পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হবে উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়, এটি আমাদের বঞ্চনার পরিসমাপ্তির উপাখ্যান।
শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, ঢাকা’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘পদ্মা সেতু: দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুনন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান।
শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প গড়ে উঠেবে, শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে টাউনশিপ গড়ে উঠবে। সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনে এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগ না থাকার বিদ্রুপের পরিসমাপ্তি ঘটবে। আমাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ উত্তরণ ঘটবে। আঞ্চলিক জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ উন্নয়ন ঘটবে।’
‘‘পদ্মার অপর পাড়ে কৃষিজ সামগ্রী পেয়ারা, আমড়া, মাল্টা, শাকসবজি, মাছ এগুলোর প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এতদিন গড়ে উঠেনি। যাতায়াত ব্যবস্থার সংকটের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে কেউ শিল্প স্থাপনে যেতে চাইত না।’’
তিনি বলেন, অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও দক্ষিণাঞ্চলে এতদিন কিছুই গড়ে উঠেনি। এখন পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।
‘‘এতে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হবে। এ সকল দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বৃহত্তর বরিশালের অনেক শিল্প স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’’
বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম মাসুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সৈকতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার ও এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল।
পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘একটা সেতুর জন্য এত মানুষ উন্মুখ হয়ে বসে আছে, এমনটা অবিশ্বাস্য ঘটনা। পদ্মা সেতু আসলে সারাদেশের মানুষের স্বপ্ন বুনন। এই মহাকাণ্ডের কান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
‘‘বারবার বলা হয়েছে পদ্মা সেতু হবে না। কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন। অথচ এখন লোকজন নতুন কথা বের করছে। আমি বলবো, তোমরা যারা পাণ্ডিত্য দেখাচ্ছো তারা অন্য জায়গায় দেখাও। আমাদের তোমরা উৎসব করতে দাও। তোমরা পার্টিতে আসো, না হয় চুপ থাকো।’’
ভোলা থেকে বরিশালের সঙ্গে সেতু নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে সেতু টেকনিক্যাল দিক ও অর্থনৈতিকভাবেও সম্ভব। সিরিয়াসলি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, পদ্মার উপর সেতু হবে এটা ভাবতেও পারেনি অনেকে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু করে এখন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। এর একমাত্র কৃতিত্ব তার। কারণ অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে এই সেতু নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের অঞ্চলে যারা আছেন সেসব ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সেখানে পরিবেশটা খুব জরুরি। কেউ যদি আমার দখলে থাকবে এই এলাকা, অমুক এলাকা থাকবে অমুকের দখলে এমন মনোভাব থাকলে পদ্মা সেতু কিন্তু সেতুই থেকে যাবে। সময়মতো মাছ, ফল-সবজি সময়মতো ঢাকায় আসতে পারবে না। পণ্য নিয়ে আসতে পথে পথে বাধার সৃষ্টি হলে সঠিক সময়ে ঢাকায় পণ্য আসবে না। তাই আমাদের সামগ্রিক চিন্তা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা ভাবতে হবে।’
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা মেরিনা মীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। পদ্মা সেতু তার প্রমাণ। কিন্তু এতদিন বরিশাল অনেক কিছু দিলেও আমরা বরিশালের জন্য অনেক কিছুই করতে পারিনি। বরিশাল ভারী ও মাঝারি মানের শিল্প কম যে কারণে ঢাকায় প্রচুর মানুষ কাজ করে। এতদিনে ছোটখাটো শিল্প কারখানা গড়ে উঠলেও সামনে আরও গড়ে তুলতে হবে। একটি উন্নয়নযজ্ঞে যেসব খাতের মানুষ আছে তাদের এক হয়ে ভাবতে হবে।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজ বলেন, কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি বরিশালে পরিবেশবান্ধব শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরি হয় এমন শিক্ষায় জোর দিতে হবে।
বরগুনার পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পদ্মার এবারের পাশাপাশি পদ্মার ওপারের রাস্তা চারলেন করা। কারণ এখনই ওপারের মূল রাস্তা অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই এদিকটাতে গুরুত্ব দিতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নিজাম উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এখনই বিসিকসহ অন্যান্য যেসব অর্থনৈতিকভাবে ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে জমি নেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই সহজ শর্তে, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার সুযোগ দিলে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে বরিশালে বিনিয়োগ করবেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামের মতো বরিশালে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে জোর দিতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও কবি তৌহিদুল হক।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব, সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাদিরা কিরণ, জেবেল রহমান, মানিক লাল ঘোষ, রাজু হামিদ, শেখ জামাল, বিডিজেএর সহসভাপতি এম এম বাদশা, সংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক সানবির রুপল, প্রমুখ।