
সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র-সিআরপি) এর একাডেমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই)-এর অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চব্বিশজন শিক্ষার্থী যারা অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত দুজন শিক্ষক খাদিজা আক্তার লিলি এবং মো: সাদ্দাম হোসেনের তত্ত্বাবধানে কমিউনিটি বেসড রিহ্যাবিলিটেশন (সিবিআর) প্লেসমেন্ট সম্পন্ন করতে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করে।
অকুপেশনাল থেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধকতায় শিকার এমন ব্যক্তিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য উল্লিখিত উপজেলার নয়টি গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে শিক্ষার্থীরা জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। আর এই কার্যক্রমে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে বেলা রিহ্যাবিলিটেশন সলিউশন পয়েন্ট।
জরিপের আওতায় নয়টি গ্রাম যথাক্রমে অলহরি, জয়দা, দুর্গাপুর, নিজবাখাইল, কোনাবাখাইল, খাঁগাটি, কালাইপাড়, লাঙ্গল- শিমুল এবং ঘুঘুরার চালা। গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করে তারা বিপুলসংখ্যক প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধকতার শিকার জনগোষ্ঠীকে খুঁজে পায়।
এই জরিপে প্রায় ৩৩২ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সনাক্ত হয়, যার ৪৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ শতাংশ মহিলা। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী তাদের মধ্যে ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ শারীরিক
অক্ষমতা যেমন: স্ট্রোক, গুলেন- বারি সিন্ড্রোম, মেরুরজ্জু আঘাত, ক্লাবফুট, অঙ্গবিচ্ছেদ, হাতের বিকৃতি, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যথা ইত্যাদি), শ্রবণ প্রতিবন্ধী ২ দশমিক ৭ শতাংশ, বাক প্রতিবন্ধী ১ দশমিক ২ শতাংশ, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী ২ দশমিকন ৪ শতাংশ, ডাউন সিনড্রোম ০ দশমিক ৯ শতাংশ, সেরিব্রাল পালসি ৬ দশমিক ০ শতাংশ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৫ দশমিক ১ শতাংশ, বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, একাধিক প্রতিবন্ধকতার শিকার ৬ দশমিক ০ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য তারা ছিলেন মাত্র একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে তারা ২৪ জন প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। অকুপেশনাল থেরাপির পাশাপাশি সেই সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন ও পরনির্ভরশীলতা দূর করার জন্য এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে বিভিন্ন লোকাল রিসোর্স ব্যবহার করে তৈরি করেন সহায়ক ডিভাইস যেমন: স্প্লিন্ট, সাপোর্টিভ
সিটিং, মডিফাইড এডিএল’স ইকুইপমেন্ট, ওয়াকিং ফ্রেম, মডিফাইড সিটিং চেয়ার ইত্যাদি এবং রোগীর প্রয়োজন অনুসারে পরিবেশগত পরিবর্তন যেমন: র্যাম্প, হোম এন্ড ওয়ার্কপ্লেস মডিফিকেশন ইত্যাদি করেন।
এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ঘিরে নানা সামাজিক বাধা (কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা/ বিশ্বাস, খারাপ আচরণ ইত্যাদি) দূরীকরণ ও প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধের উপায় এবং তাদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে অবগত করার জন্য বোরহানুদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, বেলা রিহ্যাবিলিটেশন সলিউশ পয়েন্ট এবং ময়মনসিংহ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি- এ তিনটি সচেতনাতামূলক প্রোগ্রাম এবং তিনটি উঠান বৈঠকসহ মোট ছয়টি সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করেন, তাছাড়াও সেখানে অকুপেশনাল থেরাপি এবং পুনর্বাসন চিকিৎসার গুরুত্বসহ অকুপেশনাল থেরাপির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই)এর অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের সম্মানিত লেকচারার খাদিজা আক্তার লিলি জানান, অকুপেশনাল থেরাপি একটি বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা যা একজন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা দূর করার মাধ্যমে তাকে দৈনন্দিন কাজে যথাসম্ভব স্বর্নিভর করার লক্ষ্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশে ৪০৮ জন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট রয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
বিজ্ঞাপন
আমাদের দেশে ৬৪ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মাত্র একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। লেকচারার মো: সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমাদের দেশে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে দেশের প্রতিটি প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে, এজন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিত করে, তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে অকুপেশনাল থেরাপির কোনো বিকল্প নেই।
বেলা রিহ্যাবিলিটেশন সলিউশন পয়েন্টের সম্মানিত ডিরেক্টর প্রিন্সিপাল শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ত্রিশাল উপজেলায় এমন হাজারো ব্যক্তি আছেন যারা বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার। শিক্ষার্থীরা আমাদের গ্রামে যে অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে তার জন্য আমি এবং বেলা রিহ্যাবিলিটেশন সলিউশন পয়েন্ট চির কৃতজ্ঞ। শুধুমাত্র ত্রিশালে নয় সমগ্র দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজে সর্বোচ্চভাবে সক্ষম করে তুলতে অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই বলেই আমি মনে করি।
বিজ্ঞাপন