গ্রুপ স্টেজের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনা একবার পরাজিত হবে এমনটি বিশ্বের কোনো ফুটবল বিশেষজ্ঞই অনুমান করেননি। টানা ৩৬ ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সৌদি আরবকে পরাজিত করবে এমন সহজ ভাষ্যই ছিল সর্বত্র। তারাই কিনা গতকাল কাতারের লুসেইল আইকনিক স্টেডিয়াম নতুন এক রূপকথার গল্প লিখে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে। বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বড় অঘটন হিসেবেও চিহ্নিত করা হচ্ছে এই ম্যাচকে। আর্জেন্টিনার স্পোর্টস পত্রিকা ‘ওলে’ লিখেছে ‘আরব ট্র্যাপ’য়ে পড়ে আর্জেন্টিনাকে সর্বস্ব হারাতে হয়েছে। অথচ গ্রুপ স্টেজে জয়টা খুব প্রয়োজনীয় ছিল। চোখের সামনে থেকে জয় নিয়ে গেছে সৌদি আরব।
সৌদি আরবের ঐতিহাসিক এই জয়ে দুই গোলদাতা সালেহ আল-শেহরি (৪৮ মি.) এবং সেলিম আল-দাসারি (৫৩ মি.) পাশাপাশি অনবদ্য ভূমিকা রাখেন গোলরক্ষক মোহামেদ আল-ওয়াইস। চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপে সে কথাই বলছিলেন দেশের সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মাদ আসলাম। ম্যাচ সম্পর্কে মূল্যায়নে তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো কারণে হেরেছে আর্জেন্টিনা। তবে সৌদির গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল-ওয়াইস যেভাবে গোলপোস্টে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটাও মেন রাখতে হবে। আর্জেন্টিনা যখন অন্তত ম্যাচটি ড্র করার জন্য মরিয়া, তখন তার সবকিছু থমকে দিয়েছেন গোলরক্ষক। চমৎকার সব সেইভ করে খেলা নিজেদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে নিতে বড় ভূমিকা রাখেন।’
শেখ আসলাম আরও বলেন, ‘কাতারের আবহাওয়াও কাজে লাগিয়েছে সৌদি আরব। পরিচিত এই আবহাওয়াতে তাদের রানিং ছিল চমৎকার। আর কোনোভাবেই তারা আর্জেন্টিনাকে জায়গা করে দিচ্ছিল না। শট স্পেসে দৌড়াদৌড়ি হচ্ছিল বেশি। আবার অফসাইড ট্র্যাপেও পড়েছিল বারবার আর্জেন্টিনা। এসব বুঝতে বুঝতে সময় পেরিয়ে যায়। বিপরীতে কাজের কাজ করে ফেলে সৌদি আরব। এখন মেসিকে সামনের দুটা ম্যাচ নিয়েই সতর্ক থাকতে হবে। এ দুটি ম্যাচে জয় ছাড়া তাদের সামনে বিকল্প কিছু নেই।’
বিশ্বকাপ ফুটবলের আজ চতুর্থ দিনে মরক্কো-ক্রোয়েশিয়া (বিকেল ৪টা), জার্মানি-জাপান (সন্ধ্যা ৭টা), স্পেন-কোস্টারিকা (রাত ১০টা) এবং বেলজিয়াম-কানাডা (রাত ১টা) এই চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এই চারটি ম্যাচ নিয়ে সেই অর্থে আমাদের কারো মাঝে তেমন উন্মাদনা নেই। তবে আর্জেন্টিনার পরাজয়ের পর সবাই-ই আর কোনো অঘটন ঘটে কিনা সে বিষয়েই বড্ড উৎসুক হয়ে আছেন।
শেখ আসলাম বলছিলেন, ‘আজকে মরক্কো এবং ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচটি হবে সবচেয়ে উপভোগ্য। মরক্কো নিশ্চিত সৌদি মন্ত্রে সিক্ত হয়ে আছে। গত বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া রানার্সআপ দল। মন মাতানো ফুটবল উপহার দিয়েছিল। বরাবরই সংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী একটি দল তারা। দলের লুকা মদ্রিচ ফুল ফর্মে রয়েছেন। আবার ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও মরক্কোর থেকে অনেক এগিয়ে তারা। জয়ের সম্ভাবনা তাদেরই বেশি। কিন্তু বিপরীতে মরক্কোও ঐতিহ্যবাহী দল। এই দলে বেশ কয়েকজন ফুটবলার রয়েছে যারা সবকিছু এলোমেলো করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে ফ্রান্স লিগে খেলা আশরাফ হাকিমিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন আছে।’
জার্মান-জাপান ম্যাচে জার্মানকে অনেক এগিয়ে রাখছেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম। তার মতে, ‘চারবার বিজয়ী জার্মানির সাথে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আজ এশিয়ার দেশ জাপান খেলবে। জাপানের সক্ষমতা তেমন একটা নেই এই পাওয়ার হাউসের বিপক্ষে কিছু করার। জাপানের খেলোয়াড়দের শারীরিক গঠন আবার বরাবরই বড় সমস্যা। আর ইতিবাচক বিষয় হল মাঠে তারা সবসময় সক্রিয় থাকে। সহজে কাউকে ছাড়তে চায় না। এই পুঁজিটুকু নিয়ে তাদের লড়তে হবে।’
স্পেন এবং কোস্টারিকার ম্যাচে যথারীতি স্পেনকে অনেক অনেক এগিয়ে রাখছেন শেখ আসলাম। তার মতে, ‘স্পেন ব্যাকরণ মেনে পরিশীলিত ফুটবল খেলে। সেই ব্যাকরণের কাছে কোস্টারিকা যুতসই কিছু করতে পারবে না। ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটির কাছে জয় নয়, ড্র করার প্ল্যানটাই তাদের কাছে থাকবে মুখ্য।’
বেলজিয়াম এবং কানাডার মধ্যকার ম্যাচে বেলজিয়ামই ফেভারিট, এটি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন সাবেক তারকা ফুটবলার আসলাম। বেলজিয়াম সম্পর্কে তিনি অনেক উঁচু ধারণাও পোষণ করেন। তার মতে, ‘বেলজিয়াম শক্তিশালী টিম। গত বিশ্বকাপে তারা দেখিয়েছে নৈপুণ্য এবং সংগঠিত রূপ। বেলজিয়ামের গোলপোস্ট, মধ্যমাঠ এবং ফরোয়ার্ড নিঃসন্দেহে টনটনে। গোলপোস্টে অভিজ্ঞ কুলম্যান কোর্ত্তয়া, মধ্যমাঠে ডি ব্রুইন আর এডেন হ্যাজার্ড। আর এদের পেছনে রয়েছে কোচ রবের্তো মার্টিনেজ। বেলজিয়াম নিজের মতো করেই খেলবে। বিপরীতে তিনযুগ পর বিশ্বকাপ আসা কানাডা স্রেফ ‘আন্ডারডগ’। সবার ভাবনার বাইরে বিস্ময়কর কিছু হলে অন্যকথা। সবার মধ্যেইতো ইতিহাস গড়ার তাড়া থাকে। যেমনটি গতকাল করে দেখাল সৌদি আরব। আর এরকম কিছু না হলে বিশ্বকাপ জমে ওঠে না। বিশ্বকাপ যত জমে উঠবে ততই তার আনন্দ। মরক্কো, কানাডা তাই আজ সৌদি স্বপ্নে বিভার।’