দীর্ঘ সময় সরকার পরিচালনায় ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ একমাত্র আওয়ামী লীগই মোকাবেলা করতে পারবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে দেওয়া ভাষণে সাত জানুয়ারী নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান, সাংবিধানিক ধারণাকে ব্যাহত করার উদ্ভট ধারণাকে যেন কেউ প্রশ্রয় না দেয়।
বৃহস্পতিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে দেয়া ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, এই সরকারের পথপরিক্রমায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে তা তুলে ধরেন, জানান বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম সময়ের কথা।
নির্বাচিত হলে, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, কৃষি যান্ত্রিকিকরণ, আর্থিক খাতে দক্ষতা বাড়ানো ও সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূলসহ বারোটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
২০০১ থেকে ০৬ সালে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, হত্যার পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সজাগ করে দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
বলেন: ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশ যখন আর্থিক স্থবিরতা কাটিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা শুরু করে, ঠিক তখনই ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি-জামাত আবার ক্ষমতায় আসে। রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন। ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে বহু চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দেওয়া হয়। ‘হাওয়া ভবন’ খুলে অবাধে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও দুঃশাসন।
‘‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২২ নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং ৫০০’র বেশি মানুষকে আহত করে। জেলায় জেলায় বোমা হামলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশন জট, ছাত্রছাত্রীদের অনিশ্চিত জীবন ছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়কার সাধারণ চালচিত্র। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ, হাওয়া ভবনের দ্বৈত শাসনে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল।’’
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালের অগ্রযাত্রায় দেশবাসীকে সাথে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন: ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ৩ মেয়াদে আওয়ামী লীগ লীগ সরকার গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের পথে জাতিকে অগ্রসরমান রেখেছে। ইতোমধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার যে সুযোগ পাওয়া যাবে তা কার্যকর করা এবং যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে; তা একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মোকাবিলা করতে পারবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।
ইশহেতারের এ ভাষণে ফিলিস্তিনি-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাতেও ভোলেননি শেখ হাসিনা, বলেছেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে গণহত্যা চলছে তার অবসান চাই।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়, এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাস করি। এই নীতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে উন্নত করেছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। প্যালেস্টাইন ও ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধ হোক আমরা সেটাই চাই। প্যালেস্টাইনে যে গণহত্যা চলছে, আমরা তার অবসান চাই। বাংলাদেশ সব সময় প্যালেস্টাইনের জনগণের পক্ষে আছে।
এসময় আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন: আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই দীর্ঘ চলার পথে যতটুকু অর্জন, তার সবটুকুই আপনাদের অবদান। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এ অর্জন করা সম্ভব হতো না। চলার পথে যদি কোন ভুল-ভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে আপনারা ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন- এটাই আমার আবেদন। আবার সরকার গঠন করতে পারলে, ভুলগুলি শোধরাবার সুযোগ পাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।