ছিলেন একই গ্যাংয়ের সদস্য, মাদক কেনা-বেচাসহ বিভিন্ন দ্বন্দ্বের জেরে পৃথক গ্যাং তৈরি করেন। এরপর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হত।
চলমান এই বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের দুইজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের পর পার্টির আয়োজন করেন একটি গ্রুপের সদস্যরা। পার্টি উদযাপন শেষে যখন শুনতে পান আহতদের মধ্যে একজন মারা গেছেন, তখনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান তারা।
রাজধানীর পল্লবীতে ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় ‘পেপার সানী’ গ্রুপ ‘গালকাটা রাব্বী’ গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ফয়সাল হত্যার ঘটনায় কিশোর গ্যাং লিডারসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তারের পর এ কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. আকাশ ওরফে টান আকাশ, ফজলে রাব্বী ওরফে হিটার রাব্বী ওরফে গালকাটা রাব্বী, মো. ইমরান, মো. রাসেল কাজী ও নয়ন।
গতকাল শুক্রবার নরসিংদী ও গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাব্বী ও আকাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি বাগান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ও ভুক্তভোগী ফয়সাল এক সময় মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং ‘পেপার সানী’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। গালকাটা রাব্বী পেপার সানী গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু ৪-৫ মাস আগে মাদক কেনা-বেচা নিয়ে ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের কোন্দল ঘিরে রাব্বী ওই গ্রুপ থেকে বের হয়ে ‘গালকাটা রাব্বী’ নামে পৃথক গ্রুপ তৈরি করেন। এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হত। ঘটনার প্রায় এক মাস আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বীকে মারধর করে পায়ের রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় তারা রাব্বীকে উদ্ধার করেন। গত ১৫ মার্চ দুই গ্রুপের মধ্যে আবার মারামারি হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন: এতে রাব্বী গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এছাড়া ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা রাব্বী গ্রুপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করলে রাব্বী আরও ক্ষিপ্ত হয়। এরমধ্যে গ্রেপ্তাররা জানতে পারেন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা একটি ইফতার মাহফিলে গেছেন। ভুক্তভোগী ফয়সাল ও রানা স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার শেষে ফেরার পথে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের ওপর হামলা করেন রাব্বী গ্রুপের সদস্যরা। এ সময় ফয়সাল ও রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রুপের এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় পার্টি করে উদযাপন করেন। পার্টি শেষে তারা জানতে পারে, ফয়সাল হাসপাতালে মারা গেছেন ও রানা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা প্রথমে নেত্রকোনায় আত্মগোপন করে দুই দিন অবস্থান করেন। পরে মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার রাব্বীর বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা রয়েছে এবং ইতোমধ্যে একাধিক বার কারাভোগ করেছেন। আকাশের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে, তিনিও একাধিকবার কারাভোগ করেছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার রাসেল, ইমরান ও নয়ন কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বী’ গ্রুপের সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাব্বীর গ্রুপে ১৪-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যাদের অধিকাংশই আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য ছিল। পরে তারা সেই গ্রুপ থেকে বের হয়ে নতুন গ্রুপে যোগ দেয়। এখন পর্যন্ত তাদের ইন্ধনদাতা বা মদতদাতার তথ্য পাওয়া যায়নি। পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলছে।