সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সদ্যগত আসরে একটি গোল করেছেন আলপি আক্তার। গোল একটি হলেও অবদান ছিল প্রতি ম্যাচেই। গ্রুপপর্বে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আলপির গোলের দিনে ফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ। পরের গল্পটা সবার জানা। শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরেছেন পঞ্চগড়ের মেয়ে। সাফল্য পেতে আলপির পথটা যদিও মসৃণ ছিল না। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
বুধবার চ্যানেল আই সংবর্ধনা দিয়েছে সাফজয়ী দলকে। বাফুফের বাসে চড়ে সকাল ১১টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এসেছিলেন শিরোপাজয়ী বীরকন্যারা, ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হয় আলপি-প্রীতিদের। পরে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় চ্যাম্পিয়ন স্ট্রাইকার আলপি আক্তারের।
বাবা-মা ও ভাই-ভাবী নিয়ে আলপির পরিবার। বাবা-মা খেলাধুলায় সায় না দিলেও ভাইয়ের থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন এ স্ট্রাইকার। পরিবার প্রসঙ্গে আলপি জানালেন, ‘আমার বাবার একটি চায়ের দোকান আছে। পঞ্চগড় জেলায় বোদা উপজেলায় আমাদের বাড়ি।’
‘প্রাইমারিতে ফুটবল খেলতাম। সেসময় বাবা-মা আমাকে ফুটবল খেলতে সাপোর্ট করলেও পরে সেটি তারা খুব বেশি পছন্দ করতেন না। পরে যখন ক্লাস সিক্সে উঠি, তারা আমাকে পড়াশোনার প্রতি একটু বেশি মনোযোগী হতে বললেন। তারা বলতেন আমাদের মতো পরিবার পড়াশোনার বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবো না। আমাদের মতো এমন পরিবারের পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধুলা কাজ চালিয়ে নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ টাকা পয়সার দিক থেকে দুটো একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার মতো সাপোর্ট পাবো না।’
‘আমার খেলা দেখে আমার কোচের অনেক ভালো লাগত। ওনার একটি একাডেমি আছে। উনি আমাকে সেখানে যেতে বললেন। আমাদের অনেক কিছুতেই কোনো খরচ করতে দিতেন না। অনেক সময় বুট, জার্সি, প্যান্ট সবকিছুই ওনার টাকাতেই দিতেন। এমনকি তিনি আমাদের পরিবারকে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করতেন।’
নিজ উপজেলার ফুটবল একাডেমির কোচ মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের হাত ধরে আজকের আলপি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দলের স্ট্রাইকার। যার মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন সেই একাডেমির ফুটবলার।
‘কোচ বলতেন তোমরা ভালো করে অনুশীলন চালিয়ে যাও, ভালো জায়গায় পৌঁছে দেয়ার বাকি দায়িত্বটা আমার। গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ আমাদেরকে কোচ দিতেন। এমনকি আমাদের বাড়িতেও অনেক সময় বাজার সদাই করে সহযোগিতা করে দিতেন। ঈদের সময় অনেক সময় চাল-ডাল কিনে দিতেন। ঈদের সালামি দিতেন। শুধু আমাকেই না, আমাদের একাডেমির প্রায় সবাইকেই তিনি এসব দিতেন।’
‘কিন্তু তখনো বাবা-মা আমাকে বাধা দিতেন, আমার ভাই আমার পাশে ছিলেন। তিনি বলতেন তোর স্বপ্ন তোকে পূরণ করতে হবে। যেহেতু কোচ এত সাপোর্ট করে সেহেতু ভাইয়াও বিষয়টিকে ভালোভাবেই নিয়েছিলেন। সেসময় থেকে আমার ভাই আমাকে অনেকবেশি সাপোর্ট করতেন। তবে বাবা আর মা ওই সময়ও চাইতেন আমি পড়ালেখার প্রতি একটু বেশি মনোযোগী হই।’