চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

তিন শিল্পীর কণ্ঠে ঈদের গান

সময়ের সাথে সাথে ঈদের আনন্দে যুক্ত হয়েছে নানা মাত্রিকতা। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর নানা আয়োজন, গান, নাটক সবকিছু ঈদের আনন্দকে করে বর্ণিল। এবারে ঈদের মানুষের মনে আনন্দের দোলা দিয়েছে একটি নতুন গান-‘খুশির জোয়ারে আজ ভেঙে যায় বাঁধ, নীলাকাশে দেখা দিল শাওয়ালের চাঁদ’!

কবি রামচন্দ্র দাসের কথায় গানটির সুর করেছেন জনপ্রিয় শিল্পী নির্ঝর চৌধুরী। শাহরিয়ার রাফাতের সংগীত আয়োজনে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন নির্ঝর চৌধুরী, শাহরিয়ার রাফাত এবং শান শায়েক।

শান শায়েকের পরিচালনায় মিউজিক ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের গীতিকার রামচন্দ্র দাস বলেন, গানটি আমি লিখি ২০০৩ সালের দিকে। আমি তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমার পদের দায়িত্বসূত্রে আমি সেখানকার উপজেলা কমপ্লেক্স মসজিদ ও উপজেলা সদরের ঈদগাহ ময়দানের ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত ছিলাম। এ ছাড়া রমজানের ঈদের চাঁদ দেখা কমিটির সাথেও যুক্ত ছিলাম। কর্মজীবনে আরো অনেক জায়গাতেই এ দায়িত্বগুলো আমি পালন করার সুযোগ পেয়েছি। তবে শুধু পদের দায়বদ্ধতার কারণেই নয়, ভালো লাগার জায়গা থেকে বরাবরই ধর্মীয় বিষয়গুলির প্রতি ছিল আমার বিশেষ আগ্রহ। ছোটবেলা থেকেই আমাদের গ্রামে আমরা হিন্দু মুসলিম এক সাথে মিলে মিশে সকল আনন্দ-উৎসব উদযাপন করে এসেছি। শৈশব থেকেই আমাদের চেতনার জায়গাটিই ছিল ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ এটাই তো আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের শাশ্বত বৈশিষ্ট্য।
সেই চেতনার পাশাপাশি গান লেখা এবং তাতে সুর দেয়া আমার বরাবরের শখ। সেই শখ পূরণে বিভিন্ন পার্বনকে কেন্দ্র করে আমি অনেক গান লিখেছি। রমজানকে নিয়ে আমার আছে, দুর্গাপুজা নিয়ে আছে। সেই ধারাতেই দেশের প্রধানতম উৎসব এই ঈদকে নিয়ে আমার গান ও কবিতা আছে। আমি চাঁদরাত্রির বাঁধভাঙা উচ্ছাস দেখেছি, সে উচ্ছ্বাসে শামিল হয়েছি। এ সকল ভালোলাগার প্রকাশ হিসেবে আমি এ গানটি লিখি ও সুরারোপ করি। আমাদের নিজস্ব পরিমন্ডলে ঈদের অনেক অনুষ্ঠানে এ গানটি আমি গেয়েছিও। সেই সময় অনেকেই গানটিকে নিয়ে তাদের ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের রমজানের ঈদের আগে শিল্পী নির্ঝর চৌধুরী আমার কাছে এসে গানটি তার নিজের মত করে গাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। এরপর তিনি তার সাথে শিল্পী শান শায়েক ও রাফাতকে নিয়ে নতুনভাবে গানটির অডিও রেকর্ড ও ভিডিও করেন। দর্শকরা সেটা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। এটা আমারও ভালোলাগার বিষয়।

কবি, গীতিকার, সুরকার রামচন্দ্র দাস গানটি নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে বলেন, আমি চাই গানটির বহুল প্রচার। রমজানের ঈদ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’ গানটির কথা জানি আমরা সবাই জানি যা এই ঈদের অনিবার্য অনুষঙ্গ, ঈদের ঘোষণা দেয়। আমার প্রত্যাশা আমার এ গানটিও ধীরে ধীরে মানুষের কাছে পৌঁছাক। চাঁদরাত্রির যে অনন্ত উচ্ছাস আমি দেখেছি, সে উচ্ছাসের স্রোতে মিশে এ গানটি সবার কাছে পৌঁছে যাক- এটা আমার গভীর প্রত্যাশা।

গানটির সুরকার ও শিল্পী নির্ঝর চৌধুরী কথা বলেন গানটি নিয়ে তার ভালো লাগার কথা, ‘ঈদ মোবারক গানটি গীতিকার রাম চন্দ্র দাস আমার খুব শ্রদ্ধার মানুষ। আমার সহশিল্পী শান ও রাফাত দুইজনই আমার খুব কাছের বন্ধু। গানটার শুটিং ও আমরা করেছি খুব মজা করে। ২৫ কি ২৬ শে রমজানের রাতে এলিফ্যান্ট রোডের আশেপাশে রিকশায় ঘুরে ঘুরে শুটিং করে খুব মজা পেয়েছি। সেইদিন সবাই সেহরী করেছিলাম বাইরে। স্টার কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্টে। শুটিং এর একটা মজার ঘটনা বলি। আমার আর রাফাতের বাড়ি একদম পাশাপাশি। শুটিং এর কিছু অংশ হয়েছিল রাফাতের স্টুডিওতে। সেখানে হঠাৎ আমাদের মনে হল পরিবারের সবাই মিলে ঈদ পালন করছি এমন একটা দৃশ্য থাকলে মন্দ হয় না। ভাবামাত্রই পাশে আমার বাসা থেকে আমার মা, বোন আর চাচাত ভাইকে ধরে এনে বসিয়ে দিলাম ক্যামেরার সামনে। বেশ মজা করেই পুরো গানটার কাজ শেষ হয়েছিল। দর্শক শ্রোতার ভাল লাগলে আমাদের এই শ্রম সার্থক হবে।’