ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে দেশটির অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তররাঞ্চলে লাগাতার অভিযান চালানোর পর এবার এই উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এমন ঘোষণার পর এই অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছে বিশ্বনেতারা।
বিবিসি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তররাঞ্চলে টানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ঘর-বাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি বর্তমানে এই উপত্যকার দক্ষিনের মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। নেতানিয়াহুর ঘোষণা অনুযায়ী নতুন করে এই অঞ্চলে হামলা শুরু হলে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনির জীবন হুমকির মুখে পড়বে, তাই ইসরায়েলের এই অভিযান বন্ধের জন্য জোর আহ্বান জানাচ্ছেন বিশ্বনেতারা।
নেতানিয়াহুর ঘোষণা
গত বুধবার আন্তর্জাতিক সকল চাপকে প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, তার সৈন্যরা গাজার রাফাহ শহরের দিকে অগ্রসর হবেই। একইসঙ্গে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী দল হামাসকে অবশ্যই দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহর থেকে নির্মূল করতে হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করব এবং এর মধ্যে রাফাহ শহরের বিষয়ে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমরা বেসামরিক জনগণকে যুদ্ধের অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর রাফাহতে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হামাসের প্রস্তাব
এর আগে গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে বিরতি টানতে একটি প্রস্তাব দেয় হামাস, এতে সংঘাত সাড়ে ৪ মাস বন্ধের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। এই সময়ের মধ্যে হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং যুদ্ধ বন্ধে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে।
তবে হামাসের যুদ্ধবিরতির দাবি প্রত্যাখ্যান করে নেতানিয়াহু গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে বলেছন, কয়েক মাসের মধ্যেই বিজয় আসন্ন।
তিনি বলেন, আলোচনায় কিছু হচ্ছে না। তাদের শর্তগুলো উদ্ভট। সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া অন্য সমাধানই নেই। হামাস যদি গাজায় টিকে থাকে, গণহত্যা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এদিকে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, নেতানিয়াহুর মন্তব্য রাজনৈতিক সাহসিকতার একটি রূপ। এর মাধ্যমে বোঝা যায় তিনি এই অঞ্চলে সংঘাত চালিয়েই যেতে চান।
রাফাহ শহরে নতুন করে অভিযান পরিচালনা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছেন বিশ্বনেতারা,
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত বুধবার নেতানিয়াহুকে ফোন করে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। রাফাহতে ইসরায়েলি আক্রমণ শুধুমাত্র গাজাকে নতুন মাত্রার মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। এছাড়াও তিনি রাফাহতে ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের দৃঢ় বিরোধিতার কথাও জানিয়ে দেন।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীরা একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, রাফাহতে নতুন সামরিক অভিযান বিপর্যয় ডেকে আনতে যাচ্ছে। আমরা ইসরায়েল সরকারকে এই পথে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, এই সম্প্রসারিত সামরিক অভিযান ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলবে।
এদিকে ইসরায়েল সফররত জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, রাফাহ অঞ্চলে অবস্থানরতদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তারা চাইলেই বাতাসে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে না।
এছাড়াও স্পেন এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড জানায়, বাণিজ্যের সাথে সংযুক্ত অধিকার বিষয়ক চুক্তির অধীনে ইসরায়েল গাজায় তার মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলছে কিনা তা অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে পরীক্ষা করতে হবে।