ফিফা নারী বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কয়েকঘণ্টা আগে নিউজিল্যান্ডে বন্দুকধারীর গুলিতে দুজন নিহতের বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছে ফিফা। ঘটনার পর অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল বলেও জানিয়েছে ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২২ মিনিটে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের উদ্বোধনী ম্যাচের আগে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। এবারের বিশ্বকাপে যৌথ আয়োজক তাসমানপাড়ের দুই প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।
বিবৃতিতে ফিফা বলেছে, ‘নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে সকালের ঘটনার পর যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি ফিফা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় যারা আহত হয়েছে, তাদের জন্য আমাদের প্রার্থনা রইল।’
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আমরা নাস্তার পর ফ্যান জোনে নেমেছিলাম। সেখানে সমর্থক এবং শিশুরা ছিল। এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ফ্যান জোনের রাস্তার পাশেই ঘটেছে।
নিউজিল্যান্ড পুলিশ টুইটারে জানিয়েছে, ‘অকল্যান্ডের সিবিডিতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। আমরা নিশ্চিত করছি দুজন নিহত হয়েছেন। হামলাকারী পুরুষ অপরাধীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ বন্দুকধারীকে গুলি করেছে নাকি সে আত্মহত্যা করেছে, তা স্পষ্ট নয়।’
উদ্বোধনী ম্যাচের ভেন্যু ইডেন পার্কের কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ম্যাচের আগে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে এবং টিকিটধারীদের তাড়াতাড়ি স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর জন্য উৎসাহিত করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সানি প্যাটেল বলেছেন, বন্দুকধারী সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশ এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং রাস্তা বন্ধ করে দেয়। লোকটি ভবনের মধ্য প্রবেশ করে সেখানে উপস্থিত লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল এবং জাতীয় নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করেনি।
বিবৃতিতে প্যাটেল বলেন, ‘ভবনের উপরের দিকে পৌঁছানোর পর বন্দুকধারী নিজেকে লিফটের মধ্যে ধারণ করেছে এবং আমাদের সদস্যরা তাকে ধরার চেষ্টা করেছিল। বন্দুকধারী তখন আরও গুলি চালিয়েছিল এবং কিছুক্ষণ পর তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।’
নিউজিল্যান্ড ফুটবল বিবৃতিতে বলেছে, ইডেন পার্কে বৃহস্পতিবার রাতের খেলার প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে।
ঘটনাস্থলের কাছেই হোটেলে অবস্থান করছিল নরওয়ে ফুটবল দল। পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে নরওয়ের অধিনায়ক মারেন মেজেলদেব বলেন, ‘হোটেলের জানালার বাইরে হেলিকপ্টার ঘোরাঘুরি করার সময় দ্রুত আমাদের সবার ঘুম ভেঙে যায়। বিপুল সংখ্যক জরুরি যানবাহন এসে পৌঁছায়। আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি কী ঘটছিল। পরবর্তীতে টিভি এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারি।’
‘আমরা পুরো সময় নিরাপদ বোধ করেছি। হোটেলে ফিফা একটি ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে। আমাদের স্কোয়াডে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা আছেন। সবাই শান্ত আছি। আমরা রাতে খেলার জন্য স্বাভাবিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারপর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা থাকলে সেটির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নেয়া লাগতে পারে।’
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘হামলাটি জাতীয় নিরাপত্তার হুমকির সাথে যুক্ত নয় এবং হামলার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। পরিকল্পনা অনুযায়ী টুর্নামেন্ট এগিয়ে যাবে। নিউজিল্যান্ড এবং দর্শকদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।’
অকল্যান্ডের মেয়র ওয়েন ব্রাউনের বলেন, ‘ফিফার সমস্ত কর্মী এবং ফুটবল দল নিরাপদে আছে। নগরীর ইডেন পার্কে উদ্বোধনী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের মধ্যে।’
ক্রীড়ামন্ত্রী গ্রান্ট রবার্টসন বলেছেন, ‘এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’