জমি কেনার কথা বলে ওষুধ বিক্রেতা আলমগীরকে অপহরণ করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর শরীরের পেছনের অংশে গরম তেল ঢেলে দেয়। শরীরের ওই স্থানসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে আয়রন মেশিন দিয়ে ছেঁকা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া তুলে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতন করতে থাকে এবং দাবিকৃত মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে পরিবার টাকা জোগাড় করতে না পেরে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে গাজীপুর থেকে অপহরণ করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ছনটেকে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতনকারী চক্রের ৮ জনকে গ্রেপ্তার ও অপহৃত ভুক্তভোগী মো. আলমগীরকে (৪২) উদ্ধার করে র্যাব-১০।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সিয়াম আল জেরিন তালুকদার (৩৩), মো। রাসেল শেখ ওরফে মিঠু (৩৩), মো. শহিদুল ইসলাম (৩৭), প্রণব নারায়ন ভৌমিক (৫০), মো. আলমগীর (৪২), আ. রব খান (৭৮), সৈয়দা জান্নাত আরা উর্মি (২৭), ও ইসরাত জাহান সায়লা (২৯)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, ৩টি চাকু, ১ হাতুড়ি, ১টি আয়রন মেশিন, ১টি লাঠি, ১টি বেলনা, ১টি বেল্ট, ১টি হুক্কা ও ১৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার ২ মে দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চান্দুরা এলাকায় বসবাসকারী আলমগীর পেশায় একজন ওষুধ বিক্রেতা। গত ২৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে তিনি জমি কেনার জন্য কালিয়াকৈর থানাধীন চান্দুরা চেীরাস্তা উদ্দেশে যান। পরে রাত ১১টার দিকে আলমগীর বাড়িতে ফিরে না আসায় তার পরিবারের লোকজন তার মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পায়। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজি করে কোথাও তার কোন সন্ধান না পেয়ে তার পরিবারের লোকজন চিন্তিত হয়ে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরের দিন ৩০ এপ্রিল সকাল ১১টায় আলমগীরের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানায়, তারা আলমগীরকে অপরহণ করেছে এবং আলমগীরের নির্যাতনের বিভিন্ন চিৎকার শুনিয়ে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করে।
দাবি করা টাকা না পেলে তারা আলমগীরকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে। আলমগীরের পরিবারের লোকজন অপহরণকারীদের দাবি করা টাকা জোগাড় করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করার জন্য র্যাবের সঙ্গে যোগযোগ করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন বলেন, ১ মে র্যাব-১০ এর আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন বউবাজার ছনটেক এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে অপহৃত ভিকটিম আলমগীরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী চক্রের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জানায়, গ্রেপ্তার অপহরণকারী চক্রটি ভুক্তভোগী আলমগীরের কাছে জমি বিক্রির কথা বলে এখানে ওখানে বলে তাকে নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাতে থাকে। বিকেল ৪টার দিকে তাদের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গিয়ে খেলনা পিস্তল দিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখায়। পরে সিএনজিতে করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন ছনটেক বউবাজার এলাকায় তাদের ডেরায় নিয়ে আশে।
সেখানে নিয়ে আলমগীরকে সবাই মিলে লাঠি, বেলনা ও বেল্ট দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর শরীরের পেছনের অংশে গরম তেল ঢেলে দেয়। পরবর্তীতে শরীরের ওই স্থানসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে আয়রন মেশিন দিয়ে ছেঁকা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া তুলে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতন করতে থাকে এবং দাবি করা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অপহরণকারী একটি চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চান্দুরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি কেনার বাহানাসহ বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে বিত্তশালী বিভিন্ন ব্যক্তিদের ডেকে এনে খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাদেরকে অপহরণ করত। পরে তারা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন ছনটেকসহ তাদের বিভিন্ন ডেরায় নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করত।
নির্যাতনের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠাতো। পরে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করত। গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম ছোটন ইতোপূর্বেও ভুয়া পুলিশের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।