দেড়মাসের বেশি চলা ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ট্রফি উঁচিয়ে ধরার যাত্রায় অসাধারণ কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দেখা মিলেছে। সেসব স্মৃতির ফ্রেম দলগুলোর জয়ে রেখেছে বড় ভূমিকা। সবসময় হয়ত জয় আনতে পারেনি, তবে দর্শকদের বিলিয়েছে নির্মল আনন্দ। সেইসব পারফর্মারদের থেকে বেছে নেয়া হয়েছে সেরা একাদশ।
শক্তি-সামর্থ্যের সব রূপই দেখিয়েছেন খেলোয়াড়রা, ক্যানভাসে রং-তুলির আঁচড়ের মতো করে বিশ্বমঞ্চে ব্যাট-বলের দাপটে রাঙিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে সেরা ১১ বেছে নিয়েছে আইসিসি। সোমবার ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বকাপের সেরা একাদশ জানিয়েছে।
আসরের রানার্সআপ ভারতের সর্বাধিক ৬ জন সেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ২ জন আছেন। সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার একজন করে স্থান পেয়েছেন। রোহিত শর্মাকে করা হয়েছে অধিনায়ক। উইকেটরক্ষক বিবেচিত হয়েছেন কুইন্টন ডি কক।
কুইন্টন ডি কক (সাউথ আফ্রিকা/উইকেটরক্ষক): প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার বাইশ গজে ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। দলকে সেমিতে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। ১০ ম্যাচে ৫৯.৪০ গড়ে চার সেঞ্চুরিতে ১০৭.০২ স্ট্রাইক রেটে তার সংগ্রহ ৫৯৪ রান।
রোহিত শর্মা (ভারত/অধিনায়ক): টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে আসতে রোহিত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিরোপা উঁচিয়ে ধরা অবশ্য হয়নি। ভারত অধিনায়ক ১১ ম্যাচে ৫৪.২৭ গড়ে ১২৫.৯৪ স্ট্রাইক রেটে এক সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে ৫৯৭ রান করেছেন।
বিরাট কোহলি (ভারত): আসরে অনেককিছু অর্জন করলেও শিরোপা হাতছাড়া করেছে ভারত। তবে যাত্রাপথে দারুণ কেটেছে বিরাট কোহলির। টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রেকর্ডের বরপুত্র। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। যা এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে করেছেন ৫০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১১ ম্যাচে ৯৫.৬২ গড়ে ৯০.৩১ স্ট্রাইক রেটে তিন সেঞ্চুরি ও ছয় ফিফটিতে কোহলির সংগ্রহ ৭৬৫ রান।
ড্যারিল মিচেল (নিউজিল্যান্ড): ৩২ বর্ষী কিউ তারকা মিচেল ১০ ম্যাচে ৯ ইনিংসে ৬৯ গড়ে ১১১.০৬ স্ট্রাইক রেটে দুই সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে সংগ্রহ করেছেন ৫৫২ রান।
লোকেশ রাহুল (ভারত): উইকেটরক্ষক ব্যাটার ১১ ম্যাচে ৭৫.৩৩ গড়ে ৯০.৭৬ স্ট্রাইক রেটে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে করেছেন ৪৫২ রান।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া): অজি অলরাউন্ডার ৯ ম্যাচে ১৫০.৩৭ স্ট্রাইক রেটে ৬৬.৬৬ গড়ে একটি ডাবল সেঞ্চুরি, একটি সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিসহ করেছেন ৪০০ রান। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাত্র ৪০ বলে ম্যাক্সওয়েল করেন সেঞ্চুরি, যা ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম শতকের রেকর্ড।
বিশ্বকাপ তো বটেই, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হয়তো ওয়ানডে ইতিহাসেরই সেরা ইনিংসটা খেলেছেন ম্যাক্সওয়েল। ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের মুখে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। চোটে পড়া ম্যাক্সওয়েল অনেকটা এক পায়ের উপর নির্ভর করে ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে অজিদের ৩ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক হন। প্যাট কামিন্সের সঙ্গে গড়েন ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত): রানার্সআপ টিম ইন্ডিয়ার বাঁহাতি স্পিন-অলরাউন্ডার ১১ ম্যাচে ২৪.৮৭ গড়ে ৪.২৫ ইকোনমি রেটে ১৬ উইকেট নিয়েছেন।
জাসপ্রীত বুমরাহ (ভারত): স্বাগতিকদের পেস আক্রমণের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে লাগামের ভেতর রাখতে পেরেছিলেন। ১১ ম্যাচে ১৮.৬৫ গড়ে ৪.০৬ ইকোনমি রেটে পেয়েছেন ২০ উইকেট।
দিলশান মাদুশঙ্কা (শ্রীলঙ্কা): দশ দলের বিশ্বকাপে টেবিলের নয়ে থেকে আসর শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের টুর্নামেন্টে ভরাডুবির মাঝেও বল হাতে সফল ছিলেন মাদুশঙ্কা। লঙ্কান পেসার ৯ ম্যাচে ২৬ গড়ে ৬.৭০ ইকোনমি রেটে ২১ উইকেট নিয়েছেন।
অ্যাডাম জাম্পা (অস্ট্রেলিয়া): ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে লেগ স্পিনে ঝলক দেখিয়ে জাম্পা বেশ সফল। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট এনেছেন, ব্রেক থ্রুতে সফল। ১১ ম্যাচে ২২.৩৯ গড়ে ৫.৩৬ ইকোনমি রেটে ২৩ উইকেট তুলেছেন অজিদের হেক্সা শিরোপার মিশন সফল করতে।
মোহাম্মদ শামি (ভারত): প্রথম চার ম্যাচে একাদশে ছিলেন না শামি। চোটের কারণে টুর্নামেন্ট থেকে হার্দিক পান্ডিয়া ছিটকে যাওয়ায় কপাল খোলে। দুর্দান্ত ধারাল বোলিংয়ে টিম ইন্ডিয়ার পেসার ৭ ম্যাচে মাত্র ১০.৭০ গড়ে আসর সর্বাধিক ২৪ উইকেট নিয়েছেন।
অন্যরা যেখানে ৭০, ৮০ বা ৯০ ওভার বল করার সুযোগ পেয়েছেন, শামি বল করেছেন সবে ৪৮.৫ ওভার, ইকোনমি রেট ৫.২৫। তিনবার পেয়েছেন পাঁচ কিংবা তার অধিক উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৫৭ রানে ৭ উইকেট, সেমিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
**একাদশের পানি টানার দায়িত্ব পড়েছে সাউথ আফ্রিকার পেসার জেরাল্ড কোয়েটজের উপর।
বিজ্ঞাপন