নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেতে হিমালয়সম রান তাড়া করতে হতো পাকিস্তান। তবে বৃষ্টির কল্যাণে কপালই খুলেছে বাবর আজমদের। দু’দফায় বৃষ্টিতে লড়াই ভেস্তে গেছে পাকিস্তানের ইনিংসের মাঝ পথেই। ফখর জামানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দ্রুতই রান তুলেছিল তারা। ফলে বৃষ্টি আইনে ২১ রানে এগিয়ে থেকে আসরের চতুর্থ জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে দু’দফায় বৃষ্টি নামে। প্রথম দফায় বৃষ্টির কারণে ৯ ওভার কাটা যায় পাকিস্তানের ইনিংস থেকে। বৃষ্টি আইনে জিততে হলে পাকিস্তানকে ৪১ ওভারে করতে হত ৩৪২ রান। বৃষ্টি নামার আগে ২১.৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১৬০ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। বৃষ্টি শেষে ১৯.৩ ওভারে আরও ১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটে নামে তারা।
২৬তম ওভারের তৃতীয় বল শেষে ফের বৃষ্টি হানা দেয় মাঠে। তার আগে অবশ্য ঝড় তোলেন ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটার বাবর আজম ও ফখর জামান। ছয় ওভারে সংগ্রহ করেন ৪১ রান। বৃষ্টি নামার আগে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৫ ওভার তিন বলে এক উইকেটে ২০১ রান।
বৃষ্টি আইনে ২৫.৩ ওভারে পাকিস্তানকে করতে হত ১৭৯ রান। তবে পাকিস্তান ২১ রান বেশি করে এগিয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় বল মাঠে না গড়ানোর কারণে ম্যাচ শেষ ঘোষণা করা হয়। কিউইদের বিপক্ষে ২১ রানের জয়ে সেমির দৌড়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখলো বাবর আজমের দল।
বিশ্বকাপে এ নিয়ে আট ম্যাচে চারটিতে জিতেছে পাকিস্তান। আট পয়েন্ট নিয়ে ওঠে এসেছে টেবিলের পাঁচে। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে রানরেটে এগিয়ে চারে অবস্থান নিউজিল্যান্ডের।
শনিবার টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে আগে ব্যাটের আমন্ত্রণ জানান পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেটে ৪০১ রান তুলে বিশ্বকাপের টানা দুবারের ফাইনালিস্টরা।
বাঁচা মরার ম্যাচে হিমালয়সম রান তাড়ায় নেমে দলীয় ৬ রানে ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে হারিয়ে দারুণ ভাবেই চাপে পড়েছিল পাকিস্তান। তবে সেখান থেকেই দলের হাল ধরেন অধিনায়ক বাবর আজম ও ফখর জামান।
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৬৩ বলে ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ফখর জামান। তিন অংকে পৌঁছাতে ৭টি চার ও ৯টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টি নামার আগে দ্বিতীয় উইকেটে ১৪১ বলে ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন ফখর আর বাবর।
আট চার ও ১১ ছক্কায় ৮১ বলে ১২৬ রানে অপরাজিত থাকেন ফখর জামান। ছয়টি চার ও দুই ছক্কায় ৬৩ বলে ৬৬ রান করেন বাবর আজম।
ইংলিশদের হয়ে একমাত্র উইকেটটি নিয়েছেন টিম সাউদি।
এর আগে ব্যাটে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে কিউইদের হয়ে ৬৮ রানের জুটি গড়েন ডেভন কনওয়ে ও রাচীন রবীন্দ্র। ১১তম ওভারে হাসান আলীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩৯ বলে ৬ চারে ৩৫ রান করা কনওয়ে।
কেন উইলিয়ামসন ও রাচীন নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১৮০ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডের বড় স্কোরের পথ সুগম করেন। চোট কাটিয়ে ফিরে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং করতে থাকা উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি পাওয়াটা ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। যদিও নার্ভাস নাইন্টিজেই তাকে কাটা পড়তে হয়। ইফতিখার আহমেদের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই হয় সর্বনাশ। লং অফে ফখর জামানের হাতে ধরা পড়ার আগে ৭৯ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৯৫ রানের চমৎকার ইনিংস ব্ল্যাক ক্যাপস অধিনায়ক।
উইলিয়ামসন না পারলেও রাচীন ঠিকই সেঞ্চুরির দেখা পান। ৯৪ বলে ১৫ চার ও এক ছক্কায় খেলেন ১০৮ রানের নান্দনিক ইনিংস। মোহাম্মাদ ওয়াসিমের বলে সৌদ শাকিলের তালুবন্দি হন।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকা নিউজিল্যান্ড ৪০ ওভারের আগেই দলীয় ৩০০ রানের গণ্ডি পার হয়। দ্রুত রান তোলায় মনযোগী থাকা মিচেল ১৮ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় ২৯ রান করেন। হারিস রউফের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মার্ক চ্যাম্পম্যানের সঙ্গে তিনি চতুর্থ উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়েন।
চ্যাম্পম্যানও বাইশ গজে আগ্রাসী ভঙ্গিতে ব্যাট চালাচ্ছিলেন। ২৭ বলে ৭ চারে ৩৯ রান করার পর মোহাম্মাদ ওয়াসিমের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন।
এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন গ্লেন ফিলিপস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন মিচেল স্যান্টনার। দ্রুতগতিতে এ দুই ব্যাটার ষষ্ঠ উইকেটে ৪৩ রান যোগ করে দলীয় স্কোর চারশোর কাছাকাছি নিয়ে যান। ৪৯তম ওভারে ওয়াসিমের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২৫ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৪১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ফিলিপস।
স্যান্টনার ১৭ বলে ২৬ ও আট নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম ল্যাথাম ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের পক্ষে ওয়াসিম ৬০ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেন নেন হাসান, হারিস ও ইফতিখার।