ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির মধ্যে রোজা অন্যতম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য দীর্ঘ এক মাস রমজানের রোজাকে ফরজ করেছেন। রোজা আত্মশুদ্ধি অর্জনের অন্যতম মাধ্যমও বটে। কিন্তু কিছু কারণে আমাদের রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে এবং রোজার প্রকৃত সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে পারি।
আসুন জেনে নিই – কী কী কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়:
১. রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভঙ্গ হবে এবং কাফফারা ওয়াজিব হবে।
২. কুলি করার সময় পেটের ভেতর পানি প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে।
৩.নাকে ও কানে কোনো তরল পদার্থ কিংবা ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে।
৪. অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি আসলে অথবা তা পুনরায় গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়।
৫. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্বে ইফতার করলে রোজা ভঙ্গ হবে।
৬. ভুলক্রমে আহার করায় রোজা নষ্ট হয়েছে ভেবে পুনরায় আহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে।
৭. রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত হতে জিহ্বা বা হাত দ্বারা ছোলা পরিমাণ কোন বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে।
৮. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে গলার ভেতর চলে গেলে এবং রক্তের স্বাদ অনুভব হলে রোজা ভঙ্গ হবে।
৯. অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে।
১০. যৌন উত্তেজনার সাথে স্ত্রীকে চুম্বনে কিংবা স্পর্শের কারণে বীর্যপাত ঘটলে রোজা ভঙ্গ হবে।
১১. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
১১. হুক্কা, তামাক, বিড়ি, সিগারেট, ধুমপান করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
১২. গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে রোজা ভঙ্গ হয়।
১৩. প্রস্রাব বা পায়ুপথ দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয়।
১৪. রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে রোজা ভঙ্গ হবে।
১৫. সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার পর সময় বাকি আছে ভেবে সাহরি করলে রোজা ভঙ্গ হবে।
(বাহারে শরিয়ত, ফতোয়ায়ে আলমগীরি, রদ্দুল মুহতার)
উপরে উল্লেখিত কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা ওয়াজিব হবে। আর এমনিতে কোনো কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে শুধু কাযা আদায় করা আবশ্যক হবে। এছাড়াও কিছু কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না তবে মাকরুহ হয় যার ফলে রোজার পরিপূর্ণ সাওয়াব লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আর তা হলো-
১.গীবত, পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজ, অনর্থক কথাবার্তা, মন্দ আচরণ করা, অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি এমনিতে গুনাহের কাজ। আর রোজা অবস্থায় এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।
২.অপ্রয়োজনে কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা মাকরুহ হবে।
৩. রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দেওয়া, জড়িয়ে ধরে শরীর স্পর্শ করলে রোজা মাকরুহ হবে।
৪. গোসল ও অজু করার সময় নাকে অতিরিক্ত পানি দিলে রোজা মাকরুহ হবে।
৫. থুথু মুখে জমিয়ে গিলে ফেললে রোজা মাকরুহ হবে।
৬. অকারণে খাদ্য নয় এমন কিছু মুখে নিয়ে চিবাতে থাকলে রোজা মাকরুহ হবে।
৭. রোজা অবস্থায় সারা দিন শরীর নাপাক রাখলেও রোজা মাকরুহ হবে।
৮.যৌন উত্তেজক কিছু দেখা বা শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতেও রোজা মাকরুহ হয়।
৯. নাচ, গান, সিনেমা দেখলেও রোজা মাকরুহ হয়।(বাহারে শরিয়ত, দুররুল মুখতার, ফতোয়ায়ে আলমগীরি)
শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকলেই রোজা পালন হয় না। বরং রোজা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন জানাও আবশ্যক। তবেই আমাদের রোজা যথাযথভাবে আদায় হবে। তাই আমাদের উচিত রোজা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা।