ হয়েছে সেই সময়সীমা। সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্য সদস্যেরা হলেন, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি এস নরসিংহ।