চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

আজ আর্জেন্টিনাকেই বেশি এগিয়ে রাখছি: আবু ইউসুফ

সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ

ঢাকার ফুটবলে সত্তর ও আশির দশকজুড়ে মহাদাপটের সাথে খেলেন রক্ষণভাগের ফুটবলার মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। তবে আবাহনী ক্রীড়া চক্রেই (বর্তমানে আবাহনী ক্লাব লি.) তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়, উজ্জ্বল এবং আস্থাশীল।

খেলোয়াড়ি জীবনের উত্তপ্ত সময় কাটে এই ক্লাবেই। আবু ইউসুফ জাতীয় দলের হয়ে খেলেন অনেক অনেকদিন। ’৭৫ সালে মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত মারদেকা ফুটবল কাপের মধ্যে দিয়েই জাতীয় ফুটবল দলে তার অভিষেক ঘটেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি জাতীয় দলে ছিলেন অনিবার্য। রক্ষণভাগের এই অতন্দ্রপ্রহরী বরাবরই পরিশ্রমী, লড়াকু ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। এ বছর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারও (২০১৭ সালের জন্য মনোনীত) গ্রহণ করেন তিনি।

সাবেক এই বর্ষীয়ান ফুটবলারের কাছে বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই নিরন্তর এক আনন্দের উৎস। আর তাই বয়স হলেও বিশ্বকাপের আনন্দ, সুরভী নিতে ভুল করেন না। এই বয়সেও নিজেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের অনিঃশেষ উত্তেজনায় ভাসিয়ে দেন। আবার স্মৃতির অতলেও হারিয়ে যান- পুরনো বিশ্বকাপের কথা মনে করে।

আবু ইউসুফের মতে, চার বছর পরপর এই একমাত্র খেলা যা সারাবিশ্বের মানুষকে এক মঞ্চে নিয়ে আসে। কোটি কোটি সমর্থক আর ফুটবল অনুরাগীদের উন্মাতাল করে তোলে, আনন্দ-বেদনায় ভাসিয়ে দেয়। আবু ইউসুফ একসময় ব্রাজিলকেই বড় বেশি ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে হল্যান্ডের টোটাল ফুটবল ধারার প্রেমেও পড়ে যান। এখনও হল্যান্ডকে পছন্দ করেন- শুধু এই স্টাইলের কারণে।

ব্রাজিল বা হল্যান্ড নয়, আজ ৩০ নভেম্বর দৃষ্টি তার গ্রুপ স্টেজে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ডের জীবন-মরণ ম্যাচের দিকে। গ্রুপ ‘সি’র লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে তিনি আর্জেন্টিনাকেই এগিয়ে রাখছেন। আজ রাত ১টায় স্টেডিয়াম নাইন সেভেন ফোরে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে হলে আর্জেন্টিনার সামনে জয় ছাড়া বিকল্প অন্যকিছু নেই। পোল্যান্ড অবশ্য ড্র করতে পারলেও চলে যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে।

তবে এই গ্রুপে দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রবেশের ক্ষেত্রে মেক্সিকো এবং সৌদি আরবের মধ্যেকার ম্যাচের ফলাফলের হিসেব নিকেশও বড় ভূমিকা রাখবে। আর্জেন্টিনা বনাম পোল্যান্ড, এই ম্যাচে কোন দেশ জিতবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক তারকা ফুটবলার মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘জেতার সম্ভাবনা বেশি আর্জেন্টিনারই। এই ম্যাচের উত্তাপ আলাদা। সৌদি আরবের সাথে আর্জেন্টিনা হেরেছিল সেটি দিয়ে এই ম্যাচ মূল্যায়ন করলে হবে না। দুই ম্যাচ পর কিন্তু আর্জেন্টিনা নিজেকে বেশ বদলে ফেলেছে। আর যেহেতু তাদের সামনে জয় ছাড়া বিকল্প কিছুই নেই, সেহেতু প্রত্যাশিত ফলাফল তাদের পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আরও যোগ করেন, ‘এই ম্যাচে আর্জেন্টিনা হাতে রাখা তার সবধরনের কৌশল প্রয়োগ করবে। আজ আর্জেন্টিনা আরও বেশি উদ্ভাসিত হবে মনে হচ্ছে। মেসিকে আরও আক্রমণাত্মক দেখা যাবে মাঠে। বিপরীতে এটিও মনে রাখতে হবে পোল্যান্ড ইউরোপিয়ান দল। এই দলে আবার রবার্ট লেভান্ডোভস্কির মতো স্ট্রাইকার রয়েছে। তবে সবকিছু ভেঙেচুরে আর্জেন্টিনা বেরিয়ে আসার পথ-ই উন্মুক্ত করবে।’

