ভারতের বিপক্ষে খুব একটা বড় সংগ্রহ করতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বল্প সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে কোহলির রোমাঞ্চকর সেঞ্চুরিতে সহজেই জয়ের বন্দরে নোঙর করেছে ভারত। এ নিয়ে টানা চার ম্যাচেই জিতল রোহিত শর্মার দল। আর প্রথম ম্যাচে জয়ের পর টানা তিন পরাজয়ে সেমির আশা আরও ক্ষীণ হল বাংলাদেশের।
৩৯তম ওভার শেষে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৯ রান। সেঞ্চুরির জন্য কোহলিরও দরকার ছিল ১৯ রান। এরপরই ‘ওয়ান ম্যান শো’ দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা ব্যাটার। ৪০তম ওভারে একটি চার ও একটি ছক্কার পর শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক নিজের কাছে ধরে রেখেছিলেন কোহলি।
৪১তম ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৭ রান, আর কোহলির ৮ রান। হাসান মাহমুদ ওয়াইড দিলে রানে কমে আসে। এই ওভারে দুটি ডাবল ও শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফের স্ট্রাইক নিজের হাতে নেন কোহলি।
৪২তম ওভারে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল দুই রান আর কোহলির তিন। প্রথম বলটি ডাউন দ্য লেগে করেছিলেন নাসুম। তবে আম্পায়ার ওয়াইড দেননি। তৃতীয় বলে লংঅন দিয়ে ছক্কা মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কোহলি। ৯৭ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন কিংবদন্তি ব্যাটার।
পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ফেভারিট ভারতের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। দুই ওপেনারের রেকর্ড গড়ার পর বিশ্বকাপের হাজার রানের ক্লাবে পৌঁছান মুশফিকুর রহিম। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত ক্যামিওতে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেটে ২৫৬ রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে নেমে ৪১.৩ ওভারে ৭ উইকেটে সহজ জয় পায় ভারত।
বাংলাদেশের দেয়া ২৫৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ঝড়ো সূচনা উপহার দিয়ে ফিরেছেন রোহিত শর্মা। তার আগে অবশ্য বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মাইলফলকে সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে গেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। এই ম্যাচে নামার আগে চলতি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ব্যাটারদের মধ্যে বিশ্বকাপের রানের তালিকায় সবার উপরে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ৩২ ম্যাচে ১২০১ রান করে ছিলেন তালিকার ছয়ে। ১১৯৫ রান নিয়ে রোহিত ছিলেন সাতে। আর শীর্ষে ৪৫ ম্যাচে ২২৭৮ রান করা শচীন টেন্ডুলকার।
৪০ বলে ৪৮ রান করে হাসান মাহমুদের শিকার হয়ে ফেরেন রোহিত। এই রানের সুবাধে রোহিতের মোট রান ১২৪৩। উঠে এসেছেন তালিকার চারে। সাকিবের পাশাপাশি পেছনে ফেলেছেন ব্রায়ান লারা ও এবি ডি ভিলিয়ার্সকে।
টাইগার বোলারদের বিপক্ষে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাট করেছেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমন গিল। উদ্বোধনী জুটিতে ৮৮ রান তোলেন তারা। ১২.৪ ওভারে হাসান মাহমুদের বলে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত।
১৯.২ ওভারে দলীয় ১৩২ রানে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে গিলকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫৫ বলে ৫৩ রান করেন গিল। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে ফের আঘাত হানেন মিরাজ। এবারও মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ ধরে ফেরান শ্রেয়াস আইয়ারকে। ২৫ বলে ১৯ রান করেন আয়ার।
এরপর লোকেশ রাহুলকে নিয়ে নিজের সেঞ্চুরির পাশাপাশি ভারতের জয় নিশ্চিত করেন বিরাট কোহলি। ৯৭ বলে ১০৩ রানে কোহলি ও ৩৪ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল।
বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ নেন দুটি উইকেট, আর হাসান মাহমুদ নেন একটি।
এর আগে ব্যাটে নেমে পাওয়ার প্লেতে ভারতের বিপক্ষে ‘পাওয়ার’ ব্যাটিংয়ে বড় স্কোরের আভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম ধীর শুরুর পর ছিলেন দুর্দান্ত। ৯৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দ্রুত কিছু উইকেট হারিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে টিম টাইগার্স।
