চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস: লুসেইল মহারণে আটকে চোখ

আকাশী-নীল নাকি কমলা, কোন রঙে রঙিন হবে কাতারের সর্বাধিক ধারণ ক্ষমতার লুসেইল স্টেডিয়াম— নির্দিষ্ট দল বাদে নিরেট ফুটবল সমর্থকদের কাছে জানতে চাইলেও হয়ত কোনো দলকেই এগিয়ে রাখতে চাইবেন না কেউ! বিশ্বমঞ্চে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি লড়াইয়ে যে কেউ কারও থেকে কম যায় না। এবার আরেকবার, আরেকটি নক আউট, ভার্জিল ফন ডাইক নাকি লিওনেল মেসি— জয় তুলে কে যাবেন সেমিফাইনালের দিকে এগিয়ে!

বিশ্বকাপের আরেকধাপ কাছে যেতে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত একটায় লড়বে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। বৈশ্বিক আসরে আগের পাঁচবারের দেখায় চারবার ছিল নক আউটের হাসি-কান্নার মঞ্চ। সমানে-সমান লড়ে দুটি করে জয় তুলেছে দুদলই। এবার ইউরোপ বা লাতিন, দুটি দেশের সামনেই শোধের ম্যাচ।

বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের শিরোপাখরা কাটানোর লক্ষ্যে ছুটে চলা আর্জেন্টিনা যেমন শক্তি-সামর্থ্যে পোক্ত, তেমনি প্রথম বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া নেদারল্যান্ডসও ছেড়ে কথা বলার নয়। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেই সমতাই ভাঙার মিশন।

শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে খাদের কিনারা থেকে বেঁচে ফিরেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল স্কালোনির দলের নক আউট যেন শুরু হয়েছে সৌদি আরবের সঙ্গে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে হারের পরই। শেষ পর্যন্ত যদিও ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে ওঠে আলবিসেলেস্তেরা। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এবার প্রত্যয়ী ডাচদের সামনে মেসির দল।

বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার হয়ে আসা আর্জেন্টিনা এখনও রয়েছে নিজেদের চেনা ট্র্যাকেই। স্কালোনির অধীনের দলটিকে ভারসাম্যপূর্ণ বলতে কারও দ্বিধা থাকার কথা নয়। মহাতারকা লিওনেল মেসি এবং অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াদের সেরা পারফরম্যান্সে কোপা আমেরিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা কার্যত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। এরসঙ্গে ডি পল, মার্টিনেজ, আলভারেজ ও গোলপোস্টের নিচে থাকা এমিলিয়ানো মার্টিনেজ শিরোপা জয়ের বড় প্রভাবক হতে পারেন।

আর্জেন্টিনাকে অন্যসবার মতো মেসি নির্ভর দল ভাবছেন না ডাচ দলটি। অধিনায়ক ভার্জিলের ভাষ্যমতে এমএলটেন থাকবেন চোখে চোখে। ডাচদের রক্ষণদূর্গ ভেদ করাও খুব একটা সহজ হবে না, জানেন স্বয়ং মেসিও। পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে আরেকটি নক আউটে পেয়ে নিজের কৌশল সাজিয়ে নিচ্ছে লুইস ফন গালের দল। শেষ সময়ের অনুশীলনে দুদলই প্রস্তুত হচ্ছে শেষ চারের পথে এগিয়ে যেতে।

সবশেষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ পড়ার পর টানা ১৯ ম্যাচে অপরাজিত আছে নেদারল্যান্ডস। গ্রুপপর্বের বাধাও পেরিয়েছে দাপটের সঙ্গে, শেষ ষোলোতে বিদায় করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার ৩৬ ম্যাচের অপরাজেয় পথচলা সৌদি আরব থামিয়ে দিলেও টানা তিন জয়ে পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছে মেসির দল।

বিশ্বকাপসহ সবমিলিয়ে মোট নয়বার সাক্ষাৎ হয়েছে এই দুদলের। সেখানে ৪ ম্যাচ জিতে এগিয়ে ডাচরা। তবুও ভবিষ্যদ্বাণী করা যাচ্ছে না কঠিন লড়াইয়ে কে হাসবেন শেষ হাসি, মেসি নাকি ভার্জিল?

ইতিহাসের খেরোখাতা ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৭৪ বিশ্বকাপে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। গ্রুপপর্বের ম্যাচে ৪-০ গোলে আলবিসেলেস্তেদের উড়িয়ে দেয় নেদারল্যান্ডস। পরের বিশ্বকাপেই হারের বদলা নেয় লাতিন দেশটি। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরে আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে শেষ হলে অতিরিক্ত সময়ে ডাচদের ৩-১এ হারিয়ে দেয় আর্জেন্টিনা।

ক্ষোভ বা বদলার মঞ্চ তখন থেকেই প্রস্তুত। এরপর আরও দুবার হাসি-কান্নায় শেষ হয় দুদলের লড়াই। প্রথমবার ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে, কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় নেদারল্যান্ডস। দ্বিতীয়বার ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য হলে টাইব্রেকারে মেসিদের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল নেদারল্যান্ডসের। ৪-২ ব্যবধানে ডাচদের হারিয়ে সেবার মেসির দল ফাইনালে উঠলেও জার্মানির কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়। ২০০৬ সালের গ্রুপপর্বের অন্য ম্যাচটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগিতে থেমেছিল লড়াই।

আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য একাদশ: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, নাহুয়েল মোলিনা, রদ্রিগো ডি পল, মার্কোস আকুনা, লিওনেল মেসি (অধিনায়ক), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, এনজো ফের্নান্দেজ, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, জুলিয়ান আলভারেজ।

নেদারল্যান্ডসের সম্ভাব্য একাদশ: আন্দ্রিস নোপের্ট, নাথান আকে, ডেলে ব্লিন্ড, ভার্জিল ফন ডাইক (অধিনায়ক), ডেনজেল ডামফ্রিস, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, ডেভি ক্ল্যাসেন, কোডি গ্যাকপো, মেম্ফিস ডিপাই, ভিনসেন্ট জানসেন, লুক ডি ইয়ং।