রোমাঞ্চকর এক ফাইনালের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের পর্দা নেমেছে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দেড়মাস ধরে চলা লড়াই শেষে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে অস্ট্রেলিয়া।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অনুমিত ছিল, দর্শকরা দেখতে চলেছে রান উৎসব, হয়েছেও তাই। বেশিরভাগ ম্যাচের ছিল চার ছক্কার ফুলঝুরি। মোট বাউন্ডারি সংখ্যা ছিল ২,২৩৯টি। ছক্কা হাঁকানোর দৃশ্য দেখা গেছে ৬৪৪ বার।
ভারতের মাটিতে হওয়া একদিনের ক্রিকেটের আসরটিকে ব্যাটারদের বিশ্বকাপ বলাটা মোটেও ভুল হবে না। একনজরে দেখা যাক সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে শীর্ষ দশ রান সংগ্রাহকের তালিকা।
১/ বিরাট কোহলি: আসরের অনেক কিছু অর্জন করলেও একমাত্র হারে শিরোপা হাতছাড়া করেছে ভারত। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রেকর্ডের বরপুত্র বিরাট কোহলি।
আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন কোহলি। ব্যাটিংয়ে অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দেখিয়ে ১১ ম্যাচে ৯৫.৬২ গড়ে ৯০.৩১ স্ট্রাইক রেটে তিন সেঞ্চুরি ও ছয় ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৭৬৫ রান।
কিংবদন্তি ব্যাটার শচীন টেন্ডুল্কারকে টপকে সেমিফাইনালে কিউইদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বাধিক ৫০সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়েন কোহলি। বিশ্বকাপে এক আসরে সবচেয়ে বেশি রানের মালিকও এখন কিং কোহলি। ২০০৩ বিশ্বকাপে ১১ ইনিংসে ছয় ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে শচীন করেছিলেন ৬৭৩ রান। ২০ বছর পর শচীনের রেকর্ডটি ভেঙেছেন ৩৫ বর্ষী ক্রিকেটার।
সাকিব আল হাসান ও শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসের মালিক এখন কিংবদন্তি ভারতীয় ব্যাটার। এপর্যন্ত কোহলির পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসের সংখ্যা ৯টি। যার মধ্যে রয়েছে তিন সেঞ্চুরি ও ছয়টি ফিফটি। ২০০৩ বিশ্বকাপে ছয়টি ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে সাতটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন শচীন। ২০১৯ বিশ্বকাপে পাঁচটি ফিফটি ও দুটি সেঞ্চুরিতে শচীনের পাশে নাম লেখান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব।
২/ রোহিত শর্মা: টানা সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে যেতে রোহিত দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যদিও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হেরে তার ট্রফি উঁচিয়ে ধরা হয়নি। টিম ইন্ডিয়ার প্রতিটি খেলোয়াড়কে উজ্জীবিত রেখে সবার কাছ থেকে সেরাটাই বের করে আনতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। ব্যাট হাতে ভারতের অধিনায়ক ১১ ম্যাচে ৫৪.২৭ গড়ে ১২৫.৯৪ স্ট্রাইক রেটে এক সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে ৫৯৭ রান করেছেন।
৩/ কুইন্টন ডি কক: সাউথ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক ব্যাটার বাইশ গজে ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। দলকে সেমিফাইনালে ওঠাতে বড় ভূমিকা রাখেন ওয়ানডে থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া ডি কক। তিনি ১০ ম্যাচে ৫৯.৪০ গড়ে চার সেঞ্চুরিতে ১০৭.০২ স্ট্রাইক রেটে তার সংগ্রহ ৫৯৪ রান।
৪/ রাচীন রবীন্দ্র: ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিউজিল্যান্ডের এ ক্রিকেটার বিশ্বকাপে দেখান তাক লাগানো পারফরম্যান্স। কিউইদের শেষ চারে নিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন ২৪ বর্ষী এ খেলোয়াড়। ১০ ম্যাচে ৬৪.২২ গড়ে ১০৬.৪৪ স্ট্রাইক রেটে তিন সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৫৭৮ রান।
৫/ ড্যারিল মিচেল: ৩২ বর্ষী এ ক্রিকেটার ছিলেন কিউইদের আরেক কাণ্ডারি। ১০ ম্যাচে নয় ইনিংসে ৬৯ গড়ে ১১১.০৬ স্ট্রাইক রেটে দুই সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৫৫২ রান।
৬/ ডেভিড ওয়ার্নার: অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণের সামনে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করেছেন। সফল হেক্সা মিশন সম্পন্ন করতে বাঁহাতি এ ব্যাটার ১১ ম্যাচে ৪৮.৬৩ গড়ে ১০৮.২৯ স্ট্রাইক রেটে দুই সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে করেছেন ৫৩৫ রান।
৭/ শ্রেয়াস আয়ার: টিম ইন্ডিয়ার টপ অর্ডারে আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা শ্রেয়াস বিশ্বকাপে নিজের জাত চেনান। ১১ ম্যাচে ৬৬.২৫ গড়ে ১১৩.২৪ স্ট্রাইক রেটে দুই সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে করেছেন ৫৩০ রান।
৮/ লোকেশ রাহুল: ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটার ১১ ম্যাচে ৭৫.৩৩ গড়ে ৯০.৭৬ স্ট্রাইক রেটে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে করেছেন ৪৫২ রান।
৯/ রসি ফন ডার ডুসেন: প্রোটিয়া এ ব্যাটার ১০ ম্যাচে ৪৯.৭৭ গড়ে ৮৪.৫২ স্ট্রাইক রেটে দুই সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে করেছেন ৪৪৮ রান।
১০/ মিচেল মার্শ: ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর পজিশনে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ভালো ফরমেই ছিলেন মার্শ। তিনি ১০ ম্যাচে ৪৯ গড়ে ১০৭.৫৬ স্ট্রাইক রেটে দুই সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে করেছেন ৪৪১ রান।