দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসনে হাতঘড়ি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম এবং তার পক্ষের অস্ত্রধারী বাহিনী কর্তৃক নির্বাচন কমিশনে ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ, মিথ্যা প্রচারণা, হামলা ও হত্যার হুমকির’ প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চকরিয়া এবং পেকুয়ার জনপ্রতিনিধিরা।
বুধবার ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে চকরিয়ার একটি হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরাজপুর মানিকপুর ইউপির চেয়ারম্যান আজিমুল হক আমিনের সভাপতিত্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘‘আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নস্যাৎ করা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে কলুষিত করার জন্য চকরিয়ার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, কালো টাকার মালিক, অবৈধ অস্ত্রধারীদের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীদের রুখতে হবে। আমরা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহলকে অনেক দেরী হওয়ার আগে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানায়। বিগত বছরগুলোতে চকরিয়ার সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি একটি বিশেষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি ছিল। অবৈধ অস্ত্রের ঝন-ঝনানি, চিংড়ি ঘের ও জমি-জমা জবর দখল, হাট বাজার দ্বারা সরকারী সম্পদ লুণ্ঠন এর মাধ্যমে একটি মহল রাতারাতি কোটি টাকার সম্পদ এবং শত একর জমির মালিক হয়েছে। সরকারের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকারের বিভিন্ন গণমুখী পদক্ষেপ ও আইন-শৃঙ্খলা দৃশ্যমান উন্নতির যখন জনসাধারণ এর কাছে প্রশংসিত হচ্ছে, সেই সময় অবৈধ সুবিধাভোগী গোষ্ঠী, তাদের রাম-রাজত্ব হারানোর আশংকায় নানা প্রলাপ বকতে শুরু করেছে ও সরকারের গণমুখী পদক্ষেপগুলোতে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
সাধারণ মানুষ অতীতের যেকোন সময়ের চাইতে বর্তমানে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে সক্ষম হচ্ছে। রাম-রাজত্বধারীরা বুঝতে পেরেছে, তাদের অবৈধ সমাজ্যের পতন আসন্ন, তখন কালো টাকার নির্ভর রাজনীতিকে পুঁজি করে ভোটের বৈতরণী পার হবার দিবাস্বপ্ন দেখছে। তারই ধারাবাহিকতায়, চকরিয়া উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ এর অধিকাংশ চেয়ারম্যান কল্যাণ পার্টির পক্ষে ঘড়ি মার্কার সমর্থনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করতে গেলে আমাদের এলাকায় গিয়ে সাবেক সংসদ সদস্যকে হুমকি দিচ্ছে ভোটের পর ৮ জানুয়ারি থেকে আমাদেরকে দেখে নিবে। এমনকি এরকম ও বলেছে যে, যারা ঘড়ি মার্কার পক্ষে কাজ করছে তাদের নামে আলাদা লিস্ট তৈরি করছে জাফর বাহিনী। নির্বাচনের পর লিস্ট অনুযায়ী আমাদেরকে এক এক করে দেখে নেয়ার ও হুমকি প্রদান করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কক্সবাজার এর চারটি আসন এর তিনটি আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্যরা নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলেও একমাত্র জাফর তার কুকর্মের কারণে মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়নি।
এছাড়াও, সন্ত্রাসী জাফর এবং তার ডাকাত সিন্ডিকেটের লোকজন আমরা যারা ঘড়ি মার্কার পক্ষে কাজ করছি, আমাদের বাসায় তাদের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় গিয়ে আমাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে যাতে আমরা জাফরের বিরুদ্ধে কাজ না করি। করলে আমাদের বিভিন্ন ভাবে মামলায় ফাঁসানো থেকে শুরু করে বয়স্ক ভাতার টাকা, কাবিখার টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা না দেয়ার হুমকি দেয়। আপনাদের একটি উদাহরণ দেই, গত ২৬ ডিসেম্বর মগনামা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরাফত আল্লাহ্ ওয়াসিম আমাদের পক্ষে প্রচারণায় কাজ করা একজনকে তার বাসায় যেয়ে বড় ভাইকে বলে আসছে ছোট ভাইকে যেন দেখে রাখে। নাহলে যেকোন মুহূর্তে হারিয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও, আপনারা জ্ঞাত আছেন গত ২৩ ডিসেম্বর চকরিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহীদকে বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে ভোট বিমুখ ও এলাকা ছাড়া করতে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর সাবেক সংসদ সমর্থিত এবং তার অনুসারী দুই চেয়ারম্যান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং তাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম এর পক্ষে কাজ করার চাপ দেওয়ার অভিযোগ এবং নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আবেদন প্রেরণ করেছেন। যা তাদের বাধাহীন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার একটি অপকৌশল মাত্র। আজ পর্যন্ত কোনো চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কল্যাণ পার্টির বা কোনো বিশেষ সংস্থার পক্ষ থেকে কল্যাণ পার্টির পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ দেয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি বুকে হাত দিয়ে বলছি। এরূপ ঘটনা যদি কেউ দাবি করে থাকে তা সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর। বরং, বর্তমান আওয়ামী লীগ হতে বিভিন্ন কুকর্মের কারণে বহিষ্কৃত এমপি জাফর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার এবং নির্যাতন হতে চকোরিয়া ও পেকুয়াবাসীকে সন্ত্রাস ও অপরাধের জনপথ না হতে দেয়ার দৃঢ় নৈতিক অঙ্গীকার হতে আমরা তার এহেন আচরনের তীব্র প্রতিবাদ করছি।
স্বাধীন গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকার হিসেবে চকোরিয়া ও পেকুয়াবাসীকে অত্যাচারী জাফর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর দুঃশাসন মুক্ত করতে এবং জনতার নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে সৎ, পরিচ্ছন্ন, মানবদরদী ও মজলুম জননেতা জেনারেল ইব্রাহিম সাহেবকে আমরা চকোরিয়া পেকুয়াবাসী স্বেচ্ছায় সমর্থন করছি। সেই সাথে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ, সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান এবং আন্তজার্তিক মহলে প্রশাসনের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র।
একই সাথে সাবেক সংসদ সদস্য তার মদদপুষ্ট/পোষ্য সন্ত্রাস বাহিনী দ্বারা দেয়ালে পোস্টার লাগালে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার/ লিফলেট ছিড়ে ফেলছ। উদাহরণ হিসেবে, গত ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সন্ত্রাসী জাফরের লোক আমাদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কল্যাণ পার্টির পোস্টার ও ব্যানার ছিড়ে ফেলে। যা বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে এসেছে এবং আপনারা ওয়াকিবহাল আছেন বলেই আমার বিশ্বাস। এরূপ ন্যাক্কারজনক কার্যক্রম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা এর অনুচ্ছেদ-৭(১) এর ক এবং ৭ (২) ব্যাত্যয় বা অমান্য করেছে।
এমতাবস্তায়, আমরা সাংবাদিক সম্মেলেন এর মাধ্যমে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন বানচাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত সন্ত্রাসীদের গডফাদার, জোরপূর্বক ভূমি দখলকারী ও চাঁদাবাজি, সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’’