শুরুতে লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম ছিলেন খোলসবন্দি। পরে হাত খুলে পেটানো শুরু করেন। দুজনে বিশ্বকাপের মঞ্চে উদ্বোধনীতে বাংলাদেশের সর্বাধিক ৯৩ রানের জুটির রেকর্ড গড়েন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটির আগের রেকর্ডটি ছিল শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও মেহরাব হোসেন অপির। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা ৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন।
ভারত ম্যাচে বিশ্বকাপের হাজার রানের ক্লাবে পৌঁছেছেন মুশফিকুর রহিম। এ ম্যাচের আগে হাজারি ক্লাব থেকে ৪ রানে দূরে ছিলেন। পুনেতে সুযোগ হাতছাড়া করেননি টাইগার তারকা। ৩৩তম ম্যাচে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে হাজার রান ছুঁয়েছেন। বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে অংশ নিয়ে ২৪তম ব্যাটার হিসেবে মাইলফলকটি স্পর্শ করলেন মুশি। বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছেন একটি।
মুশফিকের আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে হাজারি ক্লাবে নাম লেখান সাকিব আল হাসান। টাইগার অলরাউন্ডারের হাজার ছুঁতে খেলতে হয়েছিল ২৭ ম্যাচ। ৩২ ম্যাচে সাকিবের বর্তমান রান ১,২০১। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তোলা ব্যাটারদের তালিকায় যা ষষ্ঠ। ৪৫ ম্যাচে ২,২৭৮ রান করে শীর্ষে আছেন ভারতীয় কিংবদন্তি সাবেক শচীন টেন্ডুলকার।
শুরুতে ব্যাটে নেমে মোহাম্মদ সিরাজ ও জাসপ্রীত বুমরাহর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ ১০ রানের বেশি তুলতে পারেনি। ১৩ বল মোকাবেলার পর রানের খাতা খোলেন লিটন। পরে রানের গতি বাড়তে থাকে। পরের ৫ ওভারে ৫৩ রান আনে বাংলাদেশ।
নবম ওভারে বোলিং আক্রমণে আসেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। তৃতীয় বলটি করতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান হার্দিক। গোড়ালিতে চোট পাওয়ার পর ব্যান্ডেজ করতে হয়। বেশ খানিকক্ষণ মাঠে তার সেবা চলতে থাকে। উঠে দাঁড়ানোর পর খোঁড়াতে থাকায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। হার্দিকের ওভারের বাকি তিন বল করেন বিরাট কোহলি। পরে আর মাঠেই নামেননি স্বাগতিক অলরাউন্ডার।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পাওয়া তানজিদ তামিম ৪৩ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৫১ রানের আগ্রাসী ইনিংস খেলে ফিরে যান কুলদীপ যাদবের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে। ২০তম ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে জাদেজার শিকার হন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৭ বলে ৮ রান করেন টাইগারদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
২৫তম ওভারের প্রথম বলে সিরাজের শিকার হন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৩ বলে ৩ রান করে যান তিনি। মিরাজ ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন দাস। ২৭.৪ ওভারে জাদেজার বল লংঅফে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন শুভমন গিলের হাতে। ৭ চারে ৮২ বলে ৬৬ রান করেন টাইগার ওপেনার।
৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে গিলের হাতে ধরা পড়েন হৃদয়। ৩৫ বলে ১৬ রান করেন মিডলঅর্ডার ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বাংলাদেশের দুইশ রান পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহিম। ৪২.৩ ওভারে দলীয় ২০১ রানে বুমরাহর শিকার হয়ে জাদেজার হাতে ক্যাচ দেন মুশি। ৪৬ বলে ৩৮ রান করেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।
৪৬.৫ ওভারে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ২৩৩ রানে নাসুম আহমেদকে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ। ১৮ বলে ১৪ রান করেন নাসুম। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৬ বলে ৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে যান। পরে শরিফুল ইসলামকে নিয়ে ইনিংস শেষ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর ১ রানে ও শরিফুল ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা, জাসপ্রীত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ। শার্দূল ঠাকুর, কুলদীপ যাদব নেন একটি করে উইকেট।