প্রথমবার বড় পর্দায় পা রেখেই বাজিমাত করেছেন অভিনেতা আফনার নিশো। ‘সুড়ঙ্গ’ দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হল। তার নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে। সেখানে সিনেমা হল না থাকায় এলাকাবাসী ঈদের দিন থেকে অস্থায়ী হল তৈরি করে টিকিটের বিনিময়ে ‘সুড়ঙ্গ’ দেখাচ্ছে!
এমন উদ্যোগ প্রশংসা পাচ্ছে সিনে অঙ্গনেও। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যার পর আয়োজকদের আমন্ত্রণে ভূঞাপুরে যান নিশো। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ‘সুড়ঙ্গ’ ছবির পরিচালক রায়হান রাফী ও নায়িকা তমা মির্জা।
ভূঞাপুর স্কুল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিশোকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এসময় দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার নিশো ভক্তদের দেখা যায়। অনুষ্ঠানে সবার উদ্দেশে কথা বলেন নিশো, রাফী ও তমা। শুধু সিনেমা নিয়েই নয়, কথা বলার এক পর্যায়ে নিশো স্মৃতিকাতর হয়ে উঠেন তার প্রয়াত বাবাকে নিয়ে।
নিশো বলেন,“দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় জগতে কাজ করছি। নাটক করেছি। কিন্তু এই প্রথমবার আমি সিনেমায় অভিনয় করলাম। সারা দেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন। এখানে আমার বাড়ি। আমার বাবার ভিটা এখানে। এই অঞ্চলের মানুষের কথা যদি বলি, আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন- তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”
অস্থায়ী হল বানিয়ে সিনেমা দেখানোর আয়োজন করায় এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিশো বলেন,“এরকম ঘটনা আমি কখনও শুনিই নাই যে, এলাকাবাসী মিলে অস্থায়ী একটা হল বানিয়ে সিনেমা চালাচ্ছে! এটা বোধহয় ভূঞাপুরের মানুষের দ্বারাই সম্ভব। সবাই মিলে যে অস্থায়ী সিনেমা হল বানিয়ে আমার সিনেমা দেখছেন, এটা আমাকে দায়িত্ববোধের জায়গায় আরও দৃঢ় করে। একই সঙ্গে আপনাদের এমন ভালোবাসা আমাকে প্রশ্নবৃদ্ধ করে, ভাবায় যে- আমার এলাকাবাসী তো আমার জন্য অনেক কিছু করে বা করছে; আমি কি আমার এলাকার মানুষের জন্য সেরকম কিছু করতে পারছি!নাকি দূরে দূরেই বসে আছি!”
নিশো বলেন,“এখানে অনেকেই একটা দাবি করেছেন যে, আমি যেন মাঝে মাঝে ভূঞাপুর আসি। প্রতি মাসে না হোক, দুই মাসে না হোক- অন্তত ঈদে যেন এলাকাবাসীর সাথে দেখা করতে আসি। এখন থেকে সেটা হবে।”
তবে প্রয়াত বাবার কবরে প্রায়শই একা একা আসেন জানিয়ে নিশো বলেন,“আমার বাবার কবর এখানে। আমি কিন্তু মাঝমধ্যেই এলাকায় আসি। গভীর রাতে একা গাড়ি চালিয়ে বাবার কবরের পাশে আসি। কবর জিয়ারত করে একাই চলে যাই। আমি চাই না অনেকে জানুক। এটা আমার আর আমার বাবার অনুভূতি।”
বাবার প্রসঙ্গ উঠতেই এসময় নিশোকে বলতে শোনা যায়, “আমার প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’র কারণে এলাকায় সবার সামনে আসছি। এই দিনেও বাবাকে খুব বেশী মনে পড়ছে। আজকে আমি বড় পর্দায় কাজ করছি। আমার বাবা থাকলে কতো যে খুশী হতো! আমার বাবাকে আমি দুই সময়ে ঠিকঠাক বুঝতে পেরেছিলাম, এক- আমি যখন নিজে বাবা হইছি। দুই- যখন আমার বাবা চলে গেছেন! আপনারা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের বলি- বাবা-মায়ের প্রতি যে দায়িত্ব সেটা ঠিকভাবে পালন করবেন। তাদেরকে সব সময় বুকের ভেতরে রেখে দিবেন। তাদের কখনও হারতে দিবেন না। তাদের কখনও কষ্ট দিবেন না।”
নিশোর জন্মস্থান ভূঞাপুরে একসময় দুটি সিনেমা হল ছিলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন একটিও অবশিষ্ট নাই। তাই এলাকাবাসী এসময় সিনেমা হলের জন্য নিশোর কাছে অনুরোধ করলে সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিনেমার মানুষ হয়েই গেছি, অদূর ভবিষ্যতে আমার এলাকা ভূঞাপুরে সিনেমা হল বানানো আমার দায়িত্বের মধ্যেও বর্তায়। সিনেমা হল আমরা বানিয়ে ছাড়বো।’
এসময় টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনের উদ্দেশে নিশো বলেন, ‘আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি কারো উপকারে না লাগলেও যেন কখনই অপকারে না আসি। আমার বাবার ভিটা এবং আপনাদের মানসম্মান যেন বজায় রাখতে পারি।’