আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা যথাসময়ে কাজে লাগিয়ে যারা দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ কাজ করেন তারাই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকেন এবং নুরুদ্দিন মাহমুদ কামাল নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে একজন।
তার স্মৃতি কথা ছোট আকারে প্রকাশ করা সম্ভব নয় তবে এটুকু বললে অত্যুক্তি হবে না যে নুরুদ্দিন মাহমুদ না থাকলে, বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বর্তমান পর্যায়ে আসতো কিনা তা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান হতো। মূল প্রতিপাদ্য হলো তার শিক্ষাগত বিষয় “ভূ -তত্ত্ব”, যে বিষয়ে পড়াশোনা করে তিনি তার দেশের সাথে তাত্ত্বিক ধারণা মিলিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে একটি অনন্য স্তরে নিয়ে যেতে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন ।
স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে অধীর আগ্রহে ছিলেন দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যা তিনি পেয়ে গেলেন বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনে বিদ্যুৎ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগে উপপ্রধান হিসেবে যোগ দিয়ে। এরপর আর কামালকে পিছে তাকাতে হয়নি । কামাল কখন ই নিজেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অযথা জাহির করতে চাননি, কিন্তু সেই দুঃসাহসী জীবনে যাদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন, স্বাধীনতা উত্তর কালে তাদের অনেকেই জাতির পথ চলায় নেতৃত্বে দিয়েছেন এবং তার পুরো সুযোগটাই কামাল নিয়েছে -কখনোই নিজের জন্য নয় বরং দেশে জ্বালানি খাতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাথমিক পর্যায়ে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জ্বালানি খাতে যে অস্থিরতা দেখা দেয় তাতে তখন পর্যন্ত প্রচলিত জ্বালানি উৎস ,তেল ও কয়লা, থেকে গ্যাসে জ্বালানি উৎস পরিবর্তন অনস্বীকার্য হয়ে পড়লে দেশের মৌজুদ গ্যাসক্ষেত্র গুলি দ্রুত উন্নয়ন এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা প্রাধিকার পর্যায়ে চলে আসে আর তখনই নুরুদ্দিন কামাল তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে জ্বালানি খাতকে নতুন আঙ্গিকে নূতন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জ্বালানির প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও সরবরাহের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সমূহ শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন; কারণ দেশের প্রশাসনিক কর্তা নেতৃবৃন্দের কাছে নুরুদ্দিন মামুদ কামাল একটি পরিচিত নাম ছিল যারা নির্দ্বিধায় তার কর্মসূচি অনুমোদন করতে পারতেন।
পরিকল্পনা কমিশনে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগে নুরুদ্দিন কামালের সঙ্গে যোগ্য সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করেছেন তারা সবাই তাকে শর্তহীন সাহায্য সহযোগিতা করেছেন যা তিনি নিজেও সব সময় বলতেন এবং তাদের অনেককেই তিনি জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পদে অধিষ্ঠিত করতে সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের অদম্য প্রচেষ্টায় পেট্রোবাংলা , তিতাস বাখরাবাদ ,জালালাবাদ ডেসকো ,দেশা ,আর ই বি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং কর্পোরেট খাতে সরকারের ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন ধারা সূচিত হয় যা বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক দেশেই পুনাবৃত হয়েছে। কর্মজীবনে কামাল একদিকে যেমন অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ ,সাইদুজ্জামান মুহিত, আল হোসাইনি ,এইচ কে সাদেক ,হেদায়েত আহমেদ সহ অসংখ্য মেধাবী কর্মঠ ও দেশ প্রেমিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, অন্যদিকে অনেক স্বনামধন্য পেশাজীবীর ব্যক্তিগত সাহায্যে ও সাহচর্য্যে তিনি তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন ,তাদের প্রতি যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে ই। নুরুদ্দিন কামাল তাঁর কারিশমা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন বলে কোন ঘটনার নজির নেই। তার যোগাযোগ শক্তি পুরোটাই তিনি দেশের জ্বালানি খাতের জন্য ব্যয় করেছেন ।এটা স্পষ্ট যে প্রশাসনিক মহলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও আন্ত মন্ত্রণালয় কর্ম সূচিতে তিনি যেমন স্পষ্টবাদী উৎসাহী এবং এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী ছিলেন , পক্ষান্তরে মাঠ পর্যায়ে ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বৃন্দের সঙ্গে একটি আশ্চর্য সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে পেরেছিলেন _যা সচরাচর উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে দেখা যায় না এবং এই দ্বিমূখী আন্তলোক যোগাযোগ ব্যবস্থা আজ জ্বালানি খাতকে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে এনেছে। নুরুদ্দিন কামালকে এজন্যই মনে রাখতে হবে।
ব্যক্তিগতভাবে ভূতত্ত্ববিদ, মুক্তিযোদ্ধা ,পরিকল্পনা কমিশনের উপ প্রধান হয়ে শুরু করে সরকারের যুগ্ম সচিব অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে কাজ করে ,পারিবারিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা সদস্য সমৃদ্ধ, বন্ধুবান্ধব সহপাঠী সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে দেশের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তা ও নেতৃত্বের সাথে যোগসূত্র নিয়ে নুরুদ্দিন কামাল তাঁর নিজস্ব ক্ষুদ্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের উর্ধে উঠে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তিস্থাপন উন্নয়ন ও পরিচালনায় জন্য যে অবদান রেখে গেছেন ,তা বিস্মৃত হলে একটি সত্যকে অস্বীকার করা হবে।আর এজন্যই ,নুরুদ্দিন মাহমুদ কামালকে মনে রাখতে হবে।
নুরুদ্দিন মাহমুদ কামালকে আল্লাহ তায়ালা চিরশান্তিতে রাখুন।