বাংলাদেশে একযোগে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছায়ানটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ বা উন্মত্ত জনতা তৈরি করে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছে প্যারিস ভিত্তিক সংস্থা ‘প্যারিসের জানালা।’
একই সাথে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবীরের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ও কবি আবু জুবায়ের।
আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্যারিস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্যারিসের জানালা-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো নির্দিষ্ট ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে দেশের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ঘেরাও এবং সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ চালানো মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রের ওপর এক মরণঘাতী আঘাত। এই ধরনের ‘মব জাস্টিস’ বা বিচারহীনতার উন্মাদনা বাংলাদেশকে এক গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিবৃতিতে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আবু জুবায়ের বলেন, ‘‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা এবং নির্ভীক সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি স্বাধীন মতপ্রকাশের টুটি চেপে ধরার এক সুগভীর ষড়যন্ত্র।
একই সঙ্গে ছায়ানটের মতো প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা প্রমাণ করে যে, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চায়। বাংলাদেশ আজ এক অসহিষ্ণু মৌলবাদী চাদরে ঢেকে যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’’
বিবৃতিতে ৪টি প্রধান দাবি উত্থাপন করে:
১. হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার: প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট এবং সাংবাদিক নুরুল কবীরের ওপর হামলার সাথে জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ দেখে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা: প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ও সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
৩. সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রক্ষা: ছায়ানটসহ সকল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. মব কালচার দমন: আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই যে ‘মব’ সংস্কৃতি দেশে শুরু হয়েছে, তা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
প্যারিসের জানালা মনে করে, রাষ্ট্র যদি এখনই এই অরাজকতা থামাতে ব্যর্থ হয়, তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। প্রবাসে অবস্থানরত লেখক, কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা এই সংকীর্ণ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছেন।








