ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ এক জয় পেল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াল লাল-সবুজের দল। টাইগারদের ওপেনিং জুটির সমস্যা সমাধানের বার্তাও দিয়েছেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম।
গৌহাটিতে শুক্রবার দিবারাত্রির ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। ৪৯.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে বোর্ডে জমা করে ২৬৩ রান। জবাবে বাংলাদেশ ৮ ওভার হাতে রেখেই ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
সাকিব আল হাসান প্রস্তুতি ম্যাচে নামেননি। বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তও দেননি নেতৃত্ব। মেহেদী হাসান মিরাজের অধিনায়কত্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বোলিং-ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও প্রস্তুতিটা ভালোই সেরেছে টিম টাইগার্স।
দীর্ঘ সময় ধরে ওপেনিং জুটি নিয়ে ভুগছে বাংলাদেশ। লম্বা ক্যারিয়ারে যোগ্য সঙ্গী স্থায়ীভাবে পাননি তামিম ইকবাল। অনেক নাটকীয়তার পর দেশসেরা ওপেনার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই। তাতে বিশ্ব আসরে কম্বিনেশন ঠিক করা নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই গিয়েছিল।
বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে যেন বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির সমাধানটা পাওয়া গেল। ১৩১ রানের জুটি গড়ে সেই বার্তাই দিলেন লিটন ও তানজিদ।
ফর্মে ফেরা লিটন ৫৪ বলে ১০ চারে ৬১ রান করেন। শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের জন্য নন্দিত ডানহাতি এ ব্যাটারের রান খরা টাইগার সমর্থকদের কপালে ফেলেছিল দুশ্চিন্তার ভাঁজ। হেমন্তর বলে পাথিরানার শিকার হওয়ার আগে যেন অফফর্মকে তিনি ঝেটিয়ে বিদায় করার প্রত্যয় নিয়েই খেললেন ছন্দময় ইনিংস।
এশিয়া কাপে অভিষিক্ত তানজিদ চার ওয়ানডে খেললেও নিজের জাত চেনাতে ব্যর্থ হন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটার আজ ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে জানান দিলেন বিশ্বআসরের জন্য তিনি প্রস্তুত। সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও তা আদায় করতে পারেননি। লাহিরু কুমারার বলে চারিথ আসালাঙ্কার হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ৮৮ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৮৪ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন।
রানের খাতা খোলার আগেই অবশ্য তাওহিদ হৃদয় সাজঘরে ফেরেন। দিনুথ ওয়েলাগের বলে কুশল পেরেরার গ্লাভসবন্দি হন।
চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৪ রানের জুটি গড়ে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে অনায়াসে বাকি পথটা পাড়ি দেন অধিনায়কত্ব করা মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা মিরাজ ৬৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন। মুশফিক দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ার আগে খেলেন ৪৩ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ৩৫ রানের ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে একটি করে উইকেট নেন লাহিরু কুমারা, দিনুথ ওয়েলাগে ও দুশান হেমন্ত।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নেয়া শ্রীলঙ্কার হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৬৪ রান যোগ করেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। ২৪ বলে ৬ চারে ৩৪ রান করার পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন নিশাঙ্কা।
দলীয় ১০৪ রানে প্রতিপক্ষের প্রথম উইকেট তুলতে পারে বাংলাদেশ। নাসুমের বলে ৩ চারে ২২ রানে সাজঘরে ফেরেন কুশল মেন্ডিস।
পরে লঙ্কানরা দ্রুত আরও ২ উইকেট হারায়। নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দেন সামারাবিক্রমা। ফিফটি পাওয়া নিশাঙ্কা ৬৪ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৬৮ রান করে শেখ মেহেদী হাসানের বলে ফিরতি ক্যাচ দেন।
চারিথ আসালাঙ্কা ১৮ রান করে মিরাজের ক্যাচ হন। শানাকা ক্রিজ ছাড়ার সময় শ্রীলঙ্কার স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৭৭ রান।
ষষ্ঠ উইকেটে ৪১ রান যোগ করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও দিমুথ করুণারত্নে। ধনঞ্জয়া ফিফটি পাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের থ্রোয়ে ১৮ রান করা করুণারত্নে হন রান আউট।
৭৯ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ৫৫ রানের ইনিংস খেলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হন ধনঞ্জয়া। খানিক পর ১০ রান করে রান আউট হন দিনুথ ওয়েল্লাগে। দুশান হেমন্তকে সাজঘরে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব। তাতেই ২৬৩ রানে থামে শ্রীলঙ্কা।
৯ ওভারে ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা শেখ মেহেদী। তানজিম, শরিফুল, মিরাজ, নাসুম বল ঘুরিয়ে একটি করে উইকেট নেন।
আগামী ২ অক্টোবর গৌহাটিতে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।