চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে শহীদ মিনারে মানববন্ধন

স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে পত্রিকাটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার  ‘স্বাধীনতা সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল চেয়ে এ মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা, ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, অভিনেতা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘স্বাধীনতা সচেতন নাগরিক সমাজ’ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলো আমাদের মহান স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে একটি শিশুর ছবি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করে। যা দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে সংক্ষুব্ধ করেছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন সংগঠন এই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন। আমরা মনে করি, প্রথম আলোর এই কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের একটি অংশ।

‘তাই এর প্রতিবাদে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিগণ আজ ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদী সমাবেশ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন সংগঠন, দেশ বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা নিয়ে কটাক্ষ করা, বিভিন্নভাবে স্বাধীনতার মূল্যবোধকে বিনষ্ট করার অপপ্রয়াসের প্রতিবাদে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মর্যাদা সমুন্নত রাখার দাবিতে আমরা সমবেত হয়েছি। ১/১১ এর কুশীলবরা এখনও সমাজে আছে, নানা ধরণের অপপ্রয়াস তারা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, যখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত, উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের নাম উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, একই সঙ্গে একটি নির্বাচিত সরকারের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে নির্বাচন এগিয়ে আসছে, এ সময়ে নানা অপকৌশল শুরু হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মৌলিক দায়িত্ব। একটি বিশেষ পটভূমির উদ্দেশ্যে আমাদের স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। যে সকল পত্রিকা এ সকল অপকর্মে যুক্ত আছে তাদের বিরুদ্ধে সকলের সম্মিলিত সোচ্চার হওয়া সময়ের দাবি। মহান স্বাধীনতার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমাদের এ ধরণের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, আমাদের স্বাধীনতা দিবসে যেভাবে একটি খবর সুপরিকল্পিতভাবে পরিবেশিত হয়েছে, সেটার নিন্দা জানাবার ভাষা আমার নাই। ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের মূল্যের স্বাধীনতার অবমূল্যায়ন, কটাক্ষ করা, উপহাস করার স্বাধীনতা কোনো নাগরিকের নেই। সে যত বড় সাংবাদিক হন যতবড় সংবাদপত্র হোক না কেন।

তিনি বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অবমূল্যায়ন, কটাক্ষ করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিদানে কঠোর আইন গ্রহণ করতে হবে। শুধু প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি নয়, পৃথক আইন করতে হবে। আইন কমিশনকে এ ধরণের অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন শাস্তি দিতে হবে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত ইতিহাস অস্বীকার অপরাধ আইন প্রণয়ন করুন। এ ধরণের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করতে হবে।

নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন কোনো বিবৃতি দেই, ছাত্রলীগ কোনো বিবৃতি দেয়, আমাদের বিবৃতি তারা (প্রথম আলো) ঠিকমতো ছাপায় না। আমাদের নামগুলোও তারা লেখে না, তাদের কষ্ট হয়। অর্থাৎ এরা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না। প্রথম আলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যদি পত্রিকা চালাতে চান, আপনারা নায়ক হওয়ার চেষ্টা করুন, খলনায়ক হবেন না।

বৃত্তান্ত ‘৭১ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুহাম্মদ তানভীর বলেন, সকল অসত্য, অসুন্দর আর দেশবিরোধী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের অবস্থান থেকে আজকে আমরা এই প্রতিবাদী মানববন্ধন করছি। প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে এই অপকর্মের জন্য জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় আমরা পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবো।

শাহাদাত হোসেন নিপুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম ও মনোরঞ্জন ঘোষাল, অভিনয় শিল্পী তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, ঊর্মীলা শ্রাবন্তী কর, চিত্রনায়ক রিয়াজ, কবি ও সাবেক সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী মশিউর মালেক, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, আহসানুল হক মিনু, শাহেদ শরীফ খান, আনজাম মাসুদ, শামীমা তুষ্টি প্রমুখ।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যমঞ্চ, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংঘ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, গৌরব ৭১, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক পর্ষদ, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, বাংলাদেশ শিশু সংগঠন ঐক্যজোট, বৃত্তান্ত ‘৭১ ফাউন্ডেশন, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, স্লোগান ‘৭১, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলার মুখ, জাতীয় ওলামা সমাজ প্রভৃতি সংগঠন যোগদান করে।