সঙ্গীতের ফল্গুধারায় প্রতি বছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখে রাজধানীর রমনার বটমূল প্রাণসঞ্চার হয়ে উঠবে। প্রভাতী সুরের সঙ্গে মিতালী পাতাবে ভোরের সূর্য। গানে গানে মুখর হয়ে উঠবে পুরো প্রাঙ্গণ। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বরাবরের মতো জমকালো আয়োজন করছে দেশের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
বর্ষবরণ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে সোমবার (১০ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছায়ানট। মাহে রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে কীভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হবে, এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি আতিউর রহমান, সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা ও যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায়।
রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে, সকলকে নিয়ে শুভ কর্মপথে চলবার, কণ্ঠে নির্ভয়ের গান তুলে নেবার ছায়ানটের এই আয়োজন সার্থক হবে সর্বজনের সমর্থন, অংশগ্রহণ এবং উপলব্ধিতে- এমনটাই মনে করে ছায়ানট।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছায়ানট জানায়, কোভিড অতিমারীকে দমিয়ে পৃথিবী আজ নতুন করে স্বাভাবিক-সচ্ছন্দ, মানবসমাজের এক অবিস্মরণীয় জয়। বাঙালির যেন চিরচেনা জীবনেই প্রত্যাবর্তন। কিন্তু জয়ের আবহের মধ্যেও বাঙালি আজ মুখোমুখি নতুন সংকটের। শুধু এই ভূখণ্ডই নয় বিশ্বব্যাপী ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, দেশে ক্রমান্বয় অবক্ষয় মূল্যবোধের। আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাইনা, স্বপ্ন দেখি হাতে হাত রেখে সকলে একসাথে মিলবার, চলবার। বাঙালি জাগবেই, সবাই মিলে সুন্দর দিন কাটানোর সময় ফেরাবে, পরম বিশ্বাসে বলবে সবারে বাসরে ভালো নইলে, মনের কালো ঘুচবে নারে। সার্থক হবেই হবে, মানুষ-দেশ, এ পৃথিবীকে ভালবেসে চলবার মন্ত্র। শুভ কর্মপথে আঁধার কাটিয়ে আলোর সন্ধানে সুদিনের পথে চলব আমরা, বাঙালিকে বলব, হাল ছেড় না। এবারের নববর্ষের প্রথম প্রভাতে, সত্য-সুন্দরকে পাওয়ার অভিলাষী ছায়ানটের আহ্বান, দূর করো অতীতের সকল আবর্জনা,‘ধর নির্ভয় গান’।
ভোরের আলো ফুটতেই আহীর ভৈরবের সুরে, ছন্দের বন্ধনে এবারের নতুন বছর আবাহনের শুরু। গোটা অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে।
বর্ষবরণের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়,বর্ষবরণ সার্থক করতে আন্তরিক নিষ্ঠায় মাস দুয়েক আগে থেকেই গান তোলা আর গলা মেলানোর কাজে নেমেছে শতাধিক ক্ষুদে ও বড় শিল্পী। রমনা উদ্যানের প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সফল করতে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে অগ্রিম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছায়ানট জানায়, আয়োজনের প্রস্তুতিপর্ব থেকেই আমাদের নিরন্তর প্রেরণা যুগিয়ে চলে গণমাধ্যমের খোঁজ-খবর নেওয়া, প্রচার। বরাবরের মতোই নতুন বাংলা বছরকে বরণ করার এই আয়োজন সুষ্ঠু রাখতে অক্লান্ত সেবা দিয়ে চলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর। ছায়ানট কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা, লাউড ওয়ার্কস এবং থার্টিনথ হুসার্স ওপেন রোভার গ্রুপের নির্বাচিত সদস্যরা। এর মধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে শ’দেড়েক শিল্পী-কর্মীকে ধারণ করতে সমর্থ মঞ্চ।