ম্যাচের ফলাফলের আগে একটু প্রাক-ফলাফল দেখা যাক। এ যাবত আর্জেন্টিনা এবং পোল্যান্ড মোট এগারো বার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে আটটিই ছিল প্রীতি ম্যাচ। আর্জেন্টিনা জয়ী হয়েছে ছয়বার। পোল্যান্ড জয়ী হয়েছে তিনবার। দুবার ম্যাচ ড্র হয়েছে।

বিশ্বকাপে এ দুটি দল দুবার মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৭৪ সালের ১৫ জুন বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের সাথে প্রথম মুখোমুখি ম্যাচে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ড ৩-২ গোলে জয়লাভ করে। অবশ্য চার বছর পর প্রতিশোধ নেয় আর্জেন্টিনা। ’৭৮-এর ১৪ জুন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে পরাজিত করে।

মোহাম্মদ আবু ইউসুফ

আবু ইউসুফের মতে, পরিসংখ্যান কিছুই না। যারা খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তারাই জয়ী হবে। সেক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

অনেকগুলো বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেছেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। সেই নিরিখে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে আগের চেয়ে উত্তেজনা কম বলে মনে হয়েছে মোহাম্মদ আবু ইউসুফের। তার মতে, অন্যান্যবার বিশ্বকাপের ব্র্যান্ডিং-এর কারণে সর্বত্র যে আবেদন তৈরি হতো এবার কেনো জানি কম মনে হল। উত্তাপও বেশ কম। মাঠেও তিনি খুব বেশি উত্তেজনার ছটা পাননি।

মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘শুরু থেকে অনেকগুলো ম্যাচ দেখলাম। কিন্তু ম্যাচগুলো খুব মনে ভরাতে পারেনি। আগের যেকোনো সময় আমরা দেখেছি বিশ্বকাপের উত্তাপ ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এবার কিছুটা হলেও উত্তাপ-উত্তেজনা কম।’

তবে সাবেক এই তারকার কাছে এবার এশিয়ার টিমগুলোর খেলা খুব ভালো লেগেছে। তার মতে, ‘এশিয়ার খেলোয়াড়দের শুধু টিম স্পিরিটই বাড়েনি, তাদের শারীরিক এবং মানসিক ফিটনেস আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় খুবই ভালো। প্রতিটি খেলাতেই এশিয়ার টিমগুলো ভালো খেলেছে এবং সমান তালে খেলেছে। আর এ কারণে এশিয়ার টিমের কাছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা পরাজিত হয়েছে। এখন আর এশিয়ার টিমকে ‘আন্ডারডগ’ ভাবার কোনো অবকাশ নেই। এশিয়ানদের এই উত্থান চমকপ্রদ। ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ধারার ফুটবলের সাথে তারা টেকনিক্যাল এবং ট্যাকটিক্যাল ব্যবধান অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।’

সবশেষে আবু ইউসুফ বলেন, ‘আর্জেন্টিনা ও পোল্যান্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনা জয়ী হয়ে যোগ্যতম দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে আসুক। বিশ্বকাপ ফুটবল আরও জমে উঠুক। আমাদের আনন্দ-ভালোবাসায় আরও ঝংকৃত হোক বিশ্বকাপ। নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হোক। নতুন নতুন ধারা তৈরি হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব বদলে যাচ্ছে। তাই ফুটবলকেও সেই সনাতন ধারায় আটকে রাখা যাবে না। ভিএআর নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন, আপত্তি তুলছেন- কিন্তু এটি সময়ের চাহিদার রূপান্তর। এই পরিবর্তন, এই রূপান্তর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। ফুটবল বাণিজ্যও বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে ফুটবল হোক সবার নিটোল আনন্দের উৎস।’

বিজ্ঞাপন

Nil Joler Kabbo
Bellow Post-Green View