চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘পদ্মা আমার মা’

আমি গত কয়েকদিন ‘পদ্মা’ শব্দের সঙ্গে প্রেম করছি। শব্দটির দ্যোতনায় মুগ্ধ হচ্ছি। আমাদের নদী প্রধান পদ্মা। এবার পদ্মা নামে সেতু হলো। নদী হাজার বড় হোক, সেতুর মতো নয়। পদ্মা নদী আমরা বানাইনি, কিন্তু পদ্মার সেরা অলংকার আমরা গড়েছি। পৃথিবীর অগণন মানুষের মুখে বহুদিন ধরেই উচ্চারিত‘পদ্মা’। পদ্মা সেতু।

নদীর নামের ভেতরে পুরুষবাচক স্ত্রীবাচক ব্যাপারটি আছে। যুক্তি ও ব্যাখ্যাও আছে। নদী বললে আমরা প্রথমে উচ্চারণ করি পদ্মা। নদী বলতে আমরা সবচেয়ে আগে পদ্মাকেই বুঝি। তারপর মেঘনা, যমুনা, শীতলক্ষা, ধলেশ্বরীসহ অগুণতি নদীর নাম আসে। আসে ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁর নাম। নামেই এ দুটিজলধারা পুরুষবাচক। আমি পদ্মার শাখা গড়াই পাড়ের ছেলে। আমাদের গড়াইও নাকি নদী না নদ।পুরুষবাচক। নদী পণ্ডিতেরা এসব বলেন। এর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ যুক্তিও আছে। ভূপেন হাজারিকা বলেছেন, ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’। এক মায়ের দুই নাম। আমাদের মা পদ্মা।

পদ্মা নামটি কোথা থেকে এসেছে, খুঁজছি। প্রিয় অভিধানগুলো একটাও হাতের কাছে নেই। এর মধ্যেআরেকটি পংক্তি মাথায় খেলা করে গেল। “নদী তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ?” জগদীশ চন্দ্র বসু’রঅব্যক্ত’র মধ্যে আছে এই জিজ্ঞাসা। তার পরের বাক্য “মহাদেবের জটা হইতে”। পদ্মা শব্দের উৎপত্তি খুঁজে পাই না। গুগল করে যা মেলে তা হলো, “[পদ্‌দাঁ, পোদুমা] (বিশেষ্য) ১ বাংলাদেশের নদীবিশেষ; পঙ্গানদীর নিম্নভাগের নাম যা বাংলাদেশে প্রবাহিত।” এইসব নানারকমের প্রচলিত ও বহুল চর্চিত তথ্য পাওয়া যায়। এর বাইরে কিছু পাওয়া যায় না। অনলাইনে নামের একটি লেখা পড়লাম। পদ্মার নামেরউৎপত্তিগত ইতিহাস তুলে দেয়া হয়েছে। “পদ্মা নদীর নামের উৎপত্তি হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর নামানুসারে।লক্ষ্মীর আরেকটি নাম পদ্মা। পদ্ম ফুলের মাঝে প্রকাশিত বলেই লক্ষ্মী দেবীর হাতে পদ্মফুল লক্ষ্য করাযায়। দেবী লক্ষ্মীর অবতার হলো পদ্মা দেবী বা পদ্মাবতী। ইতিহাস বলছে বঙ্গদেশ মানে প্রাচীন বাংলাবৌদ্ধ ও হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। হিন্দু- বৌদ্ধ শাসক বর্গের নামে যেমন গড়ে ওঠে শহর বন্দরের নাম তেমনি ভাবে দেব দেবীর নামে নামকরণ করা হয় নদীর। যেমন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা প্রধান এই তিনটি নদী হিন্দুদের তিন দেবীর নামানুসারে রাখা হয়। মেঘনা নদীর নাম দেবী গঙ্গার নামানুসারে রাখা হয়েছে।মেঘনা হলো গঙ্গা দেবীর একটি অবতার।”

আমরা পদ্মা চিনি নদী হিসেবে। পদ্মা আমার মা হিসেবে। মাতৃসম জলধারা হিসেবে। এই নামটি মানুষের সৃজনশীলতার নিদর্শন হিসেবে আরেকবার সুপ্রতিষ্ঠিত হলো। সেতুটিও নামের বিশেষণে মায়ের গুরুত্বই বহন করবে।

পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে। একটি ধরণ নিজের দেশের একটি স্থাপনাকে ঘিরে আবেগ উচ্ছ্বাসেতা জীবনের সঙ্গে মেলাতে পারে, আরেকটা শ্রেণি পারে না। উন্নত বিশ্বের মানুষ বিশাল বিশাল অবকাঠামো দেখে মোটেই আবেগ সিক্ত হয় না। তারা মনে করে সবই তাদের অধিকার। রাষ্ট্র ও সরকার তার দায়িত্ব পালন করে যায়। জনসাধারণ অধিকার হিসেবে তা ভোগ করে যায়। নিয়ম মেনে ভোগ করে।আমাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন। আমরা সবকিছুকেই আগে নিজের করতে চাই। নিজের আবেগ দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে চাই। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে নিজের করে দেখতে তাই।

টেলিভিশনে দেখছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অগণন মানুষ পদ্মা সেতুর বুকের ওপর গিয়ে হাঁটছেন। পদ্মা নদী তাদের হাতে ধরা দিচ্ছে। পদ্মাকে তারা মা হিসেবেই অনুভব করেছে, কীর্তিনাশা হিসেবে নয়। মানুষ বস্তুগত ভাবে কী পেল, সেটি বড় কথা নয়, পদ্মা নতুন পোশাকে, অলংকারে তাকে শোভিত করলো সেটি অনেক বড়।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)