আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্বস্তির জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হতাশ করলো টিম টাইগার্স। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পাহাড়সম রানতাড়ায় নেমে লড়াইও করতে পারল না সাকিব আল হাসানের দল। বোলারদের ব্যর্থতার দিনে আলো ছড়াতে পারেননি ব্যাটাররাও। ইংলিশদের কাছে হার ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে।
মঙ্গলবার ধর্মশালায় টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটে পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাকিবের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি বোলাররা, নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। জবাবে নেমে ৪৮.২ ওভারে ২২৭ রানে থামে বাংলাদেশ।
পাহাড়সম রানতাড়ায় নেমে ইনিংসের শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ তানজিদ হাসান তামিম। ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। রিচি টপলের বলের লাইনে পায়ের কাজটাই ঠিকঠাক করতে পারেননি ২২ বর্ষী ব্যাটার। দ্বিতীয় স্লিপে জনি বেয়ারস্টোর হাতে দেন সহজ ক্যাচ।
পরের বলে টপলের সুইংয়ে ড্রাইভ করে ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। পয়েন্ট অঞ্চলে থাকা লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে আটকে যান। জাগে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। মাত্র ১ রান করে টপলের বলে পরাস্ত হন সাকিব আল হাসানও। লেন্থ ডেলিভারিটির বিপক্ষে অসহায় ছিলেন টাইগার অধিনায়ক। অফস্টাম্পে আঘাত হানে বল।
নবম ওভারে ক্রিস ওকসের বলে হাফ ড্রাইভ খেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বল ব্যাটে লেগে জস বাটলারের গ্লাভসে জমা পড়লে তিনি ৮ রান করে মাঠ ছাড়েন।
বোর্ডে ৪৯ রান তুলতেই টপঅর্ডারের ৪ ব্যাটার হারিয়ে টাইগাররা রীতিমতো কাঁপছিল। ইংল্যান্ডের বোলিং তোপের সামনে বীরদর্পে লড়ে ফিফটি করেন লিটন দাস। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়েন।
দারুণ ছন্দে থাকা লিটন জাগিয়েছিলেন সেঞ্চুরির আশা। পারেননি শেষপর্যন্ত। ক্রিস ওকসের কাটার তার ব্যাটে হালকা ছোঁয়া দিয়ে জস বাটলারের দস্তানায় জমা পড়ে। টাইগার ওপেনার ৬৬ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৬ রান করে মাঠ ছাড়েন।
পরে মুশিও পৌঁছেছেন অর্ধশতকে। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩১তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৬৪ রানে টপলের চতুর্থ শিকার হন মুশফিক। উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ থার্ড অঞ্চলে আদিল রশিদের হাতে ধরা পড়েন টাইগার উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ৬৪ বলে ৫১ রান করেন।
৪০তম ওভারের প্রথম বলে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিয়াম লিভিংস্টোনের বল বুঝতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। ব্যাটের কানায় বল লেগে চলে যায় বাটলারের হাতে। ৬১ বলে ৩৯ রান করেন হৃদয়। ১৯৫ রানে অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আদিল রশিদের গুগলিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন শেখ মেহেদী। ৩২ বলে ১৪ রান করেন।
৪৩তম ওভারের পঞ্চম বলে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম মিলে দুইশো রান পার করেন। ৪৬তম ওভারের চতুর্থ বলে ২২১ রানে মার্ক উডের শিকার হন শরিফুল। বোল্ড হয়ে ফেরার আগে করেন ১৪ বলে ১২ রান। ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে স্যাম কারেনের শিকার তাসকিন। ২৫ বলে ১৫ করেন তিনি।
ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নিয়েছেন রিচি টপলে। ক্রিস ওকস নেন দুটি উইকেট। আদিল রশিদ, মার্ক উড, স্যাম কারেন ও লিয়াম লিভিংস্টোন নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টসে জিতে ইংলিশদের ব্যাটে পাঠিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে নতুন বল তুলে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কাটার মাস্টারের ধারাল বলে খানিকটা দিশেহারা ছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার। অন্যপ্রান্ত থেকে তাসকিন আহমেদও নিজের কাজটা ঠিকঠাক করছিলেন। শুরুর পেস সামলে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে টাইগারদের চাপে ফেলেন দুই ইংলিশ ওপেনার।
শুরুটা দারুণ হলেও নিজের করা তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে যথাক্রমে ১০ ও ১২ রান দিয়ে মোস্তাফিজ হন খরুচে। ইংল্যান্ডের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলটি বেয়ারস্টোর কাঁধে লেগে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হয়। রিভিউ নিয়ে তা নষ্ট করে সাকিবের দল।
বাংলাদেশ ১৮তম ওভারে এসে প্রতিপক্ষের প্রথম উইকেটের পতন ঘটাতে পারে। সাকিবের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে লাইন মিস করেন শততম ওয়ানডে খেলতে নামা বেয়ারস্টো। ৫৯ বলে ৮ চারে ৫২ রান করে হন বোল্ড।
বাইশ গজে আগ্রাসী বেয়ারস্টো-মালান জুটি অনায়াসে রান নিতে থাকেন। মালান ৩৯ বলে খেলে পান ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি। শততম ওয়ানডে খেলতে নামা বেয়ারস্টো ফিফটি পাওয়ার আগেই উদ্বোধনী জুটিতে ইংলিশরা পায় শতরানের দেখা।
৩১-৩৫ এই পাঁচ ওভারে ঝড়ো গতির ব্যাটিংয়ে ৫২ রান যোগ করেন মালান ও রুট। এরমাঝেই ৯১ বল খেলে সেঞ্চুরির দেখা পান মালান। ২৩তম ওয়ানডেতে পেলেন ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা।
তাসকিনের করা ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে মিড অনে ঝাঁপিয়ে পড়া তাওহীদ হৃদয়ের আঙুলে লাগে বল। ব্যক্তিগত ১২৭ রানে জীবন পান মালান। ৩৬তম ওভারের শেষে শরিফুলের বলে বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডের হয়ে রেকর্ড গড়েন রুট। গ্রাহাম গুচের ৮৯৭ রান টপকে এখন তিনি বিশ্বকাপে ইংলিশদের সর্বাধিক রানের মালিক।
বিধ্বংসী মালানকে বোল্ড করে শেষপর্যন্ত ড্রেসিংরুমে স্বস্তি ফেরান শেখ মেহেদী হাসান। ভাঙে রুটের সঙ্গে তার ১৫১ রানের জুটি। ক্রিজ ছাড়ার আগে বাঁহাতি ব্যাটার ১০৭ বলে ১৬ চার ও ৫ ছক্কায় ১৪০ রানের ইনিংস খেলেন।
ঝলসে জস বাটলারকে বোল্ড করেন শরিফুল। ইংলিশ অধিনায়ক ১০ বলে এক চার ও এক ছক্কায় খেলেন ২০ রানের ইনিংস। ৪০ ওভারে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ২৯৮, ৩ উইকেট। শেষ ১০ ওভারে অবশ্য ৬৬ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি, উল্টো হারায় ৬ উইকেট।
৪২তম ওভারের শেষ দুই বলে শরিফুল হানেন জোড়া আঘাত। প্রথমে ৬৮ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৮২ রান করা রুট মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন। এরপর রানের খাতা না খুলেই বোল্ড হন লিয়াম লিভিংস্টোন।
হ্যারি ব্রুক ১৫ বলে ৩ চারে ২০ রান করে শেখ মেহেদীর বলে লংঅফে লিটন দাসের ক্যাচ হন। ৪৭তম ওভারে লংঅফে ১১ রান করা স্যাম কারেনের দুরন্ত ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ ওভারের প্রথম বলে তাসকিন চারের মার খেলেও পরেরটিতে ক্রিস ওকসকে ফেরান। শেষ পর্যন্ত ৩৬৪ রানে থামে থ্রি লায়ন্স দল।
বাংলাদেশের পক্ষে ৮ ওভারে ৭১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন শেখ মেহেদী। শরিফুল ১০ ওভারে ৭৫ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট পান তাসকিন ও সাকিব।