সেমির দৌড়ে টিকে থাকার ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে শুরুতে চাপে পড়লেও পরে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল পাকিস্তান। তবে এইডেন মার্করামের অনবদ্য ইনিংসের পর কেশব মহারাজ ও তাবরাইজ শামসির দৃঢ়তায় শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১ উইকেটে জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাটের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। ৪৬.৪ ওভারে ২৭০ রানে গুটিয়ে যায় তার দল। জবাবে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জয়ের বন্দরে নোঙর করে প্রোটিয়ারা। ছয় ম্যাচে পাঁচ জয়ে টেবিলের শীর্ষে টেম্বা বাভুমার দল। অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর টানা চারটি হার দেখল পাকিস্তান।
প্রোটিয়াদের ব্যাটে পাঠিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে পাকিস্তান। ফিল্ডিংয়ের সময় মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান দলের অন্যতম অলরাউন্ডার শাদাব। কনকাশন সাব হিসেবে তার জায়গায় নামেন আরেক অলরাউন্ডার উসামা মীর।
পাকিস্তানের হয়ে প্রথম ওভারে বলে আসেন ইফতিখার আহমেদ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলটি মিড অনে ঠেলে দিয়ে রানের জন্য দৌড়ান টেম্বা বাভুমা। দ্রুত বল তুলে নিয়ে থ্রো করেন শাদাব। থ্রো করার পর মাঠে পড়ে যান তিনি। মাথায় আঘাত পান তিনি। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও মাঠ ছাড়েন শাদাব। এরপর আর মাঠে নামেননি তিনি।
ইনিংসের ১৫তম ওভারে জানা যায়, এ ম্যাচে আর মাঠে নামতে পারবেন না শাদাব। তার জায়গায় কনকাশন সাব হিসেবে খেলবেন উসামা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বিবৃতিতে তা জানায়।
শাদাবের বদলি হিসেবে আগে থেকেই ফিল্ডিং করছিলেন উসামা। ১৯তম ওভারে বল হাতে এসে উইকেট তুলে নেন উসামা। ওভারের পঞ্চম বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন ফন ডার ডুসেনকে। ৩৯ বলে ২১ রান করেন ডুসেন।
ডুসেন ফেরার আগে কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমার উইকেট তুলে নেন পাকিস্তানি বোলাররা। চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে ডি কককে ফেরান শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১৪ বলে ২৪ রান করে ফেরেন প্রোটিয়া ওপেনার।
দশম ওভারের পঞ্চম বলে টেম্বা বাভুমাকে ফেরান মোহাম্মদ ওয়াসিম। দলীয় ৬৭ রানে সৌদ শাকিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান প্রোটিয়া অধিনায়ক। ২৭ বলে ২৮ রান করেন।
দলীয় ১২১ রানে রেসি ফন ডার ডুসেন ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হেইরিখ ক্লাসেন। ২২তম ওভারের চতুর্থ বলে ক্লাসেনকে ফেরান ওয়াসিম। ১০ বলে ১২ রান করেন তিনি।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৭০ রান তোলেন এইডেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। ৩৩.১ ওভারে দলীয় ২০৬ রানে জুটি ভাঙেন শাহিন। মিলারকে ফেরান রিজওয়ানের ক্যাচ বানিয়ে। ৩৩ বলে ২৯ রান করেন মিলার। ৩৭তম ওভারের পঞ্চম বলে মার্কো জানসেনকে ফেরান হারিস রউফ। ১৪ বলে ২০ রান করেন জানসেন।
৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে একপ্রান্ত আগলে রাখা মার্করামকে ফেরান উসামা মীর। ৯৩ বলে ৯১ রান করে ফিরে যান মার্করাম। পরের ওভারে জেরাল্ড কোয়েটজিকে ফেরান শাহিন। ১৩ বলে ১০ রান করেন কোয়েটজি। ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে হাসান রউফের শিকার লুনগি এনগিদি। ১৪ বলে ৪ রান করেন রউফের তালুবন্দি হন তিনি।
এরপর কেশব মহারাজ ও তাবরাইজ শামসি দলের জয় নিশ্চিত করেন।
পাকিস্তানের হয়ে তিনটি উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। হারিস রউফ, উসামা মীর ও মোহাম্মদ ওয়াসিম নেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাটে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দুই ওপেনার ফিরে যান দলীয় ৩৮ রানে। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে আবদুল্লাহ শফিককে ফেরান মার্কো জানসেন। ১৭ বলে ৯ রান করেন শফিক। সপ্তম ওভারে ফের আঘাত হানেন জানসেন। ফেরান ইমাম উল হককে। ইমাম ১৮ বলে ১২ রান করে ফেরেন।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫০ রান তোলেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ১৫.৫ ওভারে রিজওয়ানকে ফেরান জেরাল্ড কোয়েটজি। ২৭ বলে ৩১ রান করেন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।
২৫.১ ওভারে চতুর্থ ব্যাটার হারায় পাকিস্তান। ৩১ বলে ২১ রান করে তাবরাইজ শামসির শিকার হন ইফতিখার আহমেদ। এক ওভার পর বাবরকেও ফেরান প্রোটিয়া স্পিনার। ৬৫ বলে ৫০ রান করে ফিরে যান পাকিস্তান অধিনায়ক।
১৪১ রানে পাঁচ ব্যাটার হারিয়ে চাপে পড়া পাকিস্তানের হাল ধরেন সৌদ শাকিল ও শাদাব খান। ৮৪ রানের জুটি গড়েন দুজনে। ৩৯.৪ ওভারে শাদাবকে ফেরান কোয়েটজি। ৩৬ বলে ৪৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন শাদাব। ৪২.১ ওভারে শাকিলকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান শামসি। ৫২ বলে ৫২ রান করে ফিরে যান শাকিল।
২৫৯ রানে অষ্টম উইকেট হারায় পাকিস্তান। শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ফেরান শামসি। ৪ বলে ২ রান করেন আফ্রিদি। ৪৫.৫ ওভারে মোহাম্মদ নওয়াজকে তৃতীয় শিকার বানান জানসেন। পরের ওভারেই ২৭০ রানে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দেন লুনগি এনগিদি। মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ফেরান ডি ককের ক্যাচ বানিয়ে।
প্রোটিয়াদের হয়ে চারটি উইকেট নেন তাবরাইজ শামসি। মার্কো জানসেন তিনটি ও জেরাল্ড কোয়েটজি নেন দুটি, লুনগি এনগিদি নেন একটি উইকেট।