বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে সমুদ্রে জমা করার একটি নতুন উপায় বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই অভিনব পদ্ধতিটি বর্তমান পদ্ধতির তুলনায় তিনগুণ বেশি দক্ষতার সাথে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম হবে। এই পদ্ধতিতে উষ্ণায়ন গ্যাস সোডার বাইকার্বোনেটে রূপান্তরিত হতে পারে এবং নিরাপদে স্বল্প দামে সমুদ্রের জলে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতি কার্বন অপসারণ প্রযুক্তি স্থাপনের গতি বাড়াতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব যখন কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন সীমিত করতে এবং কমাতে সংগ্রাম করেছে, বেশ কয়েকটি কোম্পানি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের প্রযুক্তি উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে।
কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের জন্য সুইজারল্যান্ডের ক্লাইমওয়ার্ক সবচেয়ে বেশি পরিচিত। গত দশ বছরে বায়ুমণ্ডল থেকে বাতাসের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার জন্য মেশিন তৈরি করেছে যা কার্বন ডাই অক্সাইড অণুগুলিকে ফিল্টার করে এবং আটকে রাখে।
আইসল্যান্ডের একটি প্ল্যান্টে ধারণ করা কার্বন ডাই অক্সাইড গভীর ভূগর্ভে প্রবেশ করানো হয় যেখানে এটি স্থায়ীভাবে পাথরে পরিণত হয়। সম্প্রতি মাইক্রোসফট, স্পটিফাই এবং স্ট্রাইপ সহ বড় কর্পোরেট কোম্পানির কাছে এই প্রত্যায়িত কার্বন অপসারণ পরিষেবা বিক্রি শুরু করেছে।
তবে বর্তমান সময়ে এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা প্রকল্পের ব্যয়।
কার্বন ডাই অক্সাইড একটি শক্তিশালী উপাদান হিসাবে বায়ুমণ্ডলে প্রতি মিলিয়ন (পিপিএম) বাতাসে প্রায় ৪০০ গুণ বেশি মিশ্রিত হয়। তাই বড় মেশিনের জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয় কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ এবং নিষ্কাশনের জন্য।
প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নতুন পদ্ধতি ‘অফ-দ্য-শেল্ফ রেজিন’ এবং অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার করে যা অনেক বেশি দক্ষতা এবং কম খরচে কার্বন ডাই অক্সাইড নিষ্কাশনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এই প্রকল্পের গবেষণা দল পানিতে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি নির্বাচন করে এবং বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের জন্য বিদ্যমান উপকরণগুলিকে “টুইক” করেছে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন হাইব্রিড শোষণকারী উপাদান বিদ্যমান পদার্থের চেয়ে তিনগুণ বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেহাই ইউনিভার্সিটির গবেষক অধ্যাপক অরূপ সেনগুপ্ত বলেন, এমন কোনও শোষণকারী উপাদান নেই যা ১ লাখ পিপিএম এবং ৪০০ পিপিএমের সরাসরি বায়ু ধারণ করে। একটি উচ্চ পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার সহজ পদ্ধতি যা অল্প ব্যয়ে কাজ করবে।
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এই পদ্ধতির সফলতা প্রমাণ পেয়েছে।
অধ্যাপক সেনগুপ্ত বলেন, এই নতুন পদ্ধতিটি ১০০ ডলারেরও কম খরচে বায়ু থেকে প্রতি টন কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করতে পারে।