বল দখলের লড়াই, লক্ষ্যে শট নেয়া, রিয়াল মাদ্রিদের তুলনায় যোজন এগিয়ে থাকল লিভারপুল। শুধু কাজের কাজ গোলটাই আদায় করতে পারল না। সালাহ-মানেদের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে থাকলেন গোলরক্ষক থিবো কোর্ত্তোয়া। শেষে কাজের কাজটা করে দিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ব্রাজিলিয়ানের একমাত্র গোলে নিজেদের ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তুলল কার্লো আনচেলত্তির মাদ্রিদ রাজারা।
শনিবার রাতে স্তাদে দে ফ্রান্স স্টেডিয়ামে শিরোপার মঞ্চে লিভারপুলকে ১-০তে হারানোর পথে ৫৯ মিনিটে মহামূল্যবান গোলটি আনেন ভিনিসিয়াস।
সমর্থকদের স্টেডিয়ামে ঢুকতে সমস্যার কারণে ৩৬ মিনিট দেরিতে শুরু হয় ফাইনাল। প্রথমার্ধ থাকে গোলশূন্য। রিয়ালের জালমুখে ক্রমাগত আক্রমণ করে যায় লিভারপুল, কিন্তু গোলের দেখা পায়নি। রিয়াল একবার জাল খুঁজে পেলেও অফসাইডে বাতিল হয় যায় সেটি।
প্যারিসে ম্যাচের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে রিয়ালের উপর চেপে বসে লিভারপুল। ১৬ মিনিটের মাথায় বক্সের ভেতরে থাকা ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড নিচু ক্রসে বল মোহাম্মেদ সালাহর দিকে বাড়ান। সালাহ চতুর শট নিলেও ঠেকিয়ে দেন ব্লাঙ্কোস গোলরক্ষক কোর্ত্তোয়া।
পরের মিনিটে আবারও রিয়ালের ত্রাতা কোর্ত্তোয়া। অ্যান্ড্রু রবার্টসনের অ্যাসিস্টে ডান পায়ের দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন থিয়াগো। বল চলে যায় গোলরক্ষকের গ্লাভসে। ম্যাচের ১৮ মিনিটে সাদিও মানের থেকে বল পেয়ে সালাহর বাঁ-পায়ের শটেও দেয়াল হন সেই কোর্ত্তোয়াই।
এরপর ২১ মিনিটে কোর্ত্তোয়া রিয়ালকে রীতিমতো মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করেন। থিয়াগোর পাসে বল নিয়ে ডান পায়ের বুলেট শটে ভীতি ছড়িয়েছিলেন মানে। কোনরকমে ঠেকালেও বিপদ কাটেনি। বল লাগে বারপোস্টে। পরে ঝাঁপিয়ে পড়ে রিয়ালকে বিপদমুক্ত করেন কোর্ত্তোয়া।
ম্যাচের ৩৪ মিনিটে আলেক্সান্ডার আর্নল্ডের ক্রসে বল পেয়ে হেড করেছিলেন সালাহ। এবারও বল সরাসরি চলে যায় কোর্ত্তোয়ার গ্লাভসে।
ধারার বিপরীতে খেলার ৪৩ মিনিটে বেনজেমা গোল করে বসেন, সেটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। ভালভার্দের লং পাসে বল নিয়ন্ত্রণে নেন বেনজেমা। ইব্রাহিমা কন্তে এবং অলরেড গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার বলের দিকে ছুটে যান। ফ্যাবিনহোর হাঁটুতে লাগার পর বল চলে যায় বেনজেমার দিকে, সেটি জালে জড়িয়ে দেন ফ্রেঞ্চম্যান। কিন্তু অফসাইডে থাকায় রেফারি গোল বাতিল করে দেন। ভিএআরের সাহায্য নিয়েও রিয়াল সেটিকে গোল বানাতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেও আক্রমণ শানাতে থাকে ক্লপের শিষ্যরা। ৪৭ মিনিটে লুইস ডিয়াজকে উদ্দেশ্যে ক্রস করেন আলেক্সান্ডার আর্নল্ড। হেডে দুর্দান্তভাবে তা প্রতিহত করেন দানি কারভাহাল।
ম্যাচের ৫৩ মিনিট সালাহর আরেকটি দূরপাল্লার শটের সামনে শরীর শূন্যে ভাসিয়ে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্তভাবে রিয়ালকে ম্যাচে রাখেন কোর্ত্তোয়া।
খানিক পর খেলার ধারার বিপরীতে গোল পেয়ে যায় রিয়াল। ফেদেরিকো ভালভার্দের ডিফেন্সচেরা পাসে ৫৯ মিনিটে জাল খুঁজে নেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বাঁ-প্রান্ত থেকে নেয়া ২১ বর্ষী ব্রাজিলিয়ানের ডান পায়ের কোনাকুনি শট জালের দিশা পায়। এবারের আসরে তার চতুর্থ গোল।
পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি অলরেডরা। তবে চীনের প্রাচীর হয়ে ওঠা কোর্ত্তোয়ার গেরোও খুলতে পারছিল না। সেসময় জর্ডান হেন্ডারসনের পাসে বাঁ-পায়ে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন সালাহ, এবারও রিয়ালের ত্রাতা সেই বেলজিয়ান গোলরক্ষকই।
ম্যাচের ৬৫ মিনিটে ডিয়াজের জায়গায় ডিয়েগো জোতাকে নামান ক্লপ। চার মিনিট পর জোতার হেডে বল পেয়ে সালাহ শট নিয়েছিলেন, আবারও দেয়াল হন কোর্ত্তোয়া। গোল পেয়ে ততক্ষণে উজ্জীবিত রিয়াল। পাল্টা আক্রমণে অলরেড বক্স কাঁপাতে শুরু করেছে।
লিভারপুলও আক্রমণ গড়তে থাকে। ৮০ মিনিটে জোতার শট ঠেকান কোর্ত্তোয়া। দুই মিনিট পর বক্সে ঢুকে পড়া সালাহর শট দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেন রিয়াল গোলরক্ষক।
সময় যত শেষেরদিকে গড়াতে থাকে, লিভারপুল খেলোয়াড়রা হারাতে থাকেন মেজাজ, আর বেনজেমারা শানাতে থাকেন আক্রমণ। শেষপর্যন্ত ব্যবধান আর বাড়েনি। দাপুটে মেজাজে ম্যাচ ফিনিশিং বাঁশি পর্যন্ত টেনে উল্লাসে মেতে ওঠে মাদ্রিদ রাজারা।