ফ্রান্সের বিপক্ষে সমানে সমান লড়াই চালালো মরক্কো। এমবাপে-জিরুদদের আক্রমণ সামলে ত্রাস ছড়াল ফরাসি রক্ষণ দুর্গেও। কখনও হুগো লরিস কখনও ফিনিশিংয়ের অভাব, তাতে জালের দেখা শুধু মিলল না। বিপরীতে, খেলার পাঁচ মিনিটে এগিয়ে যাওয়া ফ্রান্স দ্বিতীয়ার্ধে জালের দেখা পেল আরও একবার। তাতে আর্জেন্টিনার পর ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল দিদিয়ের দেশমের দল।
বুধবার রাতে আল বাইত স্টেডিয়ামে আফ্রিকার সিংহ খ্যাত মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট কেটেছে ফ্রান্স। রোববার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে লড়বে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটি। লুসেইল স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায়।
শেষ চারের লড়াইয়ে বল দখলে আধিপত্য দেখিয়েছে আফ্রিকার দেশটি। ৬১ শতাংশ বল পায়ে রেখে সাতটি শট নিয়েছে, যার লক্ষ্যে ছিল দুটি। বিপরীতে নয়টি শটের তিনটি গোলমুখে রেখে দুটি গোল বের করে নেন থিও হের্নান্দেজ ও রান্ডাল কোলো মুয়ানি।
মঙ্গলবার লুসেইল স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির দলের কাছে হেরে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণের ম্যাচে লড়বে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শিষ্যরা। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত নয়টায় খেলা।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার রেকর্ড গড়ার দিনে শুরুর পাঁচ মিনিটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। রাফায়েল ভারানের থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন গ্রিজম্যান। তার পাস ধরে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি এমবাপে। তৈরি হয় জটলা। ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকারের দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে বল চলে যায় বাঁ-দিকে থিও হের্নান্দেজের কাছে। ফাঁকা জায়গায় কাঁধ সমান উঁচু বলে লাফিয়ে অ্যাক্রোবেটিক শটে গোলটি আনেন রক্ষণের তারকা।
পিছিয়ে পড়া মরক্কো অবশ্য দমে যায়নি। পাঁচ মিনিট পরই সমতা টানতে পারতেন হাকিমিরা। উনাহির দূরপাল্লার জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন ফ্রান্স গোলরক্ষক হুগো লরিস। পরের দশ মিনিটেও গোলপোস্টের নিচে দারুণ কাজ করেন ফরাসি অধিনায়ক।
ম্যাচের ৩৬ মিনিটে দারুণ দুটি সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেনি ফ্রান্স। শুয়ামেনির পাস বক্সে পেয়ে এমবাপের শট রুখে দেন আশরাফ হাকিমি। বল ফের চলে যায় শুয়ামেনির পায়েই। তিনি এবার খুঁজে নেন বক্সে অরক্ষিত অলিভিয়ের জিরুদকে। তিনি তাড়াহুড়া করে উড়িয়ে মেরে নষ্ট করেন বড় সুযোগ।
বিরতির আগের কয়েক মিনিটে প্রবল চাপ তৈরি করে মরক্কো। ৪৫ মিনিটে দুর্ভাগ্য বাধা না হয়ে দাঁড়ালে গোলও পেতে পারত অ্যাটলাসের সিংহরা। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল ডিফেন্ডাররা পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বক্সেই পেয়ে যান জাওয়াদ। বাইসাইকেল কিক পোস্টে লাগলে এগিয়ে থাকার স্বস্তিতে বিরতিতে যায় ফরাসিরা।
দ্বিতীয়ার্ধে বড় কিছু সুযোগ তৈরি করে নেয় মরক্কো। বারবার দ্রুত আক্রমণে উঠে ত্রাস ছড়ায় ফরাসি দুর্গে। তাদের দুর্দান্ত সব আক্রমণ ভেস্তে যায়, জালের দেখা মেলে না। উল্টো ৭৯ মিনিটে আরেকবার গোল হজম করে তারা। বদলি নামা মুয়ানি এসেই গোল করেন। দুর্দান্ত কারিকুরিতে বক্সের ভেতর থেকে গোলে শট নিতে ব্যর্থ হলে এমবাপে বল বাড়ান সামনে। ফাঁকায় পেয়ে আসরে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে বোনোকে ভেদ করেন মুয়ানি।
নির্ধারিত সময়ের শেষ পর্যন্ত লড়ে যায় মরক্কো। তাদের পক্ষে ডেডলক ভাঙেনি। বড় জয় তুলে ফরাসিরা গড়ে নিল টানা ফাইনাল খেলার রেকর্ড। ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার বদলে এমবাপে-জিরুদদের সামনে এবার বিশ্ব মঞ্চে ৩৬ বছরের শিরোপাখরা কাটানোর স্বপ্নে বিভোর লